• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

রনাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ করেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি ৯৭ বছরের শাহজাহান

নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি    ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:১৭ পি.এম.
মোঃ শাহজাহান হাওলাদার। ছবি: ভিওডি বাংলা

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার বৈচন্ডী গ্রামের মোঃ শাহজাহান হাওলাদার এখন ৯৭ বছরের এক বৃদ্ধ মানুষ। সরকারি জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মতারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮ হলেও তার প্রকৃত জন্ম ১৯২৯ সালে। সেই হিসেবে বয়স এখন প্রায় এক শতাব্দীর কাছাকাছি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও স্মৃতিতে এখনো টগবগে রণাঙ্গনের গল্প।

১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র হাতে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আজও তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পাননি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এটাই তার একমাত্র আক্ষেপ।

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েই শুরু হয় তার জীবনের কঠিন অধ্যায়। ১৯৮৭ সালে পারিবারিক কলহে নিহত হন তার প্রথম স্ত্রী। সেই ঘটনায় বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের সব কাগজপত্র, সার্টিফিকেট ও দলিলাদি। এরপর থেকে বারবার বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও তিনি আর কোনো প্রমাণপত্র সংগ্রহ করতে পারেননি।

জীবনের শেষভাগে এসে তিনি দাবি করছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গনে তার অংশগ্রহণের সত্যতা আজও তিনি স্পষ্টভাবে বলতে পারেন। কে কোথায় যুদ্ধ করেছে, কেমন পরিস্থিতি ছিল, সবকিছু এখনো তার স্মৃতিতে স্পষ্ট। তার শরীরে বয়সের ভার পড়লেও কণ্ঠে ও মনোবলে এখনো একজন মুক্তিযোদ্ধার দৃঢ়তা।

তিনি জানান, গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বর্তমান ঝালকাঠির জেলা কমান্ডারের সহযোগিতায় কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য ঢাকা গিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তিনি হয়রানির শিকার হন এবং এরপর থেকে প্রচেষ্টা আর চালাননি।

তার বড় ছেলে মোঃ শহীদ হাওলাদার জানান, তাদের পরিবারে সবাই জানে শাহজাহান হাওলাদার মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি নিজেও ১৯৭১ সালে জন্মেছেন, ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছেন পিতার যুদ্ধের গল্প। কিন্তু ১৯৮৭ সালের অগ্নিকাণ্ডে সব দলিল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন আর কোনো প্রমাণ নেই। তবে তার সকল সহকর্মীরা আজও বলেন তোমার 

শাহজাহান হাওলাদার জীবনের এই ক্রান্তিকালে এসে রাষ্ট্রের কাছে একটাই চাওয়া জানিয়েছেন — মৃত্যুর আগে যেন তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পান।

বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও তার কথাবার্তায় আজও স্পষ্ট দেশপ্রেম ও সাহসের প্রতিচ্ছবি। এক সময় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বর্তমানে তার দ্বিতীয় স্ত্রী জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তাকে আগলে রেখেছেন।

একজন মুক্তিযোদ্ধার দীর্ঘ জীবনের কষ্ট, আক্ষেপ ও স্বপ্নের গল্প আজও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অপেক্ষায়। মৃত্যুর প্রহর গোনা এই বৃদ্ধ যোদ্ধা আশা করছেন, তার জীবনাবসানের আগেই দেশ তাকে চিনবে একজন স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে।

এবিষয়ে নলছিটি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ বাকে আলী কাজী বলেন, তিনি আমার আমার সাথে একত্রে রনাঙ্গনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন কিন্তু তার কাগজপত্র যে-কোন কারনে হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনেছি। এরপর সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দফতরে দৌড়ঝাপ করেছে কিন্তু তালিকাভুক্ত হতে পারেনি।  

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ


  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নবাবগঞ্জে ১৮০০ টি জমির দলিল পোড়ালো সাব রেজিস্ট্রার
নবাবগঞ্জে ১৮০০ টি জমির দলিল পোড়ালো সাব রেজিস্ট্রার
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গাছ ফেলে লকডাউন কর্মসূচি পালন
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গাছ ফেলে লকডাউন কর্মসূচি পালন
গাজীপুরে গ্রামীণ ব্যাংকে দুর্বৃত্তদের বোমা নিক্ষেপ
গাজীপুরে গ্রামীণ ব্যাংকে দুর্বৃত্তদের বোমা নিক্ষেপ