• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

ওড়িশায় নারীকে হত্যার জেরে জ্বালিয়ে দেওয়া বাঙালি গ্রাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক    ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৩ পি.এম.
মালকানগিরিতে আদিবাসী নারীর হত্যায় বাঙালি গ্রামে আগুন ভাঙচুর-ছবি: সংগৃহীত

ভারতের ওড়িশা রাজ্যের মালকানগিরি জেলায় আদিবাসী নারী লাকে পোদিয়ামির হত্যার ঘটনায় বাঙালি সম্প্রদায়ের এমভি-২৬ গ্রামে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। নিহত নারীর মাথা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যায় অভিযুক্ত শুভরঞ্জন মন্ডলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে যে ওই আদিবাসী নারী লাকে পোদিয়ামির মাথাহীন দেহ যেখানে পাওয়া গিয়েছিল, তার থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে একটি নদীর ধারে বুধবার মাথা পাওয়া গেছে।

ওই আদিবাসী নারীকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শুভরঞ্জন মন্ডল নামে এক ব্যক্তিকে আগেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
 
তবে তার আগেই বাঙালিদের একটি গ্রাম পুরো জ্বালিয়ে দেয় ক্ষুব্ধ আদিবাসী জনতা। রোববার ওই ঘটনার পর থেকে বাঙালিদের গ্রামটি জনশূন্য হয়ে রয়েছে, সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে বিরাট পুলিশ বাহিনী।

মানুষের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা যেমন জারি আছে, তেমনই মালকানগিরি জেলায় আরও একদিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা করেছে সরকার। এর আগে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছিল সরকার।
 
এমভি-২৬ গ্রামটিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসা বাঙালি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন করেছিল সরকার। যদিও ভারতের কিছু সামাজিক মাধ্যমে এটা বলা হচ্ছে যে এই গ্রামের বাসিন্দারা 'বাংলাদেশি' এবং 'অবৈধভাবে' ওড়িশায় বসবাস করছিলেন।

বুধবার সকালে পোটেরু নদীর ধার থেকে একটি দেহহীন মাথা খুঁজে পান স্থানীয় নারীরা। পুলিশকে খবর দেওয়া হলে সেখানে পৌঁছে প্রাথমিকভাবে মনে করছে যে সেটি নিহত আদিবাসী নারী লাকে পোদিয়ামিরই।

ওই মাথায় থাকা গয়না থেকে পুলিশ মনে করছে যে সেটি খুন হওয়া আদিবাসী নারীই।

স্থানীয় গণমাধ্যম জানাচ্ছে যে গত তেসরা ডিসেম্বর থেকে ৫১ বছর বয়সী আদিবাসী নারী লাকে পাদিয়ামি নিখোঁজ ছিলেন। দু-দিন পরে তার ধরহীন দেহ উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় আদিবাসীরা দাবি করছিলেন, মৃতদেহের মাথা খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তারা দেহটির সৎকার করবেন না। প্রশাসন তাদের বুঝিয়ে সৎকারে রাজি করায়।

মঙ্গলবার লাকে পোদিয়ামির দেহের সৎকার করেছে তার পরিবার। যেহেতু তার দেহের সঙ্গে মাথা ছিল না, তাই মাটি দিয়ে একটি প্রতীকী মাথা বানিয়ে দেহের সৎকার করা হয়।

প্রাথমিকভাবে জমি সংক্রান্ত বিবাদ থেকেই এই খুন বলে মনে করছে পুলিশ। খুনে অভিযুক্ত সন্দেহে যে বাঙালিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের পরিবারের সঙ্গে বিধবা আদিবাসী নারী লাকে পোদিয়ামির জমি নিয়ে বিবাদ ছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।

আদিবাসীরা এই দাবিও তুলছিলেন যে তাদের এলাকা থেকে বাঙালি অভিবাসীদের সরিয়ে দিতে হবে।

হত্যার ঘটনায় তদন্তের জন্য ফরেনসিক দল, পুলিশ কুকুর নিয়ে আসা হয়েছে। ফের অগ্নি সংযোগ ঘটলে দ্রুত যাতে ব্যবস্থা নেওয়া যায় তার জন্য দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়েছে।

নিহত লাকে পোদিয়ামির পুত্রকে তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ হাজার ভারতীয় টাকা দেওয়া হয়েছে এবং রাজ্য সরকার তার পরিবারকে চার লাখ ভারতীয় টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।

জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাঙালিদের গ্রাম-আদিবাসী ও বাঙালিদের মধ্যে ওই খুন নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই রোববার রাখেলগুড়া গ্রামের শত শত আদিবাসী নারী পুরুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন এমভি-২৬ নামের বাঙালি উদ্বাস্তুদের গ্রামটিতে।

পুলিশ বলছে গ্রামটির ১৮৮টি বাড়িতেই লুটপাট চালানো হয় এবং বহু বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে যে ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ দুজনকে আটক করেছে এবং এমভি-২৬ গ্রামটি থেকে অনেক বাসিন্দা পালিয়ে গিয়েছেন

এরপরেই চলাচলের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী।

তিনদিন ধরে ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করা হয়েছে। বুধবার সরকার জানিয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা আরও একদিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

মালকানগিরির জেলাশাসক সোমেশ উপাধ্যায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “প্রাথমিক হিসাবে এমভি-২৬ গ্রামটির ১৮৮ টি বাড়ির মধ্যে ১৬৩টিতে ভাঙচুর করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। তা শেষ হলে আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”

তিনি সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, "প্রায় ৩০০ মানুষ ওই গ্রাম থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তারা ফিরে এসেছেন। প্রশাসন এমবি-২৬ গ্রামে একটি সর্বজনীন রান্নাঘর খুলেছে, সেখান থেকে খাবার, কম্বল ইত্যাদি দেওয়া হচ্ছে গ্রামের মানুষকে।"

সংবাদ সংস্থা এএনআই জানাচ্ছে, মালকানগিরি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মঙ্গলবার আদিবাসী ও বাঙালি সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি শান্তি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দুপক্ষই শান্তি ফেরানোর উদ্যোগের কথা জানিয়েছে বলে এএনআই তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

জেলাপ্রশাসক সোমেশ উপাধ্যায় এএনআইকে বলেছেন, “দুই সম্প্রদায়ের ৩০-৩৫ করে প্রতিনিধি বৈঠকে ছিলেন। তার সর্বসম্মতিক্রমে বলেছেন যে মালকানগিরির শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তারা ফিরে পেতে চান। খুনের প্রেক্ষিতে যে উসকানি চলেছে, তার নিন্দা জানিয়েছে আদিবাসী সমাজ। আবার বাঙালিদের কাছে তারা ক্ষমাও চেয়েছে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস এবং বোঝাপড়া বেড়েছে।”

প্রশাসন বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করেছে, চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট পরিষেবা আরও একদিন বন্ধ থাকবে। জেলা প্রশাসন ও দুই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা শান্তি বৈঠক আয়োজন করে সমঝোতা করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

ভিওডি বাংলা/জা

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মরক্কোতে পাশাপাশি দুটি ভবন ধসে নিহত ২২, আহত ১৬
মরক্কোতে পাশাপাশি দুটি ভবন ধসে নিহত ২২, আহত ১৬
ইন্দোনেশিয়ার বন্যায় ধ্বংসস্তূপ সরাতে নামল হাতি
ইন্দোনেশিয়ার বন্যায় ধ্বংসস্তূপ সরাতে নামল হাতি
মস্কোর কাছে রুশ সামরিক কার্গো বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ৭
মস্কোর কাছে রুশ সামরিক কার্গো বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ৭