মুক্তিযুদ্ধের সময় গর্ব করার মতো কি ভূমিকা ছিল আপনাদের : সালাম

বাংলাদেশ জামাতে ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম বলেছেন, বিএনপির একটি গৌরবময় অতীত আছে। আমার নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন—এটা বিএনপির জন্য বিশাল গর্বের বিষয়।অন্যদিকে কিছু দল আছে যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় কী ভূমিকা রেখেছিল তা গর্ব করে বলতে পারে না। তাদের সেই বুকের পাঁজর নেই—কারণ তখন তারা কলঙ্কজনক ভূমিকা রেখেছিল।
রোববার (২৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে এক আলোচনা সবাই তিনি এসব কথা বলেন।
সালাম বলেন,বিএনপির একটি গৌরবময় অতীত আছে। আমার নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন—এটা বিএনপির জন্য বিশাল গর্বের বিষয়।অন্যদিকে কিছু দল আছে যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় কী ভূমিকা রেখেছিল তা গর্ব করে বলতে পারে না। তাদের সেই বুকের পাঁজর নেই—কারণ তখন তারা কলঙ্কজনক ভূমিকা রেখেছিল।
আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। তাই বাংলাদেশের মানুষ অন্যায় কিছুদিন সহ্য করে, মিথ্যাও কিছুদিন শোনে—কিন্তু শেষ পর্যন্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে, মিথ্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ইতিহাসে বারবার এটা হয়েছে—৬৯-এ, ৭০-এ, ৭১-এ, ৭৫-এ, ৯০-এ এবং গত ২৪-এর আন্দোলনেও আমরা দেখেছি কীভাবে জনগণ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে।
আগস্টের ঘটনার আগে ২৮ অক্টোবর বিএনপি চেষ্টা করেছিল জনগণকে সাথে নিয়ে সরকারকে বোঝাতে—যেন এমন গণবিস্ফোরণের আগে তারা ক্ষমতা ছাড়ে। কিন্তু সেই সময়ে আমাদের ওপর নির্মম নির্যাতন হয়েছে—আপনারা দেখেছেন। আজকে ‘নবী’ কোথায়? ট্রেনে আগুন লাগানোর যে মামলা, ‘নবী-নবী’ করেই আমাদের নামে দেওয়া হয়েছে। এমন কোনো মামলা নেই যা আমাদের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়নি, এমন কোনো নির্যাতন নেই যা আমাদের ওপর চালানো হয়নি। কিন্তু আজ নবীরা এখানে বসে আছে—হাসিনা কোথায়? হাসিনা নেই। আজকে যে খালেদা জিয়াকে শেষ করতে চেয়েছিল, সেই খালেদা জিয়া আজ সম্মানের সাথে বাংলাদেশে আছেন—কিন্তু শেখ হাসিনা নেই।
তাই আমরা বলি—ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। কিন্তু ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। যদি শেখ হাসিনা শেখ ভাইয়ের ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত পতনের কারণটা বুঝতেন—তাহলে তার আজকের পরিণতি এমন হতো না। দেশেরও এই পরিণতি হতো না, আওয়ামী লীগেরও হতো না। জোর করে কেউ বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না।
স্বাধীনতার পরে আমরা অনেক কষ্ট করেছি। দেশটার স্বপ্ন ছিল—গণতন্ত্র, স্বাধীন গণমাধ্যম, যুবসমাজের সম্ভাবনা, শিক্ষার্থীদের অধিকার, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা। কিন্তু বারবার এসবের ওপর আঘাত এসেছে। তারপরও আমরা রুখে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো—কতবার? শুধু রুখে দাঁড়িয়েই তো সমাধান হবে না—এবার একটা স্থায়ী পরিবর্তন দরকার।
সত্যিকারের জনগণের শক্তি কোনটা, পরীক্ষিত রাজনীতি কোনটা—এটা বোঝা দরকার। ৭২ থেকে আজ পর্যন্ত কতগুলো দল দেশে আছে? কার ইতিহাস কেমন?
