• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

রাজশাহীতে সারের সংকট বিপাকে আলুচাষিরা

রাজশাহী ব্যুরো    ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:২০ পি.এম.
ছবি: ভিওডি বাংলা

বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলের মধ্যে সব থেকে বেশি আলু চাষ হয় রাজশাহী জেলায়। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্যি প্রতি আলু মৌসুমে সার সিন্ডিকেটের কবলে পড়তে হয় জেলার চাষিদের। তবে সরকার নির্ধারিত ন্যায্য দামে মামমাত্র সার বিতরণ দেখা গেলেও প্রয়োজন অনুযায়ি পর্যাপ্ত সার পান না চাষিরা। এবারো আলুচাষের শুরুতেই সার সঙ্কটে পড়েছেন জেলার কৃষকরা। অধিকাংশক্ষেত্রে  অতিরিক্ত দামেও সার পাচ্ছেন না অনেকে।সার কিনতে ডিলারের দোকানের সামনে ভিড় জমাচ্ছেন চাষিরা। কিন্তু সরকারি মূল্যে সার পাচ্ছেন না। কিন্তু  অতিরিক্ত টাকা দিলে আবার অনেকেই পাচ্ছেন সেই সার। এক হাজার ৫০ টাকা দামের প্রতি বস্তা ডিএপি সার মিলছে ১৩ থেকে ১৪শ টাকা দামে। আবার নভেম্বর মাসের বরাদ্দ না আসা পর্যন্ত কোনো ডিলারই টিএসপি সার দিতে পারছে না। তবে ১৬৫০ থেকে ১৮০০ টাকা দিলে আবার এই সারও মিলছে। বস্তা প্রতি তিন থেকে চারশ টাকা বেশি লাগছে। এর ফলে আলুচাষে খরচও বাড়ছে কৃষকদের। বেশি সঙ্কটে পড়েছেন জেলার তানোর,মোহনপুর, গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলার আলুচাষিরা। জেলার মধ্যে এই উপজেলাগুলোতে আলু চাষ বেশি হয়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, নভেম্বর মাসে জেলায় ২২০ জন  ডিলারের মাঝে ৭ হাজার ৩০৭ টন ইউরিয়া, ৩ হাজার ১৮৬ টন টিএসপি, ৭ হাজার ৮৩৯ টন ডিএপি ও ৫ হাজার ৬৩৭ টন এমওপি সার বরাদ্দ দেয়া হয়। জেলার প্রায় ১৬ হাজার কৃষকের জন্য বরাদ্দ অনুযায়ী প্রায় সব ডিলারই অধিকাংশ সার উত্তোলন করেছেন। কেউ কেউ সবগুলো উত্তোলন করেছেন। ডিসেম্বর মাসের জন্য ৯ হাজার ২৭৯ টন ইউরিয়া, ২ হাজার ৫৫৬ টন টিএসপি, ৭ হাজার ৯৫১ টন ডিএপি ও ৪ হাজার ৪৪৫ টন এমওপি সার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই সারগুলো ডিসেম্বর মাসের যে কোনো দিন তুলতে পারবেন ডিলারগণ।

এদিকে গত মৌসুমে আলুচাষ করে প্রচুর লোকসানের মুখে পড়ে পথে বসেছেন হাজারও আলুচাষি। সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে পুনরায় আলু চাষের প্রস্তুতি চলছে। তবে অনেক চাষি সার না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন। আলুচাষি তানোর পৌর এলাকার আব্দুল মালেক বলেন,  বৃহস্পতিবার সার পেতে কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে অফিসে আসি। দুপুর ১২টা -পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কৃষি কর্মকর্তার দেখা পাইনি। হতাশ হয়ে ফিরে এসেছি। তানোরের পাঁচন্দর ইউপির কৃষ্ণপুর এলাকার আলুচাষি তরিকুল ইসলাম জানান, কয়েক বিঘা জমিতে আলু চাষ - করবো। কিন্তু সার মিলছে না। ডিলার বা ব্যবসায়ীদের কাছে গেলে সার নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। আবার বাড়তি দামে সার ঠিকই মিলছে। প্রতি আলু মৌসুমে একই ধরনের সিন্ডিকেট হলেও কোনো প্রতিকার নেই।

