গণনেতার ফেরা

ভূমিকা সময় বড় অদ্ভুত। সে কখনো মানুষকে ধুলোয় মেশায়, আবার কখনো ছাই থেকে ফিনিক্স পাখির মতো পুনর্জন্ম দেয়। গত দেড়টি দশক বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে যে নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত, বিতর্ক এবং একই সাথে লক্ষ কোটি মানুষের আবেগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল- তিনি তারেক রহমান। দীর্ঘ ১৮ বছরের নির্বাসন, নিঃসঙ্গতা আর যন্ত্রণার প্রহর গুনে অবশেষে তিনি ফিরছেন।
এই ফেরা কেবল একজন নেতার ঘরে ফেরা নয়; এ যেন এক দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সূর্যোদয়, যা দেখার জন্য কোটি চোখ বছরের পর বছর পথ চেয়ে বসে ছিল। সংগ্রাম ও কণ্টকাকীর্ণ পথ তারেক রহমানের জন্ম এক রাজকীয় ঐতিহ্যে- যাঁর বাবা ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক ও আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, আর মা তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক পথচলা মোটেই মখমলে ঢাকা ছিল না।
২০০৭ সালের সেই ওয়ান-ইলেভেনের ঝোড়ো হাওয়ায় তাঁকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। অমানবিক শারীরিক নির্যাতনে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছিল তাঁকে। রিমান্ডের সেই অন্ধকার প্রকোষ্ঠে তাঁর মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু তারা হয়তো জানত না- শরীরের হাড় ভাঙা গেলেও আদর্শের মেরুদণ্ড ভাঙা অসম্ভব।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবনের মোড় পরিবর্তনকারী কিছু বিশেষ ঘটনাতারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবনের মোড় পরিবর্তনকারী কিছু বিশেষ ঘটনা প্রবাসের নিঃসঙ্গ লড়াই আট হাজার মাইল দূরের লন্ডনের এক নির্জন ফ্ল্যাটে বসে যখন তিনি দেশের মানুষের জন্য পরিকল্পনা করতেন, তখন হয়তো কতবার তাঁর মন কেঁদে উঠেছে বাংলার সোঁদা মাটির ঘ্রাণ নিতে। নিজের ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর নিথর দেহ যখন ঢাকায় নামল, বড় ভাই হিসেবে তার কফিনটা কাঁধ দেয়ার সুযোগটুকুও তিনি পাননি, বলা ভালো সেই সুযোগ তাঁকে দেয়া হয়নি।
মায়ের অসুস্থতা, কারাবাস আর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিটি বিষবাণ তাঁকে সইতে হয়েছে দূর পরবাসে। কিন্তু প্রতিটি আঘাত তাঁকে আরও পরিণত করেছে, আরও ধৈর্যশীল করেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন, নেতৃত্ব কেবল গদি দখল নয়, নেতৃত্ব হলো প্রতিকূলতার মুখে অবিচল থাকা।
দূর থেকেও যিনি সবচেয়ে কাছে প্রযুক্তির কল্যাণে আর মেধার জোরে তিনি গত ১৫ বছর ধরে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, প্রতিটি ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতাকর্মীর সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি লন্ডনে থাকলেও তাঁর কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হতো টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায়।
স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু আর অপপ্রচারের পাহাড় তাঁকে সাধারণ মানুষের মন থেকে মুছে দিতে পারেনি। বরং যত বেশি তাঁকে দূরে রাখা হয়েছে, মানুষের হৃদয়ে তাঁর স্থান তত বেশি গভীর হয়েছে। কর্মীরা তাঁর মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন সেই হারানো সিপাহসালারকে, যিনি বিপদে কখনো মাঠ ছেড়ে পালাননি।
বিজয়ীর বেশে প্রত্যাবর্তন, আজ তিনি ফিরছেন। তবে কোনো করুণার দান নিয়ে নয়, বরং বিজয়ীর বেশে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সত্যকে খুব বেশিদিন ধামাচাপা দিয়ে রাখা যায় না। ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে আজ তিনি যখন বাংলাদেশের আকাশে ডানা মেলবেন, তখন মাটির প্রতিটি কণা শিহরিত হবে।
বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ সেই লাখো মানুষের আনন্দের অশ্রুসজল চোখ বলে দেবে- ‘নেতা, আমরা আপনার অপেক্ষায় ছিলাম’।
উপসংহার তারেক রহমান এখন কেবল বিএনপির নেতা নন; তিনি এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। তাঁর এই ফেরা গণতন্ত্রের ফেরা, মানুষের হারানো অধিকারের ফেরা। ১৮ বছরের বিরহ শেষে যখন তিনি তাঁর মমতাময়ী মায়ের বুকে মাথা রাখবেন, তখন হয়তো মহাকালের ডায়েরিতে লেখা হবে এক অনন্য মহাকাব্যের শেষ লাইন। স্বাগতম হে রাজপুত্র, স্বাগতম হে জননেতা। আপনার অপেক্ষায় আজ আঠারো কোটি হৃৎস্পন্দন একসাথে স্পন্দিত হচ্ছে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
