প্রভাব দেখিয়ে রাস্তা দখলের চেষ্টা, আতঙ্কে বৃদ্ধ পরিবার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের বড় কালীসিমা গ্রামে চলাচলের রাস্তা জবরদখল ও অবৈধ ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। আদালতের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও প্রভাব খাটিয়ে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিল্লাল মিয়া নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী হুরুন আলী (৭৩) পিতা—মৃত আব্দুর রহমান জানান, তিনি পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত ১৬ শতক ভিটি জমির মধ্যে ২০০৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর ৩ শতক জমি বিল্লাল মিয়া ও তার সহোদর ভাই হামদু মিয়ার কাছে এবং আরও ২.৫০ শতক জমি তার ভাতিজা আবুল কালামের কাছে সাফ কবলা দলিলমূলে বিক্রি করেন। জমি বিক্রয়ের সময় নিজ বাড়িতে যাতায়াতের জন্য ৬ ফুট প্রশস্ত একটি চলাচলের রাস্তা রেখে জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়, জমি ক্রয়ের পর থেকেই বিল্লাল মিয়া ও হামদু মিয়া ওই চলাচলের রাস্তা নিজেদের সম্পত্তি দাবি করে দখলের পায়তারা শুরু করেন। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বিরোধ সৃষ্টি হলেও কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ নভেম্বর ২০২৫ সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে অভিযুক্তরা হুরুন আলীর বাড়ির চলাচলের রাস্তার সীমানা অতিক্রম করে সেখানে ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে খুঁটি স্থাপন করে। এ সময় হুরুন আলী, তার স্ত্রী আছমা বেগম (৫৫) এবং পুত্রবধূ সুমা বেগম (৩৫) বাধা দিলে অভিযুক্তরা হাতে থাকা শাবল ও কোদাল নিয়ে হামলার জন্য তেড়ে আসে বলে অভিযোগ করা হয়। স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে সে সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়।
পরবর্তীতে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। গত ২৪ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিএস ৩৫৫৫ দাগে ১৪ শতক এবং কারিশমা মৌজার ৬৩ নম্বর বিএস খতিয়ানে ১৪ শতাংশ জমি হারুন মিয়া বিল্লাল মিয়ার কাছে বিক্রি করলেও, বিল্লাল মিয়া তার ক্রয়কৃত জমির সীমা অতিক্রম করে হুরুন আলীর বাড়ি থেকে বের হওয়ার একমাত্র চলাচলের রাস্তার ওপর ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
অভিযোগটি আমলে নিয়ে আদালত একই দিন সকল প্রকার নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেন এবং আগামী ১১ জানুয়ারি ২০২৬ তারিখে উভয় পক্ষকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ জারি করেন।
তবে আদালতের ওই নিষেধাজ্ঞা জারির পরও তা উপেক্ষা করে বিল্লাল মিয়া ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে আদালত অবমাননার গুরুতর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিল্লাল মিয়া ও তার স্ত্রীর ভাই বাংলাদেশ পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে কর্মরত। স্থানীয়দের দাবি, ওই আত্মীয়তার প্রভাব ও পুলিশের ‘পাওয়ার’ দেখিয়ে আদালতের নির্দেশ অমান্য করেই জোরপূর্বক নির্মাণকাজ চালানো হচ্ছে।
ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, আদালতের আদেশ অমান্য করা শুধু আইন লঙ্ঘন নয়, এটি বিচার ব্যবস্থার প্রতি চরম অবমাননার শামিল। তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং যেকোনো সময় প্রাণনাশসহ বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা করছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সচেতন মহল দ্রুত আদালতের আদেশ কার্যকর, নির্মাণকাজ বন্ধ এবং প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রভাব ব্যবহার করে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে যাচ্ছে কি না—তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভিওডি বাংলা/ আহাদ/ আ







