• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল

জামিন বিতর্কে আসিফ নজরুলের বক্তব্য একতরফা

নিজস্ব প্রতিবেদক    ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৩ পি.এম.
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সংগৃহীত ছবি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্টকে “স্ববিরোধী ও একতরফা” বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজনৈতিক প্রসঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আইন উপদেষ্টা তার ফেসবুক পোস্টে একদিকে আইনজীবী ও আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, অন্যদিকে মামলা দায়েরকারী ও তদন্তকারী সংস্থার সক্ষমতা ও অসঙ্গতির কথাও উল্লেখ করেছেন। তার ভাষায়, “ফেসবুক পোস্টের দ্বিতীয় প্যারার নবম থেকে চতুর্দশ লাইনে কী বোঝাতে চাওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট।”

তিনি অভিযোগ করেন, আইন উপদেষ্টা ঢালাওভাবে বড় রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রভাবশালী আইনজীবীদের দায়ী করলেও নিজের মন্ত্রণালয় কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়বদ্ধতার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল প্রশ্ন তোলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম অর্থ জোগানদাতা হিসেবে অভিযুক্ত ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার দিলীপ আগরওয়াল কীভাবে ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি আদালত থেকে জামিন পেয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে বের হয়ে যান—সে বিষয়ে আইন উপদেষ্টা নীরব কেন?”

তিনি সিআরপিসির ১৭৩ ধারার সঙ্গে ১৭৩এ সংযোজনের পেছনের উদ্দেশ্য নিয়েও আইন উপদেষ্টার নীরবতার সমালোচনা করেন।

জুলাই যোদ্ধা ওসমান হাদির ওপর হত্যাচেষ্টা মামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর এফআইআর ও ফরওয়ার্ডিংয়ে অভিযুক্তের রাজনৈতিক পরিচয় কেন গোপন রাখা হয়েছিল এবং তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও অতীত মামলার তথ্য আদালতে কেন উপস্থাপন করা হয়নি—এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এমন একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী কীভাবে দীর্ঘদিন নির্বিঘ্নে চলাফেরা করেছে এবং হাদির নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছে?”

নিজের ভূমিকা প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ মহল ইচ্ছাকৃতভাবে বিএনপির আইন সম্পাদক হিসেবে তার নাম প্রচার করছে। তিনি বলেন, “আদালত অঙ্গনে আমাদের পরিচয় আইনজীবী হিসেবে, রাজনৈতিক পদে নয়।”

তিনি আরও জানান, একজন আইনজীবী হিসেবে তিনি শুধু বিএনপি নয়, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, গণঅধিকারসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের জন্য ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত নিঃস্বার্থভাবে আইনি লড়াই করেছেন।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্ট (ইউএলএফ) গঠন করে তিনি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথ ও আদালত—দুই জায়গাতেই সক্রিয় ছিলেন। এ কারণে একাধিক মামলার আসামি হওয়া এবং তৎকালীন প্রধান বিচারপতির প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে আদালত অবমাননার মামলার মুখোমুখিও হতে হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

জামিন সংক্রান্ত বিতর্কে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেন, “একজন আইনজীবী হিসেবে আমার জবাবদিহিতা আদালত ও বার কাউন্সিলের কাছে। কোনো অভিযোগ উত্থাপনের জায়গা আদালত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়।”

তিনি আরও বলেন, “এই বিষয়ে জবাব দিতে গেলে মাননীয় আদালতকে সাক্ষী করতে হয়, যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত মর্যাদার চেয়ে আদালতের মর্যাদা অনেক বড়।”

সবশেষে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল অভিযোগ করেন, একটি নির্দিষ্ট মহল ইচ্ছাকৃতভাবে তার রাজনৈতিক পরিচয়কে টার্গেট করে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। তার ভাষায়, “আমি একটি সুনির্দিষ্ট মহলের ‘সুইট রিভেঞ্জ’-এর শিকার।”

এ সময় তিনি জুলাই যোদ্ধা ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন।

উল্লেখ্য, বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এক ফেসবুক পোস্টে ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদের জামিন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “হাইকোর্ট বিচারিক কাজে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান—আইন মন্ত্রণালয়ের সেখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।”

পোস্টে তিনি আরও দাবি করেন, অস্ত্র মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন সহজে হওয়ার কথা নয় এবং প্রভাবশালী আইনজীবীদের ভূমিকা থাকলেই এসব জামিন সহজ হয়। একই সঙ্গে জামিন বাণিজ্যে জড়িতদের সতর্ক করে তিনি বলেন, “বিচারিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে গণহত্যাকারীদের অনুসারীদের সুযোগ দেওয়া যাবে না।”

ভিওডি বাংলা/ আরিফ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সালমান-আনিসুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি আজ
সালমান-আনিসুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি আজ
ড. ইউনূস যদি চায় সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারে: আনিস আলমগীর
ড. ইউনূস যদি চায় সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারে: আনিস আলমগীর
সাংবাদিক আনিস আলমগীরের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
সাংবাদিক আনিস আলমগীরের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর