লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড
ভয়াল সেই রাতের চার বছর

২৪ ডিসেম্বর বরগুনার উপকূলবাসীর জন্য আরও একটি স্বজন হারানোর শোকের দিন। ২০২১ সালের এই দিনে বরগুনার বহু মানুষ হয়েছিলেন স্বজনহারা। ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর বিকাল ৫টায় ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি।
ভোররাত আনুমানিক ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে ঝালকাঠি জেলার সুগন্ধা নদীতে হঠাৎ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আকস্মিক এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান ৪১ জন যাত্রী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৮ জন মারা যায়।
নিখোঁজ ৩০ জনের মধ্য ১৪ জনের পরিচয় ডিএনএ পরীক্ষায় পাওয়া গেলেও মরদেহ পুড়ে অঙ্গার হওয়ার কারণে ১৬ জনের ডিএনএ আলামত পাওয়া যায়নি। পরিচয় পাওয়া ৩২ জনের পরিবারপ্রতি নৌ-দুর্যোগ তহবিল ট্রাস্টি বোর্ড থেকে দেড় লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া ব্যতীত সরকারের পক্ষ থেকে গত চার বছরে কোনও ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়নি নিহত বা আহতের পরিবারকে।
নিহত ৪৯ জনের মধ্যে ২৫ জনের মরদেহ বরগুনা জেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করে। বাকি ২৪ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে না পাড়ায় বরগুনার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী আবাসন এলাকায় খাকদন নদীর দক্ষিণপাড়ে গণকবরে সমাধিস্থ করা হয়। তবে সেদিন একজনের মরদেহ ঝালকাঠিতে স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছিল।
বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নম্বর দলুয়া ইউনিয়নের গণকবর এলাকার বাসিন্দা ডুম রাসেল বলেন, নিহতদের স্বজনরা কেউ আসেননি সমাধিতে। মাত্র চার বছরেই ভুলে গেছেন তাদের স্বজনদের।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বেইল হাফেজিয়া মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ মো. মাহমুদ মিরাজ বলেন, বাবাকে হারানোর শোক আজও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। বাড়িতে বাবার স্মরণে কোরআন খতম, দোয়া-মোনাজাত করেছি এবং মাদ্রাসায়ও একই আয়োজন করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার সময় হাফেজ মিরাজ, তার বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও শিশুসন্তান একই লঞ্চের যাত্রী ছিলেন। অন্যরা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মরক্ষা করতে পারলেও বৃদ্ধ বাবা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান।
বিগত বছরগুলো বেসরকারি উদ্যোগে এই দিনে সন্ধ্যায় অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলনের আয়োজন করলেও এ বছর চোখে পড়েনি তাদের কার্যক্রম। দিন যতই যাচ্ছে তাদেরকে বরগুনাবাসী ভুলতে শুরু করেছে।
ভিওডি বাংলা/ জাহিদুল ইসলাম মেহেদী/ আ




