নেপথ্যে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম
নিরপরাধ ব্যক্তি হিসেবেই দেশে ফিরছেন তারেক রহমান

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর নির্বাহী আদেশে মামলা প্রত্যাহারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রস্তাব দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় নিজেকে মামলামুক্ত করতে আইনি পথই বেছে নেন তিনি। দেশের কোনো আদালতে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা না থাকায় প্রায় ১৮ বছর নির্বাসিত জীবন শেষে নিরপরাধ ব্যক্তি হিসেবেই দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। যদিও এর নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘ আইনি লড়াই ও রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস।
মইনুল রোডের বাসা থেকে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেফতার করা হয় বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানকে। এরপর অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে চোখ বেঁধে ১৮ ঘণ্টা অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর। ওই বছর ২৮ নভেম্বর আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অমানবিক নিপীড়নের বর্ণনা তুলে ধরেছিলেন তিনি।
রিমান্ড, নির্যাতন, ৫৫৪ দিন বা ১৮ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিন নিয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে যান তারেক রহমান। লন্ডনে যাওয়ার পরও তার ওপর থামেনি মামলার খড়গ। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৩টি এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে ৭২টি মামলা হয়। এর মধ্যে অন্তত ৫টি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদ সাজা দেয়া হয় তাকে। এমনকি গণমাধ্যমেও তার বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞাও দেয়া হয় আদালতের মাধ্যমে।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর একে একে সব মামলা থেকে খালাস পান তারেক রহমান। বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, নির্বাহী আদেশে মামলা থেকে মুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয় অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু সেটি গ্রহণ না করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলামুক্ত হন তারেক রহমান।
দলটির আইনজীবীরা আরও জানান, তারেক রহমান নিরপরাধ ব্যক্তি হিসেবেই দেশে ফিরছেন। যদিও এর নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘ আইনি লড়াই ও রাজনৈতিক সংগ্রাম।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, মামলাগুলো প্রত্যাহারের ব্যাপারে সরকারও তাকে (তারেক রহমান) প্রস্তাব দিয়েছিল। তার একজন অন্যতম আইনজীবী হিসেবে আমাকে তিনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন যে, সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে চাইলেও বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মামলা প্রত্যাহারের পরে সবশেষ নামটা যেন তার থাকে। আইন, আদালত ও সংবিধানের প্রতি তার যে শ্রদ্ধা, সেটা বাংলাদেশে দৃষ্টান্ত। তিনি চাইলেই মামলা প্রত্যাহারের প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারতেন। কিন্তু সেটা তিনি করেননি। তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় প্রতিটি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।
‘তারেক রহমান সম্পূর্ণ নিরপরাধ মানুষ হিসেবে দেশে প্রত্যাবর্তন করবেন। জাতি তার জন্য অপেক্ষা করছে। জাতীয় স্বার্থে তিনি প্রত্যাবর্তন করছেন’, যোগ করেন এই আইনজীবী।
আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, তিনি (তারেক রহমান) যখন বাংলাদেশ ত্যাগ করেছিলেন, তখন তার অবস্থাটা কী ছিল, সেটা একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায়। তার হাত-পা ভেঙে দেয়া হয়েছিল। তার মেরুদণ্ডের হাড় পর্যন্ত ভেঙে দেয়া হয়েছিল। সেই সময় চিকিৎসার জন্য তার বিদেশে যাওয়া ছাড়া আর কোনও পথ ছিল না। বিদেশেও তিনি আইনগতভাবেই গিয়েছিলেন, পালিয়ে যাননি।
প্রায় ১৮ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশের মাটিতে পা রাখতে যাচ্ছেন তারেক রহমান। অংশ নেবেন জাতীয় নির্বাচনে। দেশের রাজনীতিতে যখন বিশৃঙ্খলা, বিভাজন তখন তার নেতৃত্বে গণতন্ত্র ইতিবাচক ধারায় ফিরবে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ




