জানাজা বুধবার দুপুর ২টায় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়
এই শূন্যতার ভারবহন সাধ্যতীত

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অত্যন্ত বেদনাবিধুর অনুভূতি নিয়ে আজ আপনাদের সামনে এসেছি। আজ দুপুর সাড়ে বারোটায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির জরুরী বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের সভাপতিত্বে। এই সভার প্রেক্ষাপট আপনারা জানেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ সকাল ৬ টায় দেশবাসীকে শোকাহত করে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর মৃত্যু শুধু সমগ্র জাতিকে অভিভাবকহীন করেছে এমন নয় বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা আর স্বার্বভৌমত্বের সাথে সমান্তরাল এক নক্ষত্রের বিদায়কে হৃদয়স্থ করতে হচ্ছে দেশবাসীকে। এই বিয়োগ বেদনা নিদারুন, এই শূন্যতার ভারবহন সাধ্যতীত।’
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, সমগ্র জাতি তার রোগমুক্তির জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে যেমন শ্রান্তিহীন ফরিয়াদ করেছে তেমনি বিদায় বেলায় তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনাতেও তাঁরা রয়েছেন ক্লান্তিহীন। আত্মার পরমআত্মীয় বেগম জিয়ার প্রতি দেশবাসীর এই গভীর ভালোবাসার প্রতি স্থায়ী কমিটি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বেগম খালেদা জিয়াকে ভিআইপি মর্যাদা প্রদান, চিকিৎসায় সার্বিক সহায়তা, তাঁর সম্মানে রাষ্ট্রীয় শোক ও ছুটি ঘোষনার জন্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকের সভা বেগম জিয়ার মর্যাদা নন্দিত বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন, দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সুসংহত রাখাসহ এই রাষ্ট্রের বিকাশের প্রতিটি স্তরে তার অসামান্য অবদানের স্মরণ পূর্বক একটি শোক প্রস্তাব গ্রহন করেছে। শোকসন্তপ্ত পরিবারকে এই শোকবহনের শক্তি প্রদানের প্রত্যাশার সাথে বেগম জিয়ার রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়। তাঁর জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত দেশের বরেণ্য চিকিৎসকরা ক্লান্তিহীন সেবার এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সভা তাদের অবদানকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করেছে। দেশের সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তিত্ব প্রয়াত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় দানের সকল সহযোগিতা প্রদানে সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আমরা দলীয়ভাবেও অনুরূপ সিদ্ধান্তের সাথে সমন্বয় করে আমাদের কর্মসূচি প্রদান করেছি। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল বাদ জোহর জাতীয় সংসদ প্লাজায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাযা অনুষ্ঠিত হবে তাঁর জানাজায় জনসমাগমের বিশালতা বিবেচনায় সমগ্র মানিক মিয়া এভিনিউ, মিরপুর রোড, ফার্মগেট এলাকাতেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকবে।‘
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সকল রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালন করা হবে। জানাজা শেষে সংসদ এলাকার জিয়া উদ্যানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার কমপ্লেক্সে তাঁর দাফন সম্পন্ন হবে। এই সকল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় সংযম, শৃঙ্খলা আর ভাব গাম্ভীর্য বজায় রাখতে সর্বস্তরের জনগণকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দলীয়ভাবে আগামী ৭ দিন শোক পালনের পাশাপাশি দলের মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বিদেশি মিশন, দূতাবাস ও অফিস সমূহের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের সুবিধার্থে গুলশানের চেয়ারপার্সন কার্যালয় ও পল্টনস্থ দলীয় প্রধান কার্যালয়ে আজ থেকে পরবর্তী তিন দিন পর্যন্ত শোকবই খোলা থাকবে। এরপরে অন্য কোন কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত হলে যথাসময়ে সেটা আপনাদের অবহিত করা হবে।
তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের উজ্জ্বলতম নাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের অধিকার, কল্যাণ আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন আপোষহীন প্রতিচ্ছবির প্রতি তাঁর বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন আপোষহীন। জাতির ক্রান্তিলগ্নে তাঁর বিদায় শোককে শক্তিতে পরিণত করে তাঁর আজন্ম অবরুদ্ধ গণতন্ত্র আর ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশায় আমরা যদি আমাদের শপথ থেকে সামান্যতম বিচ্যুত হই তাহলে ইতিহাসের কাছে আমাদের দায়মুক্তি ঘটবে না। দেশনেত্রীর প্রত্যাশাকে সম্মান জানিয়ে গণতন্ত্র আর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশবাসীর প্রতি ইস্পাত দৃঢ় ঐক্যের আহবানের মাধ্যমে শেষ করছি।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ






