• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শীতের সবজির বাজারে বেপরোয়া দাম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি    ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৩ পি.এম.
ছবি: ভিওডি বাংলা

শীতের আগমনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ভোরের বাতাসে নেমে এসেছে হালকা কুয়াশা। তবে শীতের প্রথম স্পর্শের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে দেখা দিয়েছে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। শীতের সবজি বাজারে এলেও দাম যেন দম নিতে দিচ্ছে না সাধারণ মানুষকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে—১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই, বরং প্রতিদিনই ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা হচ্ছে আরও বেশি।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর)  সরজমিনে বাজার ঘুরে যা দেখা যায় শহরের কাউতলী, মেড্ডা, মৌরাইল ও কালিবাড়ি মোড় ভাসমান  বাজারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও তাদের মুখে হতাশা স্পষ্ট। সবজির স্টলে দাঁড়িয়ে একজন কিনছেন, আরেকজন দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন।নতুন আলু কেজি ২০০ টাকা,সিম ১২০ টাকা,টমেটো ১২০ টাকা, বেগুন ১০০ টাকা,ফুলকপি জোড়া ১০০ টাকা, অন্যান্য শীতকালীন সবজি ১০০ টাকার নিচে নেই।
অনেকেই অভিযোগ করছেন, গত বছর একই সময়ে এসব সবজির দাম ছিল অর্ধেকেরও কম।

আয় কম, ব্যয় বেশি—সবচেয়ে বিপাকে নিম্নআয়ের মানুষ,বাজারে উপস্থিত রিকশাচালক, শ্রমিক ও দিনমজুরদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, এদের কষ্টটাই সবচেয়ে বেশি। দৈনিক আয় ৪০০–৫০০ টাকার মধ্যে, সেই আয়ের অর্ধেকই চলে যাচ্ছে সবজি কেনায়।

রিকশাচালক আসাদ মিয়া ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, “শীত আসলে সবজির দাম কমবে, সবাই এটা জানে। এখন শীতের শুরুতেই সবজি আকাশছোঁয়া! ১০০ টাকা নিয়ে বাজারে এলে কিছুই কেনা যায় না। সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে।”ব্যবসায়ীদের বলছে দাম সাময়িক, কমে আসবে”যদিও বাজারে ক্রেতাদের অসন্তুষ্টি বেশি, ব্যবসায়ীরা বলছেন অন্য কথা। তাদের দাবি—নতুন সবজি বাজারে এলেও পাইকারি দামে এখনো স্থিতিশীলতা আসেনি। সেই কারণে খুচরা বাজারেও দাম কিছুটা বেশি।

কাউতলী বাজারের খুচরা বিক্রেতা  জানান, “নতুন সবজি বাজারে এসেছে ঠিকই, কিন্তু পাইকারিতে দাম বেশি। আমরা বেশি দামে কিনে কম দামে তো বিক্রি করতে পারব না। তবে কিছুদিনের মধ্যেই দাম কমতে শুরু করবে।”

অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, উৎপাদন কম ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দাম বাড়ছে। শীত পুরোপুরি নামলে এবং সবজি বাজারে ভরপুর এলে দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।বাজারে তদারকির অভাব, ভোক্তার ক্ষোভ,বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি তদারকি প্রায় নেই বললেই চলে। অনেক ক্রেতা অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করে দাম নির্ধারণ করছেন। কোনো মানদণ্ড নেই, নেই প্রশাসনের নজরদারিও।
ব্যবসায়িরাও স্বীকার করেন, বাজার মনিটরিং থাকলে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকত।

সবজির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নতুন আলুর দাম। যে আলুর দাম প্রতি কেজি ৪০–৫০ টাকা হওয়ার কথা, সেখানে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। এটি সাধারণ মানুষের হতাশাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

গৃহিণী শিউলি আক্তার বলেন,আলু তো সাধারণ খাবার। শীতের সময় নতুন আলু দিয়ে তরকারি করে সবাই খায়। কিন্তু এভাবে ২০০ টাকা কেজি হলে তো খাওয়া সম্ভব না।”

পাইকাররা দাবি করেন, নতুন আলুর সরবরাহ এখনো খুব কম। জমি থেকে তোলা নতুন আলু বাজারে খুব কম পরিমাণে আসে, তাই দাম বেশি।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে যেগুলো বলা হচ্ছে,শীত পুরোপুরি না নামায় উৎপাদন এখনো কম,পরিবহন ব্যয় ও শ্রমিক ভাড়া বৃদ্ধি,ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার অভাব,বাজার মনিটরিং না থাকা,পাইকারি দামের অস্থিরতা বাজার ঘুরে দেখা যায়, মানুষের প্রত্যাশা একটাই—দাম দ্রুত কমে আসুক। শীতের সবজি সাধারণ মানুষের খাবারের একটি সাশ্রয়ী উৎস। কিন্তু দাম এভাবে বাড়তে থাকলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের রান্নাঘরে সংকট আরও বাড়বে।

এ বিষয়ে সেলিম উদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, “শীত আসতে না আসতেই সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে। বাচ্চা-বুড়ো সবাই শীতের সবজি খেতে ভালোবাসে। কিন্তু দাম যদি  না কমে আমরা কীভাবে চালাবো ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীত পুরোপুরি নামলে এবং মাঠে উৎপাদন বাড়লে বাজারে সবজি সরবরাহও বাড়বে। তখন দাম কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। তবে এর আগে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে বলেই মনে করছেন অনেকে।

সবমিলিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবজির বাজার এখন সাধারণ মানুষের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শাকসবজি হাতে নিয়ে ফিরে যাওয়া মানুষগুলো যেন একটাই প্রশ্ন তুলছেন—“শীতের সবজি যদি ১০০ টাকার নিচেও না পাওয়া যায়, তবে স্বস্তি ফিরবে কবে?”

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

 


  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বিএনপি’র ৩১ দফা বাস্তবায়নে নবীনগরে বিশাল জনসমাবেশ
বিএনপি’র ৩১ দফা বাস্তবায়নে নবীনগরে বিশাল জনসমাবেশ
সিরাজগঞ্জে ডিবি হেফাজতে থাকা এক ব্যক্তির মৃত্যু
সিরাজগঞ্জে ডিবি হেফাজতে থাকা এক ব্যক্তির মৃত্যু
রাজশাহীতে বন্ধ ঘর থেকে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার
রাজশাহীতে বন্ধ ঘর থেকে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার