দুঃখের পাষাণে গড়া শুভ্র চন্দনের মতো খালেদা জিয়া: আলাল

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার কথা বলতে গেলে, বলতে হয় তিনি ছিলেন দুঃখের পাষাণে গড়া শুভ্র সুবাসী চন্দনের মতো এক মহীয়সী ব্যক্তিত্ব। চন্দনের যেমন নিজস্ব সুবাস থাকে, যা আপনা আপনি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি বেগম খালেদা জিয়া তাঁর ব্যক্তিত্ব, আচার-আচরণ, সংযত ভাষা ও পরম সহিষ্ণতার মাধ্যমে মানুষের মাঝে গণতন্ত্রের প্রতি এক গভীর আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেছিলেন। সে কারণেই তিনি ছিলেন অনন্য, আলাদা এক আসনে অধিষ্ঠিত।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) নয়াপল্টন বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভিওডি বাংলাকে তিনি এসব কথা বলেন।
আলাল বলেন, জীবদ্দশায় তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন বাংলাদেশই আমার শেষ ঠিকানা। আমি এই মাটি ছেড়ে কোথাও যাব না। এমন সময়েও যখন অনেক নেতা-নেত্রী দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তিনি যাননি। শত নির্যাতন, অত্যাচার ও চাপের মধ্যেও তিনি দেশেই থেকেছেন। তাঁর এই দৃঢ় অবস্থান তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়েও প্রমাণিত হয়েছে। চাইলে তিনি বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারতেন, কাতার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসতে পারত; কিন্তু তিনি যাননি। আল্লাহ তায়ালাই প্রমাণ করে দিয়েছেন যেহেতু তিনি বারবার বলতেন, ‘আমি এই মাটি ছেড়ে কোথাও যাব না’ তাই এই দেশেই তাঁর চিকিৎসা হয়েছে এবং এই দেশের মাটিতেই তাঁর চির ঠিকানা হয়েছে।
যুবদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার অনাড়ম্বর জীবনযাপন, অন্যকে আক্রমণ না করার শালীনতা, ভিন্নমতের মানুষকেও একত্র করার মাধুর্য ও ব্যক্তিত্ব এসবই বাংলাদেশের মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী স্মরণ করবে। আজ শুধু তাঁর দল নয়, শুধু তাঁর মতের মানুষ নয় সকল মত ও পথের মানুষ একত্র হয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার ডালি অর্পণ করছে।
তিনি বলেন, আজ এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, ইউরোপসহ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে তাঁর প্রয়াণে শোকবার্তা আসছে। আর গোটা বাংলাদেশ যেন অশ্রুসিক্ত। বাংলাদেশের সব পথ মতের মানুষের অশ্রু যদি একত্র করা যেত, তবে তিস্তা, মেঘনা, পদ্মা, যমুনা, আড়িয়াল খাঁ, ধানসিঁড়ি, বুড়িগঙ্গার সব পানি মিলিয়েও এক বিশাল মোহনার সৃষ্টি হতো যা একসময় মহাসমুদ্রে মিলিত হতো।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বলেন, আজ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন। তবে তাঁর দেখানো পথে গণতান্ত্রিক উত্তরণের যে নবযাত্রা শুরু হয়েছে, সেই যাত্রা তারেক রহমানের নেতৃত্বে এবং অন্যান্য সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারলেই তাঁর প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো হবে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ছোট ছোট দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করেছেন। যুদ্ধরত সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের খোঁজ নিয়েছেন, সাহস যুগিয়েছেন এবং সবাইকে মেজর জিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। স্বাধীনতার সেই দুর্দিনে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর তিনি গৃহবধু থেকে রাজনীতিতে এসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। স্বামীর প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী আদর্শকে উচ্চাসনে রাখতে তিনি নিজেই নেতৃত্বের ভার কাঁধে তুলে নেন। রাজনীতিতে এসে তিনি আরাম-আয়েশের জীবন বেছে নেননি; বেছে নিয়েছেন রাজপথ, লাঠি, টিয়ার গ্যাস, আন্দোলন-সংগ্রাম, সততা ও আপসহীন চরিত্র।
তিনি বলেন, এরশাদ পতনের পর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও তিনি বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। একইভাবে জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করে তিনি জাতিকে একটি যুগান্তকারী ব্যবস্থা উপহার দেন যাকে আজও মানুষ সর্বোত্তম পদ্ধতি হিসেবে স্বীকার করে।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, নারী শিক্ষা, যুব উন্নয়ন, প্রবাসী কল্যাণ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি দক্ষতা ও দূরদর্শিতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
তিনি বলেন, ‘রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবদান বাংলাদেশের মানুষ গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে চিরকাল স্মরণ করবে।’
ভিওডি বাংলা/সবুজ/এম



