কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনে ৩ জাহাজে ১২শ’ পর্যটকের যাত্রা

মৌসুমের প্রথম যাত্রা শুরু হলো কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন সমুদ্রপথে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে তিনটি জাহাজ-এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ-১২শ’ পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর খুলে গেল জনপ্রিয় প্রবালদ্বীপগামী এ রুটের মৌসুমি যাত্রা।

ভোর থেকে ঘাটে ভিড় জমাতে থাকেন যাত্রীরা। টিকিট প্রদর্শনের পর জাহাজে চড়ার আগে প্রত্যেককে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় পরিবেশবান্ধব পানির বোতল। ঢাকায় থেকে আসা পর্যটক অরুপ হোসেন বলেন, “প্রথমবার সেন্টমার্টিন যাচ্ছি, খুবই রোমাঞ্চ লাগছে। প্রশাসনের প্রস্তুতিও ভালো মনে হয়েছে।”

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক অনুমতিপ্রাপ্ত জাহাজে সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপে রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকবে। সব যাত্রার টিকিট সংগ্রহ করতে হবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড স্বীকৃত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড বাধ্যতামূলক; কিউআর কোডবিহীন টিকিটকে নকল হিসেবে গণ্য করা হবে।

‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, প্রশাসন ৬টি জাহাজকে অনুমতি দিয়েছে। যাত্রীর চাপ বিবেচনায় প্রথম দিনে ৩টি জাহাজ চলেছে। জোয়ার-ভাটা ও নাব্যতা দেখে প্রতিদিনের যাত্রার সময় নির্ধারণ করা হবে। সেন্টমার্টিনে পৌঁছে জাহাজগুলো বিকেলে আবার কক্সবাজারে ফিরবে।

গতবছর থেকে টেকনাফ রুট বন্ধ থাকায় কক্সবাজার থেকে দীর্ঘ সমুদ্রপথে ভ্রমণ কিছুটা ক্লান্তিকর হতে পারে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক রোকসানা আলী। তবে তিনি জানান, “ভ্রমণটা লম্বা হলেও সেন্টমার্টিনের শান্ত প্রকৃতি সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়।”

পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘাটে তল্লাশি ও জাহাজে নিরাপত্তা তদারকি করছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, “পর্যটকরা যাতে নিরাপদে যাত্রা উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য সমুদ্রপথে ও দ্বীপে আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে।”

সেন্টমার্টিনের প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার গত অক্টোবরে ১২ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-রাতে সৈকতে আলো নিষিদ্ধ, উচ্চ শব্দে অনুষ্ঠান ও বারবিকিউ নিষেধ, কেয়াবনে প্রবেশ ও কেয়াফল সংগ্রহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল এবং রাজকাঁকড়াসহ জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিকর কোনো কার্যক্রম বন্ধ। এছাড়া সৈকতে মোটরযান চলাচল, সি-বাইক, পলিথিন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ ঘাট পরিদর্শনে এসে জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, “পরিবেশ রক্ষার নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে প্রশাসন কঠোরভাবে কাজ করবে। তবে এর জন্য পর্যটকদের সহযোগিতা প্রয়োজন।”

গত ১ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, তবে পুরো নভেম্বর দ্বীপে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ থাকায় কক্সবাজার থেকে কোনো জাহাজ চলেনি। ডিসেম্বরের প্রথম দিনেই তাই জমজমাট হয়ে উঠল মৌসুমের প্রথম যাত্রা।

ভিওডি বাংলা/জা