• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

বিদেশি মিডিয়া

তারেক রহমানের দেশে ফেরা

ভিওডি বাংলা ডেস্ক    ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫২ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

১৭ বছরের বেশি সময় পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে তার ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা। বিষয়টি নিয়ে শুধু দেশেই নয়, সরব আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোও।

এনিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক বিশেষ প্রতিবেদন লিখেছে। প্রতিবেদনের শিরোনাম- ‘নির্বাসন থেকে ফিরছেন জিয়া–পুত্র, বাংলাদেশের জন্য তারেক রহমানের গেমপ্ল্যান কী?’

প্রতিবেদনে তারেক রহমান কীভাবে দেশ পরিচালনা করতে চান, তার রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে একাধিক ভাষণ ও প্রকাশ্য বক্তব্যে তারেক রহমান নিজেই এসব রূপরেখা তুলে ধরেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপিকে ব্যাপকভাবে এগিয়ে থাকা দল হিসেবে দেখা হচ্ছে। দলটি জয়ী হলে তারেক রহমান দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চাপের কঠিন সময়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন তিনি।

দেশে ফেরার পর, শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারেক রহমান প্রথমে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। সেখান থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। ২৭ ডিসেম্বর তার ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)–সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার কথা রয়েছে— যা প্রশাসনিকের পাশাপাশি প্রতীকী গুরুত্বও বহন করে। এছাড়া শহীদ ওসমান বিন হাদির কবর জিয়ারত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিএনপি–নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে তিনি যে পররাষ্ট্রনীতি দেখতে চান, তা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তারেক রহমান। মে মাসে এক বক্তব্যে, নির্বাচন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি নির্বাচনি ম্যান্ডেট ছাড়া মুহাম্মদ ইউনূসের দীর্ঘমেয়াদি পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

দলের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থই সব বাহ্যিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে থাকবে। তিনি স্পষ্ট করে দেন, ঢাকা রাওয়ালপিন্ডি বা নয়াদিল্লি—কারও সঙ্গেই ঘনিষ্ঠভাবে জোটবদ্ধ হবে না।

এই অবস্থান বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পথরেখা থেকে স্পষ্টভাবে ভিন্ন। ডা. মুহাম্মদ ইউনূস সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তুলনায় ভিন্ন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেছেন। হাসিনা ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চীনের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগ রাখতেন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতেন। বিপরীতে ইউনূস ইসলামাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন—যার ফলে বহুজনের মতে ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষতি হয়েছে।

ভারতের আরেকটি সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুস্থান টাইমসের শিরোনাম-‘ কে এই তারেক রহমান? খালেদা জিয়ার নির্বাসিত পুত্র ফিরছেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬০ বছর বয়সি তারেক রহমান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সন্তান। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উত্তরসূরি। ২০০৮ সাল থেকে তারেক রহমান লন্ডনে বসবাস করছেন। দেশে তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ একাধিক মামলায় দণ্ডাদেশ ছিল, যার মধ্যে শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্রসংক্রান্ত একটি মামলাও অন্তর্ভুক্ত। তবে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর তিনি সব অভিযোগ থেকে খালাস পান, ফলে তার দেশে ফেরার পথে থাকা আইনি বাধাগুলো দূর হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তারেক রহমান সাম্প্রতিক বক্তব্যে ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতির কথা তুলে ধরে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, দুর্নীতিবিরোধী সংস্কার, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করা এবং অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারেক রহমানের সাম্প্রতিক সবচেয়ে আলোচিত হস্তক্ষেপগুলোর একটি ছিল পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে। মে মাসে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতির কথা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের শিরোনাম – ‘বাংলাদেশে তারেক রহমানকে সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা হচ্ছে, নির্বাচনের আগে নির্বাসন শেষে দেশে ফিরছেন।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার প্রায় ১৭ বছর নির্বাসন শেষে দলের নেতা তারেক রহমানকে দেশে স্বাগত জানাতে ৫০ লাখ সমর্থক জড়ো করার লক্ষ্য নিয়েছে বিএনপি। ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনের আগে একে শক্তি প্রদর্শনের অংশ ও তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী পদে শীর্ষ সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে।

৬০ বছর বয়সি তারেক রহমান অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাবে দলটি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, লন্ডন থেকে তার প্রত্যাবর্তন এমন সময়ে হচ্ছে, যখন গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর বিএনপি রাজনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। সংক্ষিপ্ত অন্তর্বর্তী সরকার ব্যতীত ১৯৯১ সাল থেকে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা পালাক্রমে ক্ষমতায় ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের ডিসেম্বরের এক জরিপে দেখা গেছে, বিএনপি সংসদে সর্বাধিক আসন পেতে যাচ্ছে, যেখানে ইসলামপন্থি জামায়াতে ইসলামি দলও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে। নির্বাচনে নিষিদ্ধ হওয়া শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ অস্থিরতার হুমকি দিয়েছে, যা নিয়ে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে এতে ভোট প্রক্রিয়া বিঘ্ন হতে পারে।

বিএনপি কর্মকর্তারা জানান, তিনি বিমানবন্দর থেকে সরাসরি সংবর্ধনা স্থলে যাবেন এবং এরপর মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

শেখ হাসিনার পতন ঘটানো যুব আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।

সূত্র: এনডিটিভি, রয়টার্স, দ্য হিন্দুস্থান টাইমস

ভিওডি বাংলা/ এমএম

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বিমান দুর্ঘটনায় লিবিয়ার সেনাপ্রধানসহ নিহত ৭
বিমান দুর্ঘটনায় লিবিয়ার সেনাপ্রধানসহ নিহত ৭
ভারত বাংলাদেশে নজর দিলে জবাব দেবে পাকিস্তান: কামরান
ভারত বাংলাদেশে নজর দিলে জবাব দেবে পাকিস্তান: কামরান
মেক্সিকান নৌবাহিনীর বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ৫
মেক্সিকান নৌবাহিনীর বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ৫