• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

বিদায় ২০২৫, স্বাগতম ২০২৬

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক    ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৭ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিম আকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে ডুবছে ২০২৫ সালের শেষ সূর্য। পেছনে পড়ে রইল সাক্ষী হয়ে থাকা বহু ভাঙা-গড়ার এক উত্তাল অধ্যায়। জীবনের সংক্ষিপ্ত পরিসরে বাংলাদেশের মানুষ আজ আরো একটি নতুন বছরে পা রাখছে; তবে এই পথচলা নিছক সময়ের আবর্তন নয়, বরং দু’চোখ ভরা এক বুক বড় স্বপ্নের। ২০২৫ সালের দিনগুলো ছিল প্রতিরোধ, হৃৎস্পন্দন থমকে দেওয়া শোক আর এক অদম্য জাতির মাথা নত না করার অমর উপাখ্যান।

বছরের বিদায়বেলায় এক শোকাতুর পরিবেশ গ্রাস করেছে পুরো দেশকে। গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মহাপ্রয়াণে কেঁদেছে কোটি প্রাণ। এ দেশের মানুষের হৃদয়ে শ্রদ্ধার যে আসনে তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন, তার প্রমাণ মিলেছে বিদায়বেলার সেই অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায়। মানুষ তাদের প্রিয় নেত্রীকে বিদায় জানিয়েছে একরাশ গভীর মমতা আর পরম শ্রদ্ধায়।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যায় এ শোকের কালো মেঘ আরো ঘনীভূত হয়। এই হত্যাকাণ্ড স্তব্ধ করে দিয়েছে আরেকটি নীরব গল্পকে। যে গল্প বলে, মানুষ আর অপূর্ণ প্রতিশ্রুতির ছায়ায় মাথানত করতে রাজি নয়।

তবুও এই শোকের দরিয়ায় ভাসতে ভাসতে জাতি আজ এক অমোঘ গর্বে বুক বাঁধছে। অগণিত মানুষের সেই আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি; বরং শহীদদের সেই রক্ত আজ এক নতুন যুগের শিকড়ে প্রাণ সঞ্চার করেছে। ক্ষতবিক্ষত হয়েও বাংলাদেশ আজ এক মহাবিপ্লবের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। এ দেশের মাটি আজ সমৃদ্ধ হয়েছে এক নতুন পুনর্জাগরণের অঙ্গীকারে।

সব ভাঙন আর দুর্বলতা সত্ত্বেও ২০২৫ কোনো আত্মসমর্পণের বছর নয়, বরং জাগরণের বছর। তবে, রূপান্তরের পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ হয় না, এই বিপ্লবও তার চরম মূল্য নিয়েছে। শূন্য হয়েছে বহু মায়ের কোল, ঘরগুলো আজ প্রিয়জনের অনুপস্থিতিতে হাহাকার করছে। মানুষের স্বপ্নগুলো থমকে গিয়েছিল কিছুকাল, জীবিকার চাকা হয়েছিল স্থবির। শরীরের দৃশ্যমান ক্ষত আর মনের গহীনে জমে থাকা অদৃশ্য দাগগুলো আজ জাতীয় সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০২৫-এর সেই ক্ষতগুলো মুছে যাবে না ঠিকই, তবে সেগুলো বয়ে বেড়াবে এক অপরাজেয় সাহসিকতার পদক হিসেবে। পুরোনো ঘুণে ধরা ব্যবস্থার প্রতিটি ফাটল আজ হয়ে উঠেছে নতুন সৃষ্টির উর্বর ভূমি। যেখানে একসময় দুর্নীতির রাজত্ব ছিল, সেখানে আজ ন্যায়বিচারের চারা রোপিত হচ্ছে; যেখানে ছিল হতাশা, সেখানে ডানা মেলছে নতুন সুযোগ; আর বিভেদের বিষবাষ্প সরিয়ে জেগে উঠছে এক অভূতপূর্ব ঐক্য।

দেশ গড়ার এই বিশাল কর্মযজ্ঞ কেবল সরকারের কাঁধেই বর্তায় না। এ দেশের মানুষ আজ নিজের ভাগ্যের চাবিকাঠি নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজ, যারা ছিল এই গণজাগরণের হৃৎস্পন্দন, তারাই আজ আগামীর আধুনিক স্থাপত্যের মূল কারিগর হিসেবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশৃঙ্খল আর কণ্টকাকীর্ণ হলেও ২০২৫ সালটি ছিল এই মহাকাব্যের এক অপরিহার্য অধ্যায়।

২০২৬ সালের ভোরের প্রথম আলো যখন দিগন্তে উঁকি দেবে, তখন তাকে মনে হবে দীর্ঘ বিরহের পর এক পরম মমতাময়ী সন্ধি। যে রাজপথগুলো একসময় মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হতো, সেখানে এখন পড়বে আগামীর স্বপ্নদ্রষ্টা আর কারিগরদের শান্ত অথচ দৃঢ় পদক্ষেপ।

২০২৬ সালের এই উদয় কেবল ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টানো নয়; এটি একটি জাতির পুনর্জন্ম। এটি এক পবিত্র অঙ্গীকার যে, উত্তাল সময়ের শিক্ষাগুলোই হবে আগামীর পথপ্রদর্শক। এ জাতি এখন আর শুধু কোনোমতে টিকে থাকাতে সন্তুষ্ট নয়; বরং আমরা এখন অদম্য সাহসে শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে পৌঁছাতে বদ্ধপরিকর।

নতুন এই বাংলাদেশের হয়তো কিছু অপূর্ণতা আছে। কারণ, কোনো রাষ্ট্রই নিখুঁত নয়। কিন্তু এই বাংলাদেশ এখন অকুতোভয় হয়ে স্বপ্ন দেখতে জানে, অন্যায়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে জানে এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে নতুন কিছু গড়তে জানে। ২০২৫ সালের প্রতিটি বিসর্জন আজ রূপ নিতে চলেছে ন্যায়বিচার, সাম্য আর সমৃদ্ধির ভিত্তিপ্রস্তরে।

২০২৬ সালের ভোর কেবল সূচনা নয়। এটি এক পুনর্জন্মের ঘোষণা। অশান্ত এক বছরের শিক্ষা ভবিষ্যৎ নির্মাতাদের পথ দেখাবে, এই অঙ্গীকারই এর মর্মকথা। এই জাতি আর কেবল টিকে থাকার কথা ভাববে না। দৃঢ়ভাবে, নির্ভীকভাবে এগিয়ে যাবে শ্রেষ্ঠত্বের পথে।

একইসঙ্গে ২০২৬ সাল আমাদের সামনে এক বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্ন। এই যে সুযোগ আমরা পেলাম, তা দিয়ে আমরা কী গড়বো? আজ বাংলাদেশের মানুষের কণ্ঠস্বরে একই সুর, সবার হাতেই এখন নতুন ইতিহাস লেখার কলম।

নদী বয়ে চলে অবিরাম, আর বাতাসের কানে কানে ভেসে আসে আশার গুঞ্জন। এ দেশের মানুষ আজ আর শোকের ভারে নুয়ে নেই; বরং যা কিছু তারা অর্জন করেছে, সেই প্রাপ্তির শক্তিতে আজ সম্মুখপানে অগ্রসরমান।

২০২৬ কেবল একটি নতুন বছর নয়; আসছে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণমূলক আর উৎসবমুখর এই নির্বাচনের মাধ্যমে সূচিত হতে যাচ্ছে এক নতুন প্রারম্ভ।

বাংলাদেশ আজ তার সোনালি ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াচ্ছে, যা এ দেশের মানুষের অদম্য প্রাণশক্তি আর আশার অবিনশ্বর শক্তিরই এক জীবন্ত দলিল।

বাংলা/ এমএম

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে তিন বাহিনী প্রধান
খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে তিন বাহিনী প্রধান
খালেদা জিয়ার সম্মানে ব্রিটিশ হাইকমিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত
খালেদা জিয়ার সম্মানে ব্রিটিশ হাইকমিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত
খালেদার জানাজায় যোগ দিচ্ছেন যেসব দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা
খালেদার জানাজায় যোগ দিচ্ছেন যেসব দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা