• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায়: প্রধান বিচারপতি

আদালত প্রতিবেদক    ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:০৩ পি.এম.
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ছবি-সংগৃহীত

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে শুধু প্রতিষ্ঠান হিসেবেই নয়, বরং গোটা রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রই ব্যর্থ হয়ে যায়। এর ফলে সংবিধান নির্বাক হয়ে পড়ে এবং সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস হয়।

শনিবার (২২ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে এই মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বিশ্বজুড়ে সংকট ও অস্থিরতার এই সময়ে বিচার বিভাগকে সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মধ্যদিয়ে যেতে হচ্ছে। বিচার বিভাগের সংস্কার কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যবর্ধন নয়–এটি রাষ্ট্রের ন্যায় এবং গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম।

জুলাই বিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সাড়া প্রদান–এই তিনটি গুণ জনসচেতনতার মূল সুরে পরিণত হয়েছিল। অনিশ্চয়তার সেই মাসগুলোতে বিচার বিভাগ ছিল একমাত্র পূর্ণ কার্যকর সাংবিধানিক অঙ্গ; ফলে তাকে একইসঙ্গে বিনয়ী ও দৃঢ় অবস্থান নিতে হয়েছিল।

সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর–সংস্কার রোডম্যাপের জন্ম, যা ছিল একটি জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে কাঠামো দেয়ার প্রয়াস এবং সাংবিধানিক স্বাভাবিকত্বে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্য।

তিনি জানান, গত কয়েক মাসে অভূতপূর্ব বিচারিক রোডশোর মাধ্যমে এই রোডম্যাপ দেশজুড়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এতে বিচার বিভাগ তার প্রাতিষ্ঠানিক নিয়তির অভিভাবকত্ব পুনরুদ্ধারে সংকল্পবদ্ধ এবং আইনজীবী সমাজ তাদের নাগরিক দায়িত্ব নতুন করে উপলব্ধি করছে।

প্রধান বিচারপতি ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, সেই রায় বিচার বিভাগের সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করেছে এবং রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের একটিতে পরিণত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পেশাদার কাঠামোর ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে আমরা এই বিচারব্যবস্থাকে সক্রিয় করতে চেয়েছি–সার্ভিস কাঠামোয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, ক্যারিয়ার পথের স্বাভাবিকীকরণ এবং সুপ্রিম কোর্ট সেক্রেটারিয়েট অর্ডিন্যান্স প্রণয়নের ভিত্তি স্থাপনের মাধ্যমে। এগুলো শুধুই আমলাতান্ত্রিক পুনর্বিন্যাস নয়–এগুলো সাংবিধানিক পুনর্নির্মাণ।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘গত বছরের প্রতিটি রায় শুধু বিচারিক ঘোষণা নয়, এটি একটি বীজ, যা আমরা প্রতিষ্ঠানগত সংস্কারের উর্বর মাটিতে রোপণ করেছি। আশা করছি এটি ভবিষ্যতে দৃঢ়তর সাংবিধানিক সংস্কৃতিতে পরিণত হবে।’

তবে তিনি একটি গভীর গণতান্ত্রিক বাস্তবতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যখন আদালত বিদ্যমান সংবিধানকে রূপান্তরকালীন ন্যায়বিচারের নোঙর হিসেবে পুনর্ব্যক্ত করছে; তখন জনগণ–যাদের হাতে নিহিত মৌলিক ক্ষমতা–একসময় হয়তো সেই সংবিধানকেই পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, বিচার বিভাগকে এই সত্যকে হুমকি নয়, বরং এক গভীর গণতান্ত্রিক বাস্তবতা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

ভিওডি বাংলা/ এমএম

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সংবিধানে ফিরলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা
সংবিধানে ফিরলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা
রাজসাক্ষী আবজালুলের ট্রাইব্যুনালে ক্ষমাপ্রার্থনা
রাজসাক্ষী আবজালুলের ট্রাইব্যুনালে ক্ষমাপ্রার্থনা
যে কারণে রায়ের কপি মন্ত্রণালয়গুলোতে যাচ্ছে না আজ
যে কারণে রায়ের কপি মন্ত্রণালয়গুলোতে যাচ্ছে না আজ