‘দেলুপি’-জুলাই জাগরণের চেতনা সমৃদ্ধ ছবি

ছত্রিশ জুলাই (০৫ আগস্ট, ২০২৫) এ বাংলাদেশের বাঁকবদলের পর দিনবদলের স্বাক্ষী হওয়া এক ছবি ‘দেলুপি’। আপামর ছাত্র জনতা যে বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিল তেমন স্বপ্ন দেখানো এক ছবি ‘দেলুপি’। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এক দলের পলায়ন আর অন্য দলের জেঁকে বসা নেতাদের মাঝে পিষ্ঠ হওয়া সাধারণ জনগণের বেদনার এক ছবিও ‘দেলুপি’। রাজনৈতিক বাস্তবতাকে ব্যঙ্গ করা স্যাটায়ারধর্মী এক ছবি ‘দেলুপি’।
ওটিটি প্লাটফর্মের জন্য তৈরি শাটিকাপ (২০২২) ও সিনপাট (২০২৪) এর পর পরিচালক তাওকীর ইসলাম (শাইক) এর বড় পর্দার প্রথম ছবি ‘দেলুপি’। ‘আজকের সন্ধ্যায় গোধুলি লগ্নে/নুপুরের বিয়ে হবে পার্থর সঙ্গে’-এই শ্লোগানের ভিন্নধর্মী প্রেম ও যাত্রা শিল্পীদের জীবন ঘনিষ্ঠ এক ছবিও ‘দেলুপি’।
যাত্রার মহড়া দিয়ে শুরু হয় ছবি। এর মাঝেই টেলিফোন আসে। যাত্রাপালার অন্যতম অভিনেতা প্রশান্ত জানতে পারেন রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে! কী হবে এখন? যাত্রার যে বায়না করেছিল সেই নেতা যার নাম তপন সে ও তার স্ত্রী পালিয়ে গেছেন। এদিকে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়া বিরোধী দলের নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বেরিয়ে আসেন জঙ্গল থেকে। তপনের রেখে যাওয়া সবকিছু তিনি দখলে নিতে শুরু করেন। এরই মাঝে বাঁধ ভেঙ্গে গ্রাম চলে যায় পানির নীচে। অবর্ননীয় কষ্ট মানুষের। মাটি আর বালু দিয়ে বানানো বাঁধ ভেঙ্গে পড়ে, সেটা নিয়ে শুরু হয় রাজনীতি। গ্রামের ‘জেনজি’রা রুখে দাঁড়ায়। গ্রামের মানুষের স্বপ্নের সমান হয়ে দাঁড়ায় বাঁধ তৈরি। পুরো গ্রাম কী ভাবে এক হয়ে দাঁড়াতে পারে সেই একাত্মতার এক ছবি ‘দেলুপি’।
এই ছবির উজ্জ্বলতা বাড়িয়েছে অভিনেতা অভিনেত্রীদের অভিনয়। প্রত্যেকে নিজ চরিত্রের সাথে দুর্দান্ত ভাবে মিশে গিয়েছিলেন। তবু যাত্রার অভিনেতা প্রশান্ত ও তার স্ত্রী আলপনা,রাজনৈতিক নেতা জাকির হোসেন, পার্থ আর নুপুরের চরিত্রে চিরনজীৎ বিশ^াস এবং অদিতি রায়,মিহিরের চরিত্রে রুদ্র রায়, নায়ক মান্নাকে অনুসরন করা পলাশ চরিত্রে পলাশ কুমার এবং সমর বৈরাগী খুবই ভালো অভিনয় করেছেন। এই ছবিতে মূলতঃ দুটি গান ব্যবহৃত হয়েছে। পূজার গানটা ভারতের এসডিএফ কোম্পানির কাছ থেকে নেয়া যা এই ছবিতে পূজামন্ডপের আবহ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে। আরেকটি গান গেয়েছেন এই ছবির অভিনেত্রী আলপরা নিজে। ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তপেশ চক্রবর্তী।
এই ছবির আরেক ভালো দিক এর ফটোগ্রাফি এবং পরিচালনার মুন্সীয়ানা। পুরো ছবিতে পানিবন্দী মানুষের জীবন সংগ্রাম,নাভিশ্বাস,প্রেম পরকীয়া এবং যাত্রা শিল্পীদের জীবন সংগ্রাম যেন বিষন্ন ক্যামেরা দিয়েই তুলে ধরা হয়েছে। ফটোগ্রাফিতেও সেটা স্পষ্ট। বটিয়াঘাটার যে দেলুটি গ্রামে এই ছবির শুটিং হয়েছে পানিবন্দী আর বাঁধভাঙ্গা সেই গ্রামটার সার্বিক চিত্র ঊঠে এসেছে। তাওকীর ইসলাম জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার এই বিষন্ন কিন্তু সংগ্রামমুখর এক জনপদের গল্প বলেছেন দেলুপি ছবিতে। পরিচালনার পাশাপাশি ক্যামেরাও চালিয়েছেন তিনি। যে গ্রামে শুটিং হয়েছে তার নাম দেলুটি। ছবির নাম দেলুপি! যাত্র্রার অভিনেতার কাছে টেলিফোন আসে যে প্রধানমন্ত্রী পালিয়েছেন। ছবিতে প্রধানমন্ত্রীর নাম সাবিনা! আবার চেয়ারম্যান তপনের রুম থেকে সাবিনার ছবি লুকিয়ে লুকিয়ে খুলে ফেলা এবং সেই ছবিকে মাটিচাপা দেয়ার ঘটনা অভিনব। অফিস যেন না পোড়ানো হয় এই চিন্তা ধেকে যেমন ছবি নামানো তেমনি প্রধানমন্ত্রীর বাবার ছবিটা দেয়ালে রেখে দেয়াটাও নজর কাড়ে! ‘জেনজি’দের নেতার চরিত্রে রূপ দিয়েছেন যিনি, মানুষের জন্য কাজটাই আসল নেতৃত্ব না-তার এই মনোবৃত্তিই হয়তো ছিল জুলাই জাগরনের মূলমন্ত্র।
দেলুপি ছবির জন্য তাওকীর ইসলামকে বিশেষ ধন্যবাদ জানানো যেতে পারে। খন্যবাদ জানানো যেতে পারে এই ছবির সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে।
জয় হোক বাংলা ছবির।
ভিওডি বাংলা/ এমএম







