ধর্ম অবমাননা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে এনসিপির অবস্থান

সম্প্রতি এনসিপি ধর্ম ও সম্প্রীতি সেলের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এ উপলক্ষে আমরা নিচের বিষয়গুলো খুব স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, যাতে কোনো ভুল-বোঝাবুঝির সুযোগ না থাকে। মঙ্গলবার ২৫ নভেম্বর গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিবৃতি এমনটাই জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, বাউল আবুল সরকারের বক্তব্য এবং তার জামিনের দাবিতে মানববন্ধন করা ব্যক্তিদের ওপর হামলা দুইটা আলাদা বিষয়। বাউল আবুল সরকারের বক্তব্যের কিছু অংশ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভূতিতে প্রবলভাবে আঘাত দিয়েছে। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। আমরা মনে করি, বিচারিক প্রক্রিয়াতেই এ বিষয়ে সমাধান হওয়া উচিত। মাননীয় আদালতের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল ও বিশ্বাসী যে এ ব্যাপারে যে আইন অনুযায়ী সঠিক ব্যবস্থা তারা নেবেন। আমাদের আগের বিবৃতির উদ্দেশ্য কখনোই তাঁর বক্তব্যকে বৈধতা দেওয়া ছিল না। একই সাথে, আমরা মনে করি, যেকোন গোষ্ঠীর অহিংস উপায়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বা মানববন্ধন করার অধিকার রয়েছে। তাদের ওপর বলপূর্বক বাঁধা প্রদান ও হামলা তাদের রাজনৈতিক অধিকারের লঙ্ঘন। আমরা কেবল সেই হামলারই নিন্দা জানিয়েছি।
সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক গোষ্ঠীর মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে”—আমাদের পূর্বের বিবৃতির এই অংশকে কেউ কেউ ভুল ব্যাখ্যা করেছেন।
সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে এটা স্পষ্ট যে-মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত, কিন্তু তা আইনের সীমার মধ্যে।ধর্ম অবমাননা আইনত নিষিদ্ধ। আমরা কখনোই ধর্ম অবমাননাকে মতপ্রকাশের অধিকার বলিনি এবং বলি না।
আমাদের বক্তব্যের অর্থ ছিলো—যেসব সাংস্কৃতিক বা আধ্যাত্মিক চর্চা আইনের লঙ্ঘন করে না, রাষ্ট্রকে তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। এর বাইরে কোনো অর্থ নেই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এনসিপি'র অবস্থান ইসলাম বা কোন ধর্মের বিরুদ্ধে নয়।
বিবৃতি আরও বলা হয়- গত কয়েকদিন ধরে একটি গোষ্ঠী বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বলছে যে এনসিপি নাকি ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এটি ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাজনৈতিক অপপ্রচার। আমাদের অবস্থান—এনসিপি কোনো ধর্মের অবমাননাকেই সমর্থন করে না। ধর্ম অবমাননা আইনত অপরাধ—এর বিচার আমরা চাই। ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা রাখা—এটাই এনসিপির নীতি। ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধেও এনসিপির অবস্থান দৃঢ়।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার দমন-পীড়নের আমলে—গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা—যেমন রাষ্ট্রীয় অপরাধে পরিণত হয়েছিল, তেমনি ইসলামবিদ্বেষ বা ইসলামোফোবিয়াও ছিলো সেই আমলের একটি বড় নির্যাতনের অস্ত্র। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সেই ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধেই জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের বহিঃপ্রকাশ ছিলো। এনসিপি সেই ঐতিহাসিক অবস্থানেই অটল—এনসিপি যেমন ধর্মবিদ্বেষ বা ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে, অন্যদিকে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদেরও বিরুদ্ধে। দেশের দায়িত্বশীল মূলধারার আলেমসমাজের ভূমিকার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
আমরা বিশ্বাস করি—বাংলাদেশের মূলধারার আলেমসমাজই যুগের পর যুগ ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও শান্তিপূর্ণ দাওয়াতের মাধ্যমে সমাজকে সংযম ও ন্যায়ের পথে রেখেছেন। ধর্ম নিয়ে বিভ্রান্তি বা ভুল ব্যাখ্যার পরিস্থিতিতে এই আলেমসমাজই মানুষকে উত্তেজনা থেকে ফিরিয়ে আনেন, আইনের প্রতি সম্মান শেখান এবং সহিংসতার পথ থেকে দূরে রাখেন। আমরা এই শান্তিপূর্ণ, দায়িত্বশীল ও ন্যায়ভিত্তিক দাওয়াতি ঐতিহ্যকে গভীর শ্রদ্ধা করি এবং সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করি। এভাবেই আমরা ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং রাষ্ট্রে আইনের শাসন—দুটিকেই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।
শেষকথা হলো-এনসিপি ইসলামের বিরুদ্ধে নয়। কোনো ধর্মের বিরোধী নয়। ধর্মবিদ্বেষ ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। কেউ ভুল করলে তার বিচার আদালত করবে, জনতা নয়। আইন হাতে তুলে নেওয়া চলতে পারে না। এটি ইসলামের বিরোধিতা নয়; বরং ইসলামেরই শিক্ষা হলো—বিচার হবে সত্য, প্রমাণ ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে, প্রতিশোধের মাধ্যমে নয়। সর্বোপরি বিভ্রান্তি ছড়ানো রাজনৈতিক অপপ্রচারের নিন্দা জানাই। আমরা শান্তি, ন্যায়, সম্প্রীতি এবং আইনের শাসনের রাজনীতিতে অটল। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সহায় হোন।
ভিওডি বাংলা/ এমএম







