অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়নে হোক নারীর উন্নয়ন


মুনমুন চৌধুরী
প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্বজুড়ে নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে বিশ্ব নারী দিবস। তবে দিন শেষে এই দিবসের স্বার্থকতা আটকে যায় ছোট্ট বৃত্তে। মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান ছিল আড়ালে। জুলাই অভ্যুত্থানে নারীর সংগ্রামের চিত্রই বা কতোটুকু সামনে আসছে? ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কয়জন নারী শহীদের কথা জানি আমরা?
এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে—‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
জুলাই অভ্যুত্থান এগিয়ে দিতে অগ্রভাগে ছিলেন যেসব নারী নিরাপত্তার অভাবে তারাই এখন পিছিয়ে পড়ছেন। কেবল জুলাই যোদ্ধা নয়, পুরো নারী সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরও কঠোর ব্যবস্থা চাইছেন নারী অধিকার বিশেষজ্ঞরা।
চব্বিশের জুলাইয়ে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন। দেশের বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রামের ইতিহাসে সব সময়ে নারীদের ভূমিকা থাকলেও জুলাই বিপ্লবের মতো এতো বিপুল সংখ্যক নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ এর আগে দেখেনি কেউ। আন্দোলনে উত্তাল যখন দেশ, তখন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মিছিলে, বিক্ষোভে রাজপথে নেমে আসেন নারীরা। গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের তালা ভেঙ্গে শ্লোগানে শ্লোগানে ছাত্রীরাই প্রথম রাজপথ প্রকম্পিত করেন!
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রতাপশালী অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলছাড়া করার দুঃসাহসী কাজটিও প্রথম করে দেখিয়েছে রোকেয়া হলের নারীরা।শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে নয়; সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও অদম্য শক্তি নিয়ে লড়াই করেছেন, মেয়েরা, মায়েরা, শিশু এমনকি বৃদ্ধারা। তবে, জুলাই রণক্ষেত্রে যাদের সাহসী ভূমিকা অভ্যুত্থানকে এগিয়ে দিয়েছিলো নিরাপত্তার সংকটে আজ অনেকেই নেই সামনের কাতারে। জানালেন, এই নারী যোদ্ধা। বলছেন, ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এসব নারী যোদ্ধাই কেবল নয়, পুরো রাষ্ট্র কাঠামোতেই সকল নারী নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা রাখাটা এখন সময়ের দাবি।
১৯৭১ সালে মুক্তির যে যুদ্ধ চলে বাংলায়, তাতে নির্দ্বিধায় বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল বাঙালি। ধর্ম-বর্ণ কিংবা নারী-পুরুষের ভেদাভেদ ছিল না । ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনেও নারীরা ছিলেন সম্মুখ সারিতে। মুক্তিযুদ্ধে নারী শুধু সম্ভ্রম হারিয়েছেন তা নয়, পুরুষের পাশাপাশি তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্রও। অথচ, মুক্তিযুদ্ধের বীর খেতাবে ৫ শতাধিক নামের তালিকায় নারী আছেন কেবল দুইজন।
তেমনিই মুক্তিযুদ্ধে শতশত যুদ্ধাহতকে সুস্থ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ড. ফৌজিয়া। নারীর বীরত্বের সাক্ষী তিনি নিজেই। স্বীকৃতিতে কেন এত কার্পণ্য— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার কাজটা ছিল ক্যাম্পে যে মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনিংয়ের জন্য আসতেন। ট্রেনিং থেকে ফিরে আসা ও যাওয়ার আগে তাদের শারীরিক পরীক্ষা করা। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এমন বহু মেয়ে কাজ করেছে। এছাড়াও খবর সংগ্রহ করার কাজও তারা করেছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিহাস তো পুরুষরা রচনা করে, সেখানে নারীদের স্বীকৃতির কথাটা আসে না। এই স্বীকৃতিটা আদায় করে নিতে হয়। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে তাদের (নারীