• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

‘আপসহীন’ নেত্রীর অন্তিম যাত্রার প্রস্তুতি

মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক    ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১০ এ.এম.
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি- সংগৃহীত

একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক মহাকাব্যের শেষ পাতাটি আজ উল্টে গেল। মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোঁটার আগেই নিভে গেছে বাংলার রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বুধবার বাদ জোহর রাজধানী মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত হবে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা। এরপর চন্দ্রিমা উদ্যানে (জিয়া উদ্যান) শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পাশেই চিরঘুমে শায়িত হবেন তিনি। 

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে শুরু করে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়- প্রতিটি মোড়ে মানুষের দীর্ঘশ্বাস। প্রিয় নেত্রীর মরদেহ যখন হাসপাতাল থেকে জাতীয় সংসদ ভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হবে, তখন সেই যাত্রাপথে লাখো মানুষের ঢল নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জানাজা উপলক্ষে ইতোমধ্যে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, যেন সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রিয় নেত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারেন।

বুধবার দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদের পশ্চিম প্লাজা সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই সেই চত্বর, যেখানে বহুবার তিনি জনগণের অধিকারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। সেখানেই তিনি উপস্থিত হবেন নিথর দেহে, সাদা কাফনে মোড়া হয়ে। 

জানাজায় অংশ নেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বিদেশি কূটনীতিকরা। তবে সব ছাড়িয়ে বড় হয়ে উঠবে সেই কোটি কোটি সাধারণ মানুষের উপস্থিতি, যাঁদের কাছে খালেদা জিয়া ছিলেন এক ‘মা’ সমতুল্য অভিভাবক।

জানাজা শেষে খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হবে চন্দ্রিমা উদ্যানে। সেখানে তাঁর স্বামী, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে। জীবনের দীর্ঘ লড়াই, কারাবাস, একাকীত্ব আর অসুস্থতার সব গ্লানি মুছে দিয়ে তিনি ফিরে যাচ্ছেন তাঁর জীবনসঙ্গীর পাশে। 

দাফনের প্রতিটি ধাপে নিশ্চিত করা হবে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। দেশনেত্রীর শেষ বিদায় যেন সুশৃঙ্খল হয়, সেজন্য মোতায়েন থাকবে ১০ হাজারেরও বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও থাকবেন নিরাপত্তার দায়িত্বে। তবে এই কঠোর নিরাপত্তার চেয়েও বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে মানুষের আবেগ। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষও বিশেষ সার্ভিস চালু করেছে, যেন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে জানাজায় শরিক হতে পারেন।

খালেদা জিয়ার মৃত্যু কেবল একটি দলের নেত্রীর বিদায় নয়, এটি একটি আপসহীন সংগ্রামের সমাপ্তি। যিনি কখনো মাথা নত করেননি, যিনি কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠেও গণতন্ত্রের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখার স্বপ্ন দেখতেন, আজ তিনি সব পিছুটান ছিঁড়ে চলে যাচ্ছেন।

দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ আজ স্বীকার করছেন, বাংলার রাজনীতিতে খালেদা জিয়া ছিলেন এমন এক স্তম্ভ, যার অভাব পূরণ হবার নয়। তার মায়াভরা সেই চিরচেনা হাসি আর জনসভায় ‘খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলে বিদায় নেওয়া সেই দৃশ্য এখন কেবলই স্মৃতি।

বুধবার যখন চন্দ্রিমা উদ্যানের মাটি তাঁর গায়ে দেওয়া হবে, তখন একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে ঠিকই, কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ আর সাহসিকতার গল্পগুলো কোটি মানুষের হৃদয়ে অম্লান হয়ে থাকবে। বাংলার আকাশ-বাতাস যেন এক করুণ সুরে গাইছে- ‘বিদায় দেশনেত্রী, বিদায় মা’। 

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সহযোদ্ধাদের স্মৃতিতে খালেদা জিয়া
সহযোদ্ধাদের স্মৃতিতে খালেদা জিয়া
মায়ের মরদেহের পাশে কোরআন তেলাওয়াত করছেন তারেক রহমান
মায়ের মরদেহের পাশে কোরআন তেলাওয়াত করছেন তারেক রহমান
অন্তর্মুখী গৃহবধূ থেকে রাজপথের অগ্নিকন্যা
অন্তর্মুখী গৃহবধূ থেকে রাজপথের অগ্নিকন্যা