• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট: বুঝে নাকি না-বুঝে দেবে

ভিওডি বাংলা ডেস্ক    ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২১ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ১৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ প্রায় ৬১ শতাংশ। এর মধ্যে যারা সাক্ষর ভোটার, তারা হ্যাঁ-না ভোট দিতে পারলেও বিষয়গুলো বুঝতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে রাজনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, প্রশ্নের যে নমুনা এবং যা করণীয়, সেটা চৌকস ভোটারদেরও হিমশিম খেতে হবে, আর নিরক্ষর ভোটাররা কী করবেন, সে-তো বুঝাই যায়। আরেক অংশ বলছেন, দলগুলো ঠিকঠাক ক্যাম্পেইন করলে মানুষ বুঝে নিতে পারবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কঠিন হবে কিন্তু সম্ভব।

বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিক্সের (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৫ বছরের এবং তার বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে সাক্ষরতার হার প্রায় ৬০.৭৭ শতাংশ। অর্থাৎ আনুমানিক ৩৯.২৩ শতাংশ মানুষ সাক্ষর নয়। সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৩৮৪। এই বিশাল সংখ্যক ভোটারের মধ্যে নিরক্ষর ভোটারের সংখ্যা অনেক।

এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করা হবে। চারটি বিষয় পাঠ করে একটি হ্যাঁ বা না ভোট দেবেন ভোটাররা।

সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি যে চারটি বিষয়ের ওপর গণভোট হবে, সেগুলোও পাঠ করেন প্রধান উপদেষ্টা। কিন্তু তারপর থেকে একটি প্রশ্ন বড় করে দেখা দিয়েছে—কত সংখ্যক ভোটার আসলে পড়তে জানেন? যারা পড়তে জানেন না তারা এই বিষয়ে কীভাবে ভোট দেবেন? বা যারা পড়তেও জানেন, তারা এই চারটি বিষয় বুঝতে সক্ষম কিনা।

তবে এই বুঝতে পারা না পারার বিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ বলছেন, যে দেশের মানুষ ৬৯ সালে ১১ দফা বুঝতে পেরেছে, জিয়াউর রহমানের ১৯ দফার ওপরে গণভোটে অংশ নিয়েছেন, সে দেশে চারটি বিষয় বুঝে নিতে পারবে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “ছয় দফা” দাবির মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলা হয়। এরপর ১৯৬৮-১৯৬৯ সালের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততা গড়ে ওঠে। ১৯৬৯ সালের প্রথম দিকে, শিক্ষার্থীরা একটি “১১ দফা” দাবিপত্র উপস্থাপন করে আন্দোলন তীব্র করেন।

দফা বুঝে আন্দোলন, আর ভোট দেওয়া এক বিষয় কিনা প্রশ্নে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক বলেন, ‘‘অত্যন্ত চৌকস কারোর পক্ষেও এটা পড়ে বুঝে ভোট দেওয়া সহজ হবে না।’’

বাংলাদেশের নাগরিকরা গণভোটের জন্য কতটা প্রস্তুত সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, ‘‘এই হ্যাঁ ও না ভোটের বিষয়বস্তুগুলো, এ নিয়ে কতটুকু মাত্রায় নাগরিকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। কনসেপচুয়ালি যে চারটা বিষয়ের ওপর তারা হ্যাঁ বা না ভোটের আলাপটা তুলছেন, সেক্ষেত্রে দেখার বিষয়—বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে এগুলো কতটুকু পৌঁছেছে।  কিংবা যে বিশাল অংশের মানুষ আসলে হ্যাঁ আর না-এর বাইরেও যে বড় আলাপ-আলোচনা আছে, সে বিষয়গুলো বুঝতে পারবেন না, তাদের কী হবে। সেক্ষেত্রে এটাও একটা প্রশ্ন যে, গণভোটের জন্য বাংলাদেশের মানুষ কতটা প্রস্তুত। তাদের প্রস্তুত করার জন্য যথেষ্ট সময় এই অন্তর্বর্তী সরকার পাবে কিনা। কিছুটা বেআইনি ও কিছুটা অবৈধ অবস্থায় থেকে এই শিক্ষণীয় কার্যক্রম করা যায় কিনা, সেটা নিয়েও একটা বড় প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।’’

যদিও গণভোট কঠিন হলেও সম্ভব বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘দেড় বছর ধরে মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা অনেক বেড়েছে। তারা বিটিভিতে ঐকমত্য কমিশনের সভা নিয়মিত না হলেও দেখেছেন এবং এর কার্যক্রম ও আলোচনার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রচার-প্রচারণা হবে। সেসব বিবেচনায় নিলে বলা যায়—বুঝে ভোট দিতে পারবে না, সেটা বলা যায় না।’’

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে বলেন, ‘‘আমাদের দলগুলোকে ক্যাম্পেইন করতে হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় গণমাধ্যমে বিষয়গুলো প্রচার করা হবে। এর আগে জিয়াউর রহমানের আমলে তো ১৯ দফাতে গণভোট হয়েছে। ফলে এটা অসম্ভব হওয়ার কারণ নেই। সামনে আরও প্রচার হবে। যে মানুষ পড়তে পারে না, প্রচার-প্রচারণার মধ্য দিয়ে তারা বুঝে নেবে।’’

একইসঙ্গে দুই ভোটে সেই ক্যাম্পেইন ব্যাহত হবে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘এই জন্যেই আমরা বলছিলাম গণভোট নির্বাচনের আগে হলে ভালো হতো। এখন যেহেতু একসঙ্গে হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমাদের একসঙ্গে সৃজনশীল কায়দার প্রচারণা চালাতে হবে।’’

যে চার বিষয়ে একটি হ্যাঁ বা না উত্তর দিতে হবে, সেগুলো হলো—

ক. নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।

খ. আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।

গ. সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।

ঘ. জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।”

ভিওডি বাংলা/ এমএম

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
দিল্লি সফরে যাচ্ছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান
দিল্লি সফরে যাচ্ছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান
অর্থনৈতিক বিরোধ থেকেই ট্র্যাজেডি
অর্থনৈতিক বিরোধ থেকেই ট্র্যাজেডি
আরও ৯ জেলায় নতুন ডিসি
আরও ৯ জেলায় নতুন ডিসি