তারেক রহমান:
নির্বাসিত সময়, দূর থেকে নেতৃত্ব এবং প্রত্যাবর্তনের প্রত্যাশা

বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিছু নাম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেবল ব্যক্তি পরিচয়ে সীমাবদ্ধ থাকে না, তারা হয়ে ওঠে একটি রাজনৈতিক অধ্যায়। তারেক রহমান তেমনই এক নাম। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে অবস্থান করলেও তিনি দলীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিলেন।
বিদেশযাত্রার পটভূমি
রাজনৈতিক অস্থিরতা, মামলা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তাজনিত বাস্তবতায় একপর্যায়ে তারেক রহমান দেশের বাইরে যান। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশে গেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হয়। এই প্রবাসজীবন তার রাজনৈতিক জীবনে এক ভিন্ন বাস্তবতার সূচনা করে-দেশের মাটিতে না থেকেও নেতৃত্ব দেওয়ার বাস্তবতা।
প্রবাসে থেকেও নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা
দেশের বাইরে অবস্থান করলেও তারেক রহমান বিএনপির রাজনীতি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখেননি। বরং আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার মাধ্যমে দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে নিয়মিত সংযোগ রেখে তিনি নীতিগত সিদ্ধান্ত, আন্দোলন-কর্মসূচি ও সাংগঠনিক নির্দেশনা দিয়ে আসছেন।
দলীয় নেতারা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি, বিবৃতি এবং কৌশল নির্ধারণে তারেক রহমানের ভূমিকা ছিল স্পষ্ট। বিশেষ করে দল পুনর্গঠন, তৃণমূল শক্তিশালী করা এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্রে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের দায়িত্ব
বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের দায়িত্ব গ্রহণের পর তারেক রহমানের সামনে ছিল দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা এবং রাজনৈতিক চাপের মধ্যে সংগঠনকে সচল রাখা। রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মাঝেও দলীয় কাঠামো ধরে রাখা এবং নেতাকর্মীদের মনোবল অটুট রাখাকে তিনি অগ্রাধিকার দেন-এমনটাই দাবি করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
সমালোচনা ও সমর্থনের দ্বন্দ্ব
তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবনের মতোই তার প্রবাসজীবনও ছিল আলোচিত ও সমালোচিত। সমর্থকদের কাছে তিনি আন্দোলনের প্রতীক, আর সমালোচকদের কাছে বিতর্কিত এক রাজনৈতিক চরিত্র। তবে উভয় পক্ষই স্বীকার করে যে, বিএনপির রাজনীতিতে তার প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরবেন তারেক রহমান:
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছরের নির্বাসনের পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরবেন। এ তথ্যটি শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ফখরুল বলেন, “আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান-কোটি কোটি মানুষের প্রিয় নেতা-দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার পর দেশে ফিরে গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে নতুন আশার সঞ্চার করবেন। তিনি আগামী ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার মাটিতে আমাদের মাঝে আসবেন। তার এই আগমন শুধু দলের নেতা-কর্মীদের জন্য নয়, সমগ্র জাতির জন্য আনন্দ ও আশার বার্তা নিয়ে এসেছে।
তারেক রহমানের দেশে ফিরা নিয়ে বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন,এটি একটি ঐতিহাসিক দিন হিসেবে ইতিহাসে লেখা লেখা থাকবে। তিনি বাংলাদেশের সব থেকে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন। আগামী দিনে যাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলা হচ্ছে তিনি বাংলাদেশে ফিরবেন এটাই প্রত্যাশিত ছিল। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য দল এবং দেশবাসীর উদ্যোগ এখন দেখার বিষয় হবে।
প্রত্যাবর্তনের প্রত্যাশা
দীর্ঘদিন ধরে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে ঘিরে প্রত্যাশা জমে উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, তার প্রত্যাবর্তন বিএনপির জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা করবে। একই সঙ্গে এটি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা কেবল একটি ব্যক্তিগত প্রত্যাবর্তন নয়-এটি হতে পারে ক্ষমতার রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের সূচনা।
সামনে কী
তারেক রহমান দেশে ফিরলে তিনি কীভাবে সক্রিয় রাজনীতিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করবেন, কী হবে বিএনপির ভবিষ্যৎ কৌশল সেসব প্রশ্নের উত্তর এখনো ভবিষ্যতের হাতে। তবে এটুকু স্পষ্ট, তার রাজনৈতিক যাত্রা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবেই বিবেচিত হবে।
ভিওডি বাংলা/জা



