বাবরি মসজিদ ভিত্তিপ্রস্তরে ইট আনছেন স্থানীয়রা

ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩৩ বছর পর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙায় আজ শনিবার (৬ ডিসেম্বর) একই নামে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে যাচ্ছেন তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। এ উপলক্ষে স্থানীয়রা মাথায় করে ইট এনে প্রস্তুতিতে অংশ নিচ্ছেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসনের তৎপরতা বেড়েছে এবং ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে বেলডাঙা থানা ও আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্থানীয় ও রাজ্য পুলিশসহ বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। উত্তর বারাসাতের বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলামকে প্রস্তাবিত কাঠামোর জন্য তার অবদানের অংশ হিসেবে মাথায় ইট বহন করতে দেখা যায়। এএনআইকে তিনি বলেন, ‘হুমায়ুন কবির যেখানে বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন আমি সেখানে যাব। আমি বাবরি মসজিদের জন্য ইট নিয়ে যাচ্ছি।’
এদিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মুর্শিদাবাদের বাসভবন থেকে রওনা দেওয়ার সময় তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এএনআইকে বলেন, ‘আমি আজ বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করব। আমি কিছু বলব না। পুলিশ আমাকে সমর্থন করছে। আমি তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যেই কথা বলেছি। গতকাল কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পর পুলিশ আমাকে সমর্থন করছে। তারা আমাকে নিরাপত্তা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, প্রশাসন আয়োজকদের পুরোপুরি সহযোগিতা করছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদে যেন কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা না ছড়ায়, সেজন্য যা যা করা দরকার তা করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট।
সরকারকে বলা হয়েছে, এই সম্ভাব্য উত্তেজনা থামাতে এবং শান্তি বজায় রাখতে যা যা করা দরকার, তার সবই করতে হবে।
এ বিষয়ে ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল রাজদীপ মজুমদার বলেছেন, সিআইএসএফের ১৯টি কোম্পানি ইতোমধ্যে এই অঞ্চলে উপস্থিত রয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে র্যাফের ইউনিট সহ ৩৫০০ জনের একটি দল রেজিনগর এবং আশেপাশের অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে। ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের সুরক্ষার জন্য বিএসএফের দুটি কোম্পানি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি পার্থ সারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ এই বিষয়ে দায়ের করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন, রাজ্য সরকারকে তাদের অবস্থান অনুযায়ী কাজ করতে হবে। মুর্শিদাবাদে আইনশৃঙ্খলা কঠোরভাবে বজায় রাখতে হবে এবং নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের এ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা। হুমায়ুন কবীরের এই কর্মসূচিকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে হুমায়ুন কবীর বলেন, মূল ইভেন্টটি দুপুর ১২টায় শুরু হবে। দুই ঘণ্টা কোরান পাঠ করা হবে। অনুষ্ঠানে কোনো বক্তৃতা থাকবে না, কোনো রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব থাকবে না, কোনো দলীয় পতাকা থাকবে না। আমি ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে উপস্থিত থাকব। এই মসজিদ তৈরি করতে তিন বছর সময় লাগবে। অর্থ জোগাবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। একই সঙ্গে তিনি এ অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে রাজ্য পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন।
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পুরো ঘটনাকে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। তার অভিযোগ, রাজ্যের আসন্ন নির্বাচনের আগে বিরোধী দলগুলো তৃণমূলকে বদনাম করার চেষ্টা করছে। হাইকোর্টের নির্দেশের পর রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো সতর্ক রয়েছে।
হাইকোর্ট ইতোমধ্যে রাজ্য সরকারকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা রোধ ও শান্তি বজায় রাখতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্যপালও জনসাধারণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের এই দিনেই অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়। কয়েক মাস আগেও ওয়াক্ফ আইনের প্রতিবাদ ঘিরে মুর্শিদাবাদে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল।
ভিওডি বাংলা/জা







