সাতক্ষীরা
দালাল চক্র ও চিকিৎসক সংকটে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বর্তমানে চরম চিকিৎসক সংকটে অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ৫০ শয্যার অনুমোদন থাকলেও এ হাসপাতালে চিকিৎসক কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। অনুমোদিত ৩৪ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৩১ জন নিয়োগপ্রাপ্তির পর থেকে আজ পর্যন্ত কখনই যোগদান করেননি। যে ৩জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন প্রতিদিন শত শত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে প্রকাশ্যে আবার হাসপাতালের ভেতর ও আশপাশে সক্রিয় রয়েছে একটি দালাল চক্র। তারা রোগীদের অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে দেওয়ার নাম করে টাকা আদায় করছে। অনেককে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে নিতে প্রলুব্ধ করছে। ফলে রোগীরা একদিকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নিয়মিত কর্মরত হলে তালিকা অনুযায়ী ১৬৮ জন বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব পালন করবেন। সে হিসেবে হাসপাতালের মোট জনবলের সংখ্যা নির্দিষ্ট নিয়মে নির্ধারিত হলে, কনসালট্যান্ট (বিভিন্ন বিভাগ), রেসিডেন্ট/মেডিকেল অফিসার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার। সিনিয়র স্টাফ নার্স, স্টাফ নার্স, মিডওয়াইফ। ল্যাব টেকনিশিয়ান, এক্স-রে/ইমেজিং টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট। ওয়ার্ড বয়/আয়া, ওয়ার্ড মাস্টার, ক্লিনার, ক্যাটারিং স্টাফ। ম্যানেজার, হিসাবরক্ষক, রিসেপশনিস্ট। ২৪ ঘণ্টা সেবা প্রদানের জন্য ৩ শিফটে কাজ করবেন। চিকিৎসক সংকট থাকার কারনে ৩৪ জন ডাক্তারের জন্য ২৫ জন স্টাফ নার্স, মিডওয়াইফ, টেকনোলোজিস্ট, ওয়ার্ড বয় থেকে মালি পর্যন্ত বসে বসে সময় কাটাচ্ছেন ও বেতন সুবিধাদি ভোগ করছেন চিকিৎসা সেবা প্রদান ব্যতিত। অথচ খবরের অন্তরালে সরকারী ঔষধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুবিধাদি লুটপাট হচ্ছে বলে এমন অভিযোগ উঠেছে রোগীদের পক্ষথেকে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন চিকিৎসক। এর বাইরে ডা. এ. এম. মুসাদ্দিক হোসাইন খান সপ্তাহে মাত্র দুই দিন রোগী দেখেন এবং ডা. গৌতম চক্রবর্তী সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন বিধায় কালিগঞ্জে পূর্ণ সময় উপস্থিত থাকেন না। ফলে প্রতিদিন শত শত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ৩জন চিকিৎসকের।
চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালে আসা রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। বিশেষ করে ইমার্জেন্সি বিভাগে স্ট্রোক ও দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে রোগী ভর্তি দেখিয়ে সাতক্ষীরা সদর বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করছে। রোগীদের অভিযোগ, রেফার্ডের নামে সময় ক্ষেপণ করা হয়। এতে পথিমধ্যে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হয়ে পড়ে, এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
সুমন নামে এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, ডাক্তার দেখানোর পর ওষুধ নিতে গেলে প্যারাসিটামল আর পেট কামড়ানোর ওষুধ ছাড়া কিছুই পাই না। ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই, নামে মাত্র সরকারি হাসপাতাল। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালের এই বেহাল অবস্থার সুযোগ নিয়ে কালিগঞ্জের বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাতে কালিগঞ্জের প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাফর উল্লাহ ইব্রাহিম এ প্রতিনিধিকে বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, কালিগঞ্জ হাসপাতালে ডাক্তার নেই। রোগীরা প্রতারিত হচ্ছে, দালালের খপ্পরে পড়ছে। কোনো চিকিৎসা না দিয়ে শুধু ‘রেফার্ড করে হাজার হাজার টাকা নষ্ট করানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রূপা রানী পাল বলেন, আমাদের ডাক্তার সংকট চরমে। আমি সহ মোট তিনজন চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতাল চালানো হচ্ছে। এখানে ৩৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা। এই মুহুর্তে আমার সাথে আছে ডাঃ অঞ্জন এবং ডাঃ আজাদুল হক। তবে আরও চিকিৎসক পদায়ন করা হলে সেবার মান উন্নত হবে বলে মনে করছি।
এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজন চিকিৎসক নিয়োগ, বন্ধ থাকা বিভাগগুলো চালু করা, অ্যাম্বুলেন্স মেরামত ও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে জনস্বাস্থ্য চরম ঝুঁকির মুখে পড়বে।
ভিওডি বাংলা/ আবদুল্লাহ আল মামুন/ আ






