খালেদা জিয়া
বিভ্রান্তি এড়াতে সতর্ক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক সূত্রে ছড়ানো গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা। এসব বিভ্রান্তি এড়াতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানান, চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য বর্তমানে স্থিতিশীল আছে এবং তিনি নিয়মিত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। তবে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুল তথ্য ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেগম জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সব তথ্য কেবল দলের নির্ধারিত চিকিৎসক ও কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকেই জানানো হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা অননুমোদিত সূত্রে ছড়ানো কোনো তথ্য বিশ্বাস না করার জন্য সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত জানিয়ে গুজব না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
দলীয় সূত্র আরও জানায়, শীর্ষ নেতারা ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গুজবে কান না দিয়ে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ভিওডি বাংলাকে বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ এবং তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য নিয়মিত জানাচ্ছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, দল থেকেই আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হচ্ছে, এর বাইরে অন্য কারো বক্তব্য প্রচার না করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটিই দলের চূড়ান্ত অবস্থান। এর বাইরে ভিন্ন কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি। তবে তিনি ইঙ্গিত দেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্রুতই দেশে ফিরতে পারেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভাজন নয়, দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এই সময় ঐক্যই সবচেয়ে জরুরি।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য নিয়ে গুজব দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি জনমনে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। ফলে বিষয়টি নিয়ে সময়মতো সতর্ক অবস্থান নেওয়াকে ইতিবাচক বলেই দেখছেন তারা।
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক ভিওডি বাংলাকে বলেন, “দেশনেত্রী অসুস্থ। আমরা তাঁর জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছি না। দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সুস্থতার জন্য দোয়া করা হচ্ছে।” তিনি জানান, তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দল নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তথ্য দিচ্ছে এবং এ বিষয়ে তাঁর আলাদা কোনো বক্তব্য নেই। তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়েও দলের সিনিয়র নেতারাই বক্তব্য দিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের আর এক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ভিওডি বাংলাকে বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়ায় তাঁদের নিয়ে গুঞ্জন থাকাটা স্বাভাবিক। তবে দল থেকে বারবার বলা হয়েছে, ডা. জাহিদ হোসেন ছাড়া এ বিষয়ে আর কারো বক্তব্য যেন প্রচার করা না হয়। তিনি বলেন, তারেক রহমান তাঁর ফেসবুক পোস্টে বিষয়গুলো পরিষ্কার করে দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার দেশে ফেরা নিয়েও দলীয়ভাবে আগেই জানানো হয়েছে। শেষে তিনি খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া চান।
এ সময় দলটির নেতৃবৃন্দরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাইবার টিম এ বিষয়ে নজরদারি করলে গুজব অনেকটা কমে যাবে।
উল্লেখ্য,২৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। প্রথমে ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে তার শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। পরবর্তীতে রোগ ছড়িয়ে পড়ে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসে।
২৭ নভেম্বর থেকে তাকে সিসিইউতে রাখা হয়। ১ ডিসেম্বর রাতের দিকে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়, এবং আওয়াজ আসে — তিনি ভেন্টিলেটর সহায়তায় রয়েছেন।
চিকিৎসাকর্মীদের এক বোর্ড গঠন করা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশি এবং বিদেশি চিকিৎসক রয়েছেন। ১ ডিসেম্বর রাতে চীনের ৫ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল ঢাকা আসে এবং তাঁর চিকিৎসায় যুক্ত হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা–পরিবেষ্টিত পরিবেশে নতুনভাবে যোগ হলো আরও কড়া নিরাপত্তা। ২ ডিসেম্বর ২০২৫ দুপুর ২ টা ২০ মিনিট থেকে ভিভিআইপি বিশেষ নিরাপত্তা নিয়োজিত এসএসএফ সদস্যগণ হাসপাতালে এসে ডিউটি শুরু করেছেন।
ভিওডি বাংলা/ এমএম