তানোরের সার ডিলার মাইনুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের চাহিদা মোতাবেক সার দিতে পারছি না। যে বরাদ্দ দেয় তা দিয়ে কৃষকদের মন রক্ষা করা যাচ্ছে না। আমরা কি করবো। সরকার যেভাবে দেয় আমরা সে মোতাবেক সকলের মাঝে বিতরণ করি। বেশি দামে সার বিক্রি করার প্রশ্নই আসে না।

অন্যদিকে পবা উপজেলার  দামকুড়া বাজারের সার ডিলার নজরুল ইসলাম জানান, তার দোকানে টিএসপি বা ডিএপি সারের সঙ্কট চরমে। সঙ্কটের কারণে কৃষকদের চাহিদামতো সার দিতে পারছেন না তিনি। 'তিন বস্তা চাইলে কাউকে কাউকে কোনোভাবে এক বস্তা দিতে পারছেন। তবে গত দুই তিন ধরে সেটিও পারছেন না। সামনের ডিসেম্বর মাসের নতুন বরাদ্দ পেলে আবার টিএসপি এবং ডিএপি সার দিতে পারবেন। একই অবস্থা তৈরি হয়েছে জেলার প্রায় প্রত্যেকটি উপজেলাতেই। পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাগমারা, চারঘাট ও বাঘা উপজেলাতে ডিএপি সার পাওয়া গেলেও মিলছে না টিএসপি। ফলে এসব উপজেলাগুলোতেও আলুচাষিরা এখন বেকায়দায় পড়েছেন। টিএসপি ও এমওপি সার প্রয়োগ করে আলুচাষ শুরু করবেন। কিন্তু সারের সঙ্কটের কারণে আলুচাষ শুরু করতে পারছেন না।

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা পারভিন লাবনী বলেন, এ উপজেলায় বরাদ্দ অনুযায়ী সার পাওয়া যায়। সারের কোনো সঙ্কট নেই। তবে বাজারে চাষিদের বেশি দামে সার কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, বেশি দামে সার কেনার বিষয়ে আমার জানা নেই। সার সঙ্কট না হওয়ারই কথা। যেহেতু আলুচাষ পুরোদমে শুরু হয়নি। তবে কৃষি জমি বাদে পুকুরের সার প্রয়োগ করায় এ সঙ্কট দেখা দিতে পারে।

রাজশাহীর তানোর কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুভাষ কুমার মন্ডল জানান, আমরা সরকারি নিয়মের বাইরে বরাদ্দ পাই না। সারা বছরের বরাদ্দ দিয়েও আলুচায়ে সারের চাহিদা মিটবে না। কারণ কৃষকরা জৈব সার ব্যবহার করে না। মাত্রাতিরিক্ত সার কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে। টেন্ডারের জমি বেশি ফলনের জন্য অতিরিক্ত সার ব্যবহারের কারণে প্রচুর পরিমাণে সারের প্রয়োজন। তবে পরামর্শ থাকবে, কৃষকরা যেন অতিরিক্ত জৈব সার ব্যবহার করে। জমির উর্বরতা ধরে রাখে।

এবিষয়ে জানতে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নাসির উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বরাদ্দ অনুযায়ী আলুচাষিদের জন্য সারের সঙ্কট থাকার কথা নয়। কিন্তু যারা বোরো মৌসুমে ধান চাষ করবেন তারাও পরে সার পাবেন না ভেবে এখন সার উত্তোলন করে রেখে দিচ্ছেন। অথচ এখন মূলত, আলুচাষের জন্যই সার বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এ কারণে আলুচাষের কৃষকরা সার সংকটে পড়েছেন হয়তো। তবে সার সঙ্কট বেশি বলে জানা নেই।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

 


  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নলছিটিতে দপ্তরির ইঁদুর মারা ফাঁদে স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মীর মৃত্যু
নলছিটিতে দপ্তরির ইঁদুর মারা ফাঁদে স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মীর মৃত্যু
পাশাপাশি তিন ভাইয়ের কবর, কুমারখালীর মোহাম্মদ চলছে শোকের মাতম
পাশাপাশি তিন ভাইয়ের কবর, কুমারখালীর মোহাম্মদ চলছে শোকের মাতম
নাগরপুরে খেজুরের রস আহরণে ব্যস্ত গাছিরা
নাগরপুরে খেজুরের রস আহরণে ব্যস্ত গাছিরা