• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

বিএনপির প্রার্থী তালিকায় ৮৫ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত

নিজস্ব প্রতিবেদক    ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৭ এ.এম.
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি তাদের প্রার্থী তালিকায় নতুন বৈচিত্র্য ও উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীদের প্রাধান্য দিয়ে নজর কেড়েছে। দলটির ঘোষিত সম্ভাব্য একক প্রার্থীর মধ্যে ৮৫ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত।

এই তালিকায় রয়েছেন পিএইচডি ধারী প্রার্থী, ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার, এমনকি বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা শিক্ষিত ব্যক্তিরাও। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, দুজন প্রার্থী পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আইভি লিগ অন্তর্ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন প্রার্থীদের প্রায় ১৪ শতাংশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা এর অধিভুক্ত কলেজ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন প্রার্থীদের সংখ্যা ৪০ শতাংশ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ফ্যাসিবাদ পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশাকে সম্মান জানিয়ে বিএনপি উচ্চশিক্ষিতদের প্রাধান্য দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে বিবেচনা করে উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষা নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং জনগণের সেবার কমিটমেন্টও প্রয়োজন। কারণ রাজনীতির মূল লক্ষ্য হলো জনগণের মঙ্গল এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন।

উচ্চশিক্ষা সাধারণত তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়-স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি। বাংলাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রদত্ত বিএ, বিএসসি, বিএসএস, বিবিএ ইত্যাদি ডিগ্রিকে স্নাতক সমমানের বলা হয়। এছাড়া আলিয়া মাদ্রাসার ফাজিল ডিগ্রিকেও স্নাতক সমমানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বিএনপি ২৩৭টি আসনের জন্য প্রাথমিক একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে একটি আসনের প্রার্থিতা স্থগিত রয়েছে। ২৩৬ প্রার্থীর মধ্যে ২২৩ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিশ্চিত করা গেছে।

প্রার্থী তালিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২২৩ প্রার্থীর মধ্যে ৮৭ জন স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। স্নাতক সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ আইন বিষয়ে শিক্ষিত, ১৬ শতাংশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে, এবং ১৮ শতাংশ ব্যবসায় শিক্ষা সম্পন্ন। শুধুমাত্র স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষিতদের মধ্যে অন্তত ৮ জন বিদেশে পড়াশোনা করেছেন।

বিদেশে আইন শিক্ষিত প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন মাহবুব উদ্দিন খোকন (ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি), কায়সার কামাল (উলভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি), ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী (উলভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি) এবং ফারজানা শারমিন পুতুল। তারা যথাক্রমে জুলাই আন্দোলন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী এবং স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয়।

পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রার্থীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (ইমপেরিয়াল কলেজ, যুক্তরাজ্য থেকে পিএইচডি) এবং ড. আব্দুল মঈন খান (সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য থেকে পিএইচডি)। প্রার্থীদের মধ্যে ১১ জন ডাক্তার রয়েছেন, যার মধ্যে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন (ইউরোলজিস্ট), ডা. এমএ মুহিত (জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ), ডা. সানসিলা জেবরিন এবং অন্যান্য চিকিৎসকরা রয়েছেন।

ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে রয়েছেন মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী (ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এব উপদেষ্টা), জাকির হোসেন সরকার (বুয়েট সিভিল ইঞ্জিনিয়ার), খালেদ হোসেন মাহবুব (বুয়েট গ্র্যাজুয়েটস ক্লাব সভাপতি) এবং রুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাশ করা আশরাফ উদ্দিন বকুল। বিদেশে প্রকৌশল বিদ্যায় শিক্ষিত প্রার্থীরা হলেন শামা ওবায়েদ, ইশরাক হোসেন, মাইনুল ইসলাম খান এবং ফাহিম চৌধুরী।

আইভি লিগ অ্যালামনাই প্রার্থী দু’জন-ড. ওসমান ফারুক ও ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। ড. ওসমান ফারুক পিএইচডি করেছেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে এবং তিনি বিশ্বব্যাংকের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। নওশাদ জমির এমএসসি করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর আরোপ সংক্রান্ত বিষয়ে এবং আইভি লিগের হার্ভার্ড ল স্কুল থেকে এলএলএম সম্পন্ন। তারা যথাক্রমে কিশোরগঞ্জ-৩ ও পঞ্চগড়-১ আসনে লড়বেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা এর অধিভুক্ত কলেজ থেকে শিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যা ৪০ শতাংশ। স্নাতকোত্তর বা সমমানের ডিগ্রি সম্পন্ন প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমদ, সালাহউদ্দিন আহমদ, ছাত্রদলের নেতা ও সাবেক মন্ত্রীরা। এছাড়া শেখ হাসিনা সরকারের সময় গুম হওয়া এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

সার্বিকভাবে দেখা যায়, বিএনপির প্রার্থী তালিকায় শিক্ষাগত যোগ্যতা, বৈচিত্র্য ও বিদেশে শিক্ষিত প্রার্থীর উপস্থিতি দলটির মনোনয়ন নীতিতে প্রতিফলিত হয়েছে। দলটি শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষিত প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি, বরং জনগণের কল্যাণে নিবেদিত ও দায়িত্ববান প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও সমাজ গঠনে অবদান রাখবে। এই প্রার্থীরা যদি জনগণের সেবায় মনোনিবেশ করেন, তাহলে বিএনপির এই প্রার্থী তালিকা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ভিওডি বাংলা/জা

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ম্যান্ডেট অস্বীকারকারীদের জনগণই প্রত্যাখ্যান করবে: আখতার
ম্যান্ডেট অস্বীকারকারীদের জনগণই প্রত্যাখ্যান করবে: আখতার
মানুষ সহজে আপনাদের ভোট দেবে না: ফখরুল
মানুষ সহজে আপনাদের ভোট দেবে না: ফখরুল
১৩৩ আসনে প্রাথমিক প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করলো গণফোরাম
১৩৩ আসনে প্রাথমিক প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করলো গণফোরাম