৭৫ সালের পর যখন জিয়াউর রহমান দায়িত্ব নিলেন, তখন দেশের অবস্থা ভয়াবহ ছিল—মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছিল। বিদেশে বাংলাদেশের চেহারা ছিল কঙ্কালসার মানুষ—শরীরে মাংস নেই। কিন্তু দুই বছরের মাথায় তিনি দেশের মানুষকে খাওয়ালেন, এমনকি চাল রপ্তানিও শুরু হলো। নারায়ণগঞ্জ, শ্যামপুরসহ দেশের অনেক মিল-কারখানা যা স্বাধীনতার পরে বন্ধ হয়ে গেছিল—জিয়া রহমান সেগুলো পুনরায় চালু করেন। তিনি জানতেন—মানুষকে কাজ দিলে সে নিজের জীবন নিজেই গড়ে নিতে পারবে। তাই শিল্প, কৃষি, শ্রম—সব খাতেই কর্মসংস্থান তৈরি করেছিলেন। গার্মেন্টস, পোল্ট্রি, খাল কাটা, বসতচাষ—সবই তার সময় বেড়ে ওঠে।
জিয়াউর রহমান যদি আরও ৮-১০ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারতেন—তাহলে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া–সিঙ্গাপুরের মতো এগিয়ে যেত। এই কারণেই তাকে হত্যা করা হয়।
পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন তাকেও জেলে নেওয়া হলো, হত্যার ষড়যন্ত্র করা হলো। তারেক রহমানকেও একইভাবে। কারণ একটাই যদি তারা ক্ষমতায় থাকে, দেশ এগিয়ে যাবে।
তারেক রহমান জানেন বেকারত্ব কীভাবে কমাতে হয়, কৃষকের ন্যায্যমূল্য কীভাবে নিশ্চিত করতে হয়। তিনি রেশনিং প্রণালীর কথা বলেছেন—চাল, ডাল, তেল, লবণ যেন ন্যায্যমূল্যে মানুষ পায়। তিনি পররাষ্ট্রনীতি, পানিসমস্যা, রোহিঙ্গা সংকট—সব বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা কেন নির্বাচন চাইতো না? কারণ তিনি নিজেই বলেছেন,‘তারেক রহমান এসে দেশ চালাবে আমি কেন নির্বাচন দেব।’ পরবর্তীতে ৫ আগস্টের পরে যখন অনেকে ভাবলো একটা সংস্কার সরকার এসে ৩-৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে—তখন দুই-একটা দল সোজাসুজি বললো—তারা নির্বাচন দেবে না, কারণ বিএনপি ক্ষমতায় চলে আসবে।
তারা চায় একটা দুর্বল সরকার ঝুলন্ত পার্লামেন্ট যাতে শক্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া না যায়। পানি, সীমান্ত, রোহিঙ্গা, টাকা পাচার ফিরিয়ে আনা—এসব বিষয়ে কঠিন অবস্থান নেওয়ার ক্ষমতা না থাকে।
এই নির্বাচনে তাই পরিষ্কার দেশ সামনে এগোবে, নাকি পিছিয়ে যাবে। আপনাদের এলাকায় নবী উল্লাহ নবী, মাসুদুজ্জামান মাসুদ—তারা ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের সংসদে পাঠাতে হবে—তা-ই হলে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশ এগোতে পারবে।
কিছু দল আজই মন্ত্রী-উপমন্ত্রী দাবি করছে—কারণ তারা জানে, তারা জিতবে না। তারা শুধু চায় দুর্বল একটা সরকার তৈরি হোক। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে।
নেতা তারেক রহমান বলেছেন, এই নির্বাচন খুব কঠিন। কিন্তু নির্বাচন-পরবর্তী সরকার পরিচালনা আরও কঠিন হবে—কারণ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। তাই বিএনপিকে absolute majority দিতে হবে—যত বেশি সম্ভব আসনে জয় নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপি কখনো আওয়ামী লীগ হবে না কারণ বিএনপির জন্মই আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা থেকে। আর আজ যারা ধমক-ধমকি দেয়, বলে ‘আমাদের কথায় ওসি–ডিসি চলবে’, ‘এটা না করলে ভোট হবে না’ মানুষ এসব দেখে ফেলেছে। স্বাধীনতার ইতিহাস কেউ ভুলে যায়নি।
ইনশাআল্লাহ, বিএনপি জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যাবে। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব—যেন বেশি সংখ্যক আসনে জয় নিশ্চিত হয়। আপনাদের নিজের এলাকায়, আপনাদের নিজের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইতে হবে।”
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা পাঁচ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নবীউল্লা নবী, নারায়ণগঞ্জ পাঁচ আসনের বিএনপি'র মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ সহ প্রমুখ।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ





