• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

জুলাই গণহত্যা:

শেখ হাসিনার রায় সরাসরি দেখবে গোটা বিশ্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক    ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৩ পি.এম.
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ছবি সংগৃহীত

চব্বিশের জুলাই গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হবে আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর)।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় সরাসরি সম্প্রচার করবে, যাতে গোটা বিশ্ব এবং দেশের মানুষ বিচার প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করতে পারে। একইসঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বড় পর্দায় এই বিচারকাজ দেখানো হবে।

রোববার (১৬ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের রায় ঘোষণার অপেক্ষায় গোটা জাতি আছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশও এই রায়ের দিকে তাকিয়ে থাকবে। সূত্র জানায়, এই রায় আগামীর জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্যানেল সোমবার রায় ঘোষণা করবেন। অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম ও ফারুক আহাম্মদ।

গত ২৩ অক্টোবর এই মামলায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও হেভিওয়েট নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারকাজের উদাহরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন। পরে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম তাদের বক্তব্যের কিছু বিষয়ে জবাব দেন। এরপর স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন তার পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন।

এই মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রসিকিউশন তার বিরুদ্ধে চরম দণ্ড দাবি না করে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। মামুনের আইনজীবী খালাসের আবেদন করেছেন। রায় ঘোষণার দিন জানা যাবে, সাবেক আইজিপি খালাস পাবেন নাকি অন্য কোনো ফলাফল হবে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই মামলায় মোট ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ ২০২৫ সালের ৩ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে ৮ অক্টোবর শেষ হয়। প্রথম সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বীভৎসতার চিত্র তুলে ধরেন খোকন চন্দ্র বর্মণ। মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের মাধ্যমে শেষ হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। এরপর প্রসিকিউশন ও ডিফেন্স উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক ২৩ অক্টোবর শেষ হয়।

মামলার প্রসিকিউশন মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনেছে। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্র ২,০১৮ পৃষ্ঠা, জব্দকৃত ও দালিলিক প্রমাণ ৪,০০৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা ২,৭২৪ পৃষ্ঠা।

গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা মামলার প্রতিবেদন জমা দেয়। রায়ের ফলে জুলাই গণহত্যার প্রথম কোনো রায় শুনবে জাতি। রায়ের সঙ্গে দেশের মানুষসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সরাসরি যুক্ত থাকবেন। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বড় পর্দায় এ বিচারকাজ দেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই বিচারকাজ প্রত্যক্ষ করতে পারে।

শুধু তাই নয়, এই রায় আন্তর্জাতিক আদালত ও মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ এটি মানবতাবিরোধী অপরাধে রাজনৈতিক নেতাদের দায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ট্রাইব্যুনাল জোরদারভাবে বলতে চাচ্ছে, যে কোনো অপরাধীর বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।

সারসংক্ষেপে বলা যায়, ১৭ নভেম্বরের রায় শুধু দেশের ইতিহাসে নয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে থাকবে। গোটা বিশ্বের নজর থাকবে ঢাকা, যেখানে এই রায় সরাসরি সম্প্রচারিত হবে এবং জনগণ বড় পর্দায় বিচার প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করবে।

ভিওডি বাংলা/জা

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
শেখ হাসিনার মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের সর্বোচ্চ সাজার দাবি
শেখ হাসিনার মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের সর্বোচ্চ সাজার দাবি
মানবতাবিরোধী মামলায় শেখ হাসিনার রায় ১৭ নভেম্বর
মানবতাবিরোধী মামলায় শেখ হাসিনার রায় ১৭ নভেম্বর
আবু সাঈদ হত্যা: ট্রাইব্যুনালে পুলিশ সদস্যের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
আবু সাঈদ হত্যা: ট্রাইব্যুনালে পুলিশ সদস্যের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু