• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

তারেক রহমান দেশে ফিরছেন কবে?

আহসান হাবিব    ২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৩ পি.এম.
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি-সংগৃহীত

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। এ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে দেখতে তাঁর ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসছেন—এমন গুঞ্জন নানা মহলে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তারেক রহমান দেশে ফিরছেন কবে?

সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, খুব শিগগিরই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরবেন।

এ বক্তব্যের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পুরোনো ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে দাবি করা হয়, লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে তারেক রহমানকে দেখা যায় তিনি কোথাও যাচ্ছেন।

তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি অনেকটা পুরোনো। চলতি বছরের জুন মাসে তাঁর স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে পৌঁছালে তারেক রহমান তাঁকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। সেই সময়টাই ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ভিওডি বাংলাকে বলেন, এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটিই দলের চূড়ান্ত অবস্থান। এর বাইরে ভিন্ন কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই । তবে তিনি ইঙ্গিত দেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্রুতই দেশে ফিরতে পারেন।

এর আগে শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৯টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তারেক রহমান বলেন,
‘সংকটকালে মায়ের স্নেহ-স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, এখনই দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তাঁর জন্য সম্পূর্ণ একক নিয়ন্ত্রণে নেই এবং বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় বিস্তারিত বলা সম্ভবও নয়। রাজনৈতিক বাস্তবতা প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছালেই তিনি দেশে ফিরবেন—এমন আশাবাদের কথাও উল্লেখ করেন।

 বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক ভিওডি বাংলাকে বলেন, “দেশনেত্রী অসুস্থ। আমরা তাঁর জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছি না। দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সুস্থতার জন্য দোয়া করা হচ্ছে।”

তিনি জানান, তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দল নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তথ্য দিচ্ছে এবং এ বিষয়ে তাঁর আলাদা কোনো বক্তব্য নেই। তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়েও দলের সিনিয়র নেতারাই বক্তব্য দিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তারেক রহমানের এ বক্তব্যের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই।

আইন উপদেষ্টা ড আসিফ নজরুল বলেছেন, দেশে ফিরতে তারেক রহমানের কোন আইনি বাঁধা নেই। তার নিজের সিদ্ধান্তই যথেষ্ট। 

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের  উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ভিওডি বাংলাকে বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়ায় তাঁদের নিয়ে গুঞ্জন থাকাটা স্বাভাবিক। তবে দল থেকে বারবার বলা হয়েছে, ডা. জাহিদ হোসেন ছাড়া এ বিষয়ে আর কারো বক্তব্য যেন প্রচার করা না হয়।

তিনি বলেন, তারেক রহমান তাঁর ফেসবুক পোস্টে বিষয়গুলো পরিষ্কার করে দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার দেশে ফেরা নিয়েও দলীয়ভাবে আগেই জানানো হয়েছে। শেষে তিনি খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া চান।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে একদিনেই ওয়ানটাইম পাস (ট্রাভেল পাস) দেওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, তাঁর দেশে ফেরায় কোনো ধরনের বাধা নেই। তবে তারেক রহমান এখনো ট্রাভেল পাস চাননি বলেও জানান তিনি।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, চাইলেই তাঁর ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হবে। তবে এখনো তাঁর ঢাকায় ফেরার বিষয়ে সরকারকে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, দল বা পরিবারের সিদ্ধান্ত হলে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বর্তমানে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ভিওডি বাংলাকে বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ এবং তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য নিয়মিত জানাচ্ছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, দল থেকেই আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হচ্ছে, এর বাইরে অন্য কারো বক্তব্য প্রচার না করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

অন্যদিকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া আরেক পোস্টে তারেক রহমান লেখেন, দেশবাসীর সম্মিলিত সমর্থনই জিয়া পরিবারের শক্তি ও প্রেরণার উৎস। তিনি বলেন, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য যেভাবে সহযোগিতা ও শুভকামনা জানানো হচ্ছে, তার জন্য জিয়া পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

তারেক রহমান ২০০৮ সালে ওয়ান-ইলেভেনের পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান। এরপর থেকে তিনি আর দেশে ফেরেননি। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথমবারের মতো স্বীকার করেন, ২০১২ সালে তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন এবং এক বছরের মধ্যেই তা গৃহীত হয়।

দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির নেতাদের অভিযোগ ছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের মিথ্যা মামলা ও বাধার কারণেই তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও প্রায় ১৫ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি দেশে ফেরেননি। বিশেষ করে মায়ের গুরুতর অসুস্থতার পরও কেন তিনি এখনো বিদেশে রয়েছেন—এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ও কৌতূহল ক্রমেই বাড়ছে।

ভিওডি বাংলা/ এএইচএস/এমএম

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
এ অবস্থাকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলা যায় না : গোলাম পরওয়ার
এ অবস্থাকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলা যায় না : গোলাম পরওয়ার
নির্বাচন এলে যারা তসবিহ হাতে ঘোরে, তারাই ধর্মব্যবসায়ী
জামায়াত আমির নির্বাচন এলে যারা তসবিহ হাতে ঘোরে, তারাই ধর্মব্যবসায়ী
২০ দল নিয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ
২০ দল নিয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