• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে তারেক রহমান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক    ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৭ এ.এম.
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি-সংগৃহীত

মা আদর করে ‘পিনু’ নামে ডাকলেও তাঁর প্রকৃত নাম তারেক রহমান। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ আর এই তারেক রহমানের ভাগ্য যেন একই সুতায় গাঁথা। প্রিয় দেশমাতৃকা আর তাঁর জীবনে একই রকম উত্থান-পতন, চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চলা পথ। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ সন্তান তারেক রহমান। সাড়ে ১৫ বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। সবার অনুরোধে বাবার গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) হাল ধরেন মা খালেদা জিয়া। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের মঈনুল রোডের বাড়িতে ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো ছিলেন তারেক রহমানের খেলার সাথি।

দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র, বিগত ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সরকার এবং শেখ হাসিনা সরকারের আমলে চরম নির্যাতন-নিপীড়নের জেরে ১৭ বছর নির্বাসিত জীবনে থাকতে বাধ্য হন তারেক রহমান। এ সময় খেলার সাথি ছোট ভাই কোকোকে চিরতরে হারান। স্মৃতিবিজড়িত ক্যান্টনমেন্টের বাড়িও হারাতে হয় হাসিনা-সরকারের রোষানলে পড়ে। লন্ডনে নির্বাসিত জীবন কাটানোর সময় তারেক রহমান দেখতে পান তার মা খালেদা জিয়ার ওপর শেখ হাসিনা সরকারের চরম নির্যাতন। এ সময়কালেই ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ দলের অসংখ্য নেতাকর্মী গুম, খুন, পঙ্গুত্ব বরণ করেন, গ্রেপ্তার হন লাখো কর্মী-সমর্থক।

কিন্তু কোনো নির্যাতন-নিপীড়নই তারেক রহমানের মনোবলকে ভাঙতে পারেনি। যুক্তরাজ্য থেকেই তিনি যখন যে কৌশল গ্রহণ করা উচিত, তা-ই করেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারেক রহমান। কিন্তু ঢাকায় থাকা কিছু নেতার রহস্যজনক ভূমিকায় সেই আন্দোলন স্থগিত করা হয়, যা নিয়ে এখনও আলোচনা চলে দলের ভেতরেই। অনেকেই মনে করেন তারেক রহমানের ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি পথ চললে অনেক আগেই শেখ হাসিনার পতন ছিল অনিবার্য।

তবে কোনো নেতিবাচকতাই তারেক রহমানকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে সময়-সুযোগ খুঁজছিলেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে রাজনীতির কেন্দ্রে চলে আসেন গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মূল কারিগর তারেক রহমান। তাকে বরণ করে নিতে এখন গোটা দেশ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আজ সেই অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আওয়ামী লীগ তুমুল রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা ছড়ায়। ঘোষণা দিয়ে লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে নেমে প্রকাশ্যে ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যা করে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। ওয়ান-ইলেভেন নামে এ সরকার পরিচিত। এ সময় দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তারেক রহমানকে। তার ওপর চলে চরম নির্যাতন-নিপীড়ন। গ্রেপ্তারের পর র?্যাব-এর বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং হেলমেট পরিয়ে ঢাকার একটি আদালতে তোলা হয় তাকে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়। সে সময় নির্যাতনের জেরে এমন অবস্থা হয়েছিল যে, তারেক রহমানের মতো একজন টগবগে তরুণ ঠিকমতো দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছিলেন না। রিমান্ডে তারেক রহমানের ওপর চরম নির্যাতন করে তার শরীরের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়। বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদও বলছেন, তিনি তার গবেষণার জন্য বিভিন্ন পক্ষের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছিলেন যে তারেক রহমানকে সত্যিকার অর্থেই নির্যাতন করা হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল তখন তার মা খালেদা জিয়াকে দেশত্যাগে বাধ্য করা। আঠারো মাস কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য মুক্তি পান তারেক রহমান। আদালতের নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে পরিবারের সদস্য স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও শিশুকন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা ছাড়েন তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সতেরো বছরের বেশি সময় লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকার পর শেষ পর্যন্ত আজ বৃহস্পতিবার দেশে ফিরছেন। এর মধ্য দিয়ে তাকে ঘিরে দলের ভেতরে ও বাইরে তৈরি হওয়া উদ্বেগেরও অবসান ঘটতে যাচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, তারেক রহমান তার দেশে ফেরার বিষয়ে নিজেই যে উদ্বেগ তৈরি করেছিলেন, তার অবসান ঘটিয়ে দেশে ফেরাটা তার দলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের কাছে অনেকটা ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর মতো। যা দলের জন্য স্বস্তি বয়ে নিয়ে এসেছে বলে মনে করেন তারা। আর এর মাধ্যমে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দল বিএনপি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংগঠিত ও জনপ্রিয় হওয়ার পর আবার নানা সংকট মোকাবিলা করে তাদের বড় সন্তান তারেক রহমানের সরাসরি নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়ার সময়ে পদার্পণ করল।

কিছুদিন আগে, যখন তারেক রহমানের দেশে ফেরার দাবি তুঙ্গে উঠে; তখন তিনি দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয় বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। ফলে তার দেশে ফেরার বিষয়ে খোদ বিএনপির ভেতরেই জেগে ওঠে উেেদ্বগ-উৎকণ্ঠা। যদিও দলের তরফ থেকে আগেই বলা হয়েছিল, তারেক রহমান ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশে ফিরবেন এবং নির্বাচনে দলকে নেতৃত্ব দেবেন। তারেক রহমান তার রাজনৈতিক জীবনে এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে নিজেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন।

জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষে করে আশির দশকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হন। বিএনপির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের সময় আরও অনেক সামরিক কর্মকর্তার পরিবারের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের পরিবারকেও বন্দি করা হয়। তখন তাদের দুই ছেলে তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমানও কার্যত বন্দি ছিলেন।

স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তারেক রহমানও তার মায়ের সঙ্গে রাজপথের আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালে বগুড়া জেলা বিএনপির গাবতলী উপজেলা ইউনিটের সদস্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে সক্রিয় হন আজকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তৎকালীন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এরশাদের সময়ও তারেক রহমানকে হত্যার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। অপশক্তি সব সময়ই দেশপ্রেমিক নেতাদের ভয় পায়। এ কারণেই তারেক রহমানকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।

এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তারেক রহমান বিএনপির হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সে সময় খালেদা জিয়া যে পাঁচটি আসনে নির্বাচন করেছিলেন, তিনিই সেগুলোর দেখভাল করেন। তারেক রহমান দলীয় রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তার ক্যারিশমাতেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ওই (২০০১) নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে প্রতিটি পদক্ষেপে তারেক রহমান সফল হন। এরপর থেকে তাঁকে নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা, বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত শক্তির অপচ্ছায়া সক্রিয় হয়ে উঠে। নির্বাচনের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনকে নিয়ে নানা কাল্পনিক গল্প ছড়ানো হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে হাওয়া ভবন নেওয়া হয়েছিল নির্বাচনী অফিস হিসেবে ব্যবহার করে প্রচার প্রচারণা চালানো ও নির্বাচনী কৌশল নিয়ে কাজ করার জন্য। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তারেক রহমান।

২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের সময়ই দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক চর্চা জোরদার করেন তারেক রহমান। এতে করে নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পুরস্কার স্বরূপ ২০০২ সালের ২২ জুন দলের মধ্যে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ সৃষ্টি করে তাঁকে ওই পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। এমন দায়িত্ব পাওয়ার পর দল গোছানোর কাজে আত্মনিয়োগ করেন তারেক রহমান; তৃণমূলেও যোগাযোগ তৈরি করেন। শুধু তাই নয়, নেতা নির্বাচনে বেছে নেন গণতান্ত্রিক পন্থা। তারেক রহমানের এমন পদক্ষেপ দলের সুযোগসন্ধানী কিছু নেতা মেনে নিতে পারেননি, যাঁরা দলকে কুক্ষিগত করে রাখতে চেয়েছিলেন। এ অংশটি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারেক রহমানের রাজনীতি ধ্বংসের চেষ্টা চালায়। তাঁর বিরুদ্ধে প্রপাগাণ্ডা ছড়াতে কথিত কিছু গণমাধ্যমও হাত করা হয়। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে নানাভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কান ভারী করত এই চক্রটি। যদিও গত ১৭ বছরে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ-অপকর্মের প্রমাণ হাজির করা সম্ভব হয়নি।

২০০৯ সালে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমানকে কাউন্সিলররা সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে ভিত্তিহীন মামলায় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করে বিএনপি। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের মতো ২০১৮ সালে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর তারেক রহমানের প্রতিটি পদক্ষেপ দারুণভাবে সফল হয়। পরাজয়ের শঙ্কায় ওই বছর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট আগের রাতে করতে বাধ্য হয় শেখ হাসিনা সরকার। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানালে ব্যাপক সাড়া পান তারেক রহমান। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন দেশের ৬৩টি রাজনৈতিক দল বর্জন করে। এই নির্বাচনে দেশের ৫ শতাংশ মানুষও ভোট দিতে কেন্দ্রে যাননি। আর ২০১৮ সালে তো ভোট দেওয়ারই সুযোগ রাখেনি আওয়ামী লীগ সরকার। এটাই রাজনীতিবিদ তারেক রহমান হয়ে উঠার বড় গল্প। তিনি এখন দলমত নির্বিশেষে সবার কাছেই প্রিয় একজন মানুষ, একজন অবিসংবাদিত নেতা।

গত ১৭ বছর তারেক রহমানের রাজনীতি বাধাগ্রস্ত করতে নানা অপচেষ্টা করা হয়। এক পর্যায়ে তাঁর বক্তব্য-বিবৃতি প্রচার আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে তারেক রহমান সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় হন এবং ভার্চুয়ালি দলীয় কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে থাকেন। বিএনপি নেতারা বলেন, অল্প দিনের মধ্যে একদিকে তৃনমূলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ এবং অন্যদিকে দলের নীতিনির্ধারণী কাজে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন তারেক রহমান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, তারেক রহমান চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও দলকে সুসংহত রাখতে পেরেছেন এবং এত সব কিছুর পর দলের নেতা হিসেবে তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসা অনেকটা ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর মতো। রাজনীতির যে কানাগলি তা যেমন দেখেছেন, তেমনি এ দেশের সংঘাত ও প্রতিহিংসার রাজনীতির একটি অভিজ্ঞতা তাঁর হয়েছে। সেই রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে তিনি দলের নেতা থেকে সামনে দেশের নেতা হয়ে উঠতে পারেন কি না, সেটিই হবে এখন দেখার বিষয়।

অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, তারেক রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে কখনোই ঝড়ঝঞ্জা থেকে মুক্ত থাকতে পারেননি। এমনকি দেশে ফ্যাসিবাদের পতনের পরও তাঁর দেশে ফেরা নিয়ে কুয়াশা তৈরি হয়েছিল। তিনি নিজেই বলেছেন সব বাধা অপসারিত হয়নি। কিন্তু এর মধ্যেই তিনি তাঁর দলের তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে দলের সাংগঠনিক কাঠামোর নিয়ন্ত্রণ পেতে সবার সমর্থন আদায়ে সক্ষম হন।

তারেক রহমানের সঙ্গে গত এক দশক ধরে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার। তিনি বলেন, তারেক রহমানের চিন্তা ও দর্শন অনেকটাই জিয়াউর রহমানের মতো। ২০০১ সালের পর তিনি তৃণমূলে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তার ভিত্তিতেই তিনি রাজনীতিকে জ্ঞান ভিত্তিক ও উন্নয়নকেন্দ্রিক করার চিন্তা করেন। দেশের প্রতিটি খাত নিয়ে তিনি ওয়াকিবহাল, জানার আগ্রহও তাঁর অফুরান। ফলে আমার মনে হয়, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিএনপি সঠিক নেতৃত্বই পেয়েছে।

লন্ডনে অবস্থান ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ

লন্ডনে অবস্থানকালে তারেক রহমান শুধু রাজনীতিই নয়, নিজের শিক্ষাগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। জানা যায়, তিনি লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে আইন ও সমকালীন রাজনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। এই পড়াশোনা এবং বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে বসবাসের অভিজ্ঞতা তাঁর চিন্তাধারায় পরিবর্তন এনেছে। আগের তুলনায় তাঁর বক্তব্যে এখন অনেক বেশি পরিশীলিত ভাষা, আন্তর্জাতিক রাজনীতির উদ্ধৃতি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন দেখা যায়। তাঁর বক্তব্যগুলোয় এখন অর্থনৈতিক সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকারের বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে। আরও জানা যায়, গত দেড় দশকে তারেক রহমানের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আন্তর্জাতিক মহলে নিজের ও দলের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা। লন্ডনে অবস্থান করার সুবাদে তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। তিনি গতানুগতিক লবিংয়ের চেয়ে ‘পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি’তে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং গণতান্ত্রিক সংকটের কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন। দেশের ফেরার কয়েক মাস আগে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা, বিবিসি বা গার্ডিয়ানের মতো প্রভাবশালী গণমাধ্যমে তাঁর এবং তাঁর দলের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, তিনি কেবল একটি রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরাধিকারী নন, বরং বৈশ্বিক মানদণ্ডের একজন নেতা হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করছেন। এর বাইরে তিনি রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা ও নতুন দর্শন দিয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে সংযম ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। একমাত্র ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু এবং দীর্ঘ সময় প্রবাসে থাকার বন্ধুর সময় তাঁকে মানসিকভাবে আরও দৃঢ় করেছে। তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যেও প্রতিশোধমূলক রাজনীতির চেয়ে জাতীয় ঐক্যের আহ্বানই অধিক দৃশ্যমান, যা তাঁর চারিত্রিক ধৈর্যের পরিচায়কও বটে।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বিএনপির কিছু প্রার্থী পরিবর্তনের ইঙ্গিত
সংসদ নির্বাচন বিএনপির কিছু প্রার্থী পরিবর্তনের ইঙ্গিত
বিজয় দিবস : ঐক্যবদ্ধ করার নতুন শপথ
বিজয় দিবস : ঐক্যবদ্ধ করার নতুন শপথ
এভারকেয়ার ও বাংলাদেশের গতিপথ
এভারকেয়ার ও বাংলাদেশের গতিপথ