• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

আশরাফুল হত্যার নতুন মোড়: চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন র‌্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক    ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৯ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হক হত্যাকাণ্ডে নতুন মোড় নিয়েছে। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার জরেজের প্রেমিকার তথ্যমতে- পরকীয়া নয়, প্রেমের ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা থেকেই তাকে হত্যার ঘটনা ঘটে। এরপর মরদেহ ২৬ টুকরা করে দুটি ড্রামে ভরে হাইকোর্টের সামনে ফেলে আসেন তারা।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রেস ব্রিফিংয়ে এমনটাই জানিয়েছেন র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে দুটি নিল রঙের ড্রামে ২৬ টুকরা মরদেহ পাওয়া যায়। ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাহায্যে নিহত আশরাফুল হকের পরিচয় বের করে পুলিশ। তার বাড়ি রংপুরে। করতেন কাঁচামালের ব্যবসা। 
 
এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করে আশরাফুলের পরিবার। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) কুমিল্লার লাকসাম থেকে জরেজের প্রেমিকাকে গ্রেফতার করে র‍্যাব-৩। তার দেয়া তথ্যে হত্যাকাণ্ডের আলামত উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শামীমার কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পায় র‌্যাব।
 
র‌্যাব জানায়, জরেজের সঙ্গে অভিযুক্ত নারীর এক বছরের অধিক সময় ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জরেজ তাকে জানান, তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যাবে। যা থেকে জরেজ ৭ লাখ আর ওই নারী ৩ লক্ষ টাকা নেবেন।
 
পরিকল্পনা অনুযায়ী জরেজের প্রেমিকা আশরাফুলের সঙ্গে একমাস আগে থেকেই মোবাইল ফোনে যোগাযোগ শুরু করে তার প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। মোবাইল ফোনে তাদের নিয়মিত কথা চলতে থাকে। গত ১১ নভেম্বর রাত ৮টায় জরেজ আশরাফুলকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরদিন ১২ নভেম্বর ওই নারীকে নিয়ে ঢাকার শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় নেয়া ভাড়া বাসায় ওঠেন তিনজন।
 
আশরাফুলকে মালটার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হালকা অচেতন করেন ওই নারী। পরে তাদের দুজনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেন জরেজ। দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ রশি দিয়ে তাকে বেঁধে ফেলেন এবং মুখ কসটেপ দিয়ে আটকে দেন। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় জরেজ উত্তেজিত হয়ে আশরাফুলকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। অতিরিক্ত আঘাত এবং মুখ কসটেপ দিয়ে আটকানো থাকায় শ্বাস না নিতে পেরে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
 
আশরাফুলের মরদেহ একই ঘরে রেখে জরেজ ও তার প্রেমিকা রাত্রিযাপন করেন এবং শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। আশরাফুলের মরদেহ গুম করার উদ্দেশে ১৩ নভেম্বর (শুক্রবার) সকালে জরেজ বাজার থেকে চাপাতি ও ড্রাম কিনে আনেন। চাপাতি দিয়ে মরদেহ ২৬ টুকরা করে দুটি নীল রঙেরর ড্রামে ভরে রাখেন। দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে ড্রাম দুটি নিয়ে দুপুর ২টা ৫২ মিনিটে বাসা থেকে বের হন। পথে অটোরিকশাও পরিবর্তন করেন তারা।
 
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখে বিকেল ৩টা ১৩ মিনিটে ড্রাম দুটি হাইকোর্টের পানির পাম্প সংলগ্ন প্রধান সড়কের পাশে একটি বড় গাছের নিচে ফেলে দ্রুত সটকে পড়েন তারা। পরে জরেজের প্রেমিকা কুমিল্লায় তার নিজ বাড়িতে চলে যান।
 
গ্রেফতারের পর ওই নারীর দেয়া তথ্য মতে, আশরাফুলের রক্তমাখা সাদা রঙের পায়জামা-পাঞ্জাবিসহ হত্যার কাজে ব্যবহৃত দড়ি, কসটেপ, একটি গোলগলা গেঞ্জি এবং একটি হাফ প্যান্ট বস্তার ভেতর মুখবাধা অবস্থায় শনির আখড়ার নূরপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
 
র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন জানান, গ্রেফতার নারীকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তার দেয়া তথ্যে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা উপার্জন করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। তবে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে পূর্বশত্রুতা রয়েছে কি না তা মূল আসামি জরেজকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে।
 
এদিকে শুক্রবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন আশরাফুল হত্যার প্রধান আসামি জরেজ। তার দেয়া তথ্যে পুলিশ জানায়, নিহত আশরাফুল ও মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজুলের বাড়ি রংপুরে। তারা দুজনে বন্ধু। আর ওই নারীর স্বামী থাকেন সৌদি আরবে। সামাজিক যোগাযোগমাধমে পরিচয় থেকে তার সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন জরেজুল।
 
দেশে ফিরে ঢাকায় দেখা করেন তারা। গড়ে ওঠে শারীরিক সম্পর্কও। জরেজুলের গ্রামের বন্ধু আশরাফুল হক ঢাকায় এলে প্রেমিকার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। জরেজুল মালয়েশিয়া ফিরে গেলে এবার ওই নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন আশরাফুল।
 
আবারও দেশে ফিরে জরেজুল বাসা ভাড়া নিয়ে ওঠেন রাজধানীর শনির আখড়ায়।  এ খবরে আশরাফুলও আসেন ওই বাসায়। এবার আশরাফুল জরেজুলকে জানিয়ে দেন তাদের সম্পর্কের কথা। এতে রেগে গিয়ে বাসা ছেড়ে চলে যান জরেজুল। রাগের মাথায় আশরাফুলের ফোন নিয়ে চলে যান তিনি। রাগ থামলে বুঝতে পারেন ভুল ফোন নিয়ে এসেছেন।
 
আবার বাসায় ফিরে যান জরেজুল। আশরাফুল ও প্রেমিকাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান তিনি। ক্ষিপ্ত হয়ে হাতুড়ি দিয়ে আশরাফুলের মাথায় আঘাত করেন জরেজুল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি লুটিয়ে পড়েন। এরপর বালিশ চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় তার।
 
হত্যায় সাহায্য করেন ওই নারীও। ২৪ ঘণ্টা মরদেহ নিয়ে বসে থাকেন দুজন। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না তারা। পরে পরিকল্পনা করেন টুকরা করার। মরদেহ ২৬ টুকরা করে দুটি ড্রামে ভরেন তারা। ঢাকায় নতুন হওয়ায় কোথায় ফেলবেন ড্রাম বুঝতে পারছিলেন না। সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে হাইকোর্টের সামনে জায়গা ফাঁকা দেখে ওখানেই ড্রাম দুটি ফেলে পালিয়ে যান দুজন।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
 

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
আ’লীগের কার্যালয় পাবলিক টয়লেট হিসেবে ব্যবহার হবে: হাদি
আ’লীগের কার্যালয় পাবলিক টয়লেট হিসেবে ব্যবহার হবে: হাদি
১৪০০ বার হাসিনার ফাঁসির দাবি ‘জনজোট বিপ্লবী মঞ্চের
১৪০০ বার হাসিনার ফাঁসির দাবি ‘জনজোট বিপ্লবী মঞ্চের
হঠাৎ ডিএমপির বিবৃতি, বিভ্রান্তিকর ভিডিও সম্পর্কে সতর্কতা
হঠাৎ ডিএমপির বিবৃতি, বিভ্রান্তিকর ভিডিও সম্পর্কে সতর্কতা