১৭ বছর পর তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন:
নেতৃত্ব-ঐক্য ও গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, শিক্ষাবিদ ও দলীয় নেতাদের মতে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধার এবং জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তারেক রহমান প্রায় ১৮ মাস কারাভোগ করেন। ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য তিনি সপরিবারে যুক্তরাজ্যে চলে যান। দীর্ঘদিন পর তার দেশে প্রত্যাবর্তন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
রাজনৈতিক মহল আশাবাদী তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন দেশকে নতুন দিশা দেখাবে, রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাবে এবং জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারের নতুন আশা জাগাবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘এইবার দেশে ফিরছেন এমন একজন নেতা, যিনি দেশের নেতৃত্ব দেবেন। যারা একসময় তার কট্টর সমালোচক ছিলেন, তারাও এখন তার প্রশংসা করছেন। এটি প্রমাণ করে যে তারেক রহমানের ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগানটি জনগণ গ্রহণ করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠন সম্ভব হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী বলেন, ‘তারেক রহমানের আগমন দেশের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা। তার প্রত্যাবর্তনের ফলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে দেশের বর্তমান এলোমেলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে এমন প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন মনে করেন, তারেক রহমান দেশে ফিরে সরাসরি দলকে নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ করবেন, যা এতদিন অনুপস্থিত ছিল। বিদেশে থাকার সময় নেতাকর্মীরা অনেকটাই অনুপ্রেরণাহীন ছিলেন। তার প্রত্যাবর্তনে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষও স্বস্তি বোধ করবে যে একজন নেতৃত্বদাতা দেশে ফিরছেন।
তিনি জানান, জাতির সংকটকালে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯৭১), জিয়াউর রহমান (১৯৭৫-এর পর) এবং বেগম খালেদা জিয়া (১৯৯১)। বর্তমান সময়েও জাতির স্বার্থে ঐক্যের রাজনীতির নেতৃত্ব প্রয়োজন। সেই প্রেক্ষাপটে তারেক রহমান ধীরে ধীরে ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠছেন। তার উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে; সেই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের সক্ষমতাই ভবিষ্যতে তার নেতৃত্বের সাফল্য নির্ধারণ করবেন।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও রাজনীতি বিশ্লেষক মোবাশ্বের হোসেন টুটুল বলেন, ‘উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতিনিধিত্বকারী নেতৃত্ব হিসেবে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশসহ পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘মায়ের অসুস্থতা, নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের চাপ এই সবকিছু মিলিয়ে তাকে একটি জটিল ও মিশ্র বাস্তবতার মধ্য দিয়ে এগোতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান, উগ্রপন্থী রাজনীতির উত্থানের ঝুঁকি মোকাবিলা, ভঙ্গুর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন এবং চাপের মুখে থাকা অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে হবে তারেক রহমানকে। উন্নত দেশে দীর্ঘদিন বসবাসের অভিজ্ঞতা যদি তিনি বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রয়োগ করতে পারেন, তবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে একটি আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বে পরিণত হতে পারেন।’
ভিওডি বাংলা /জা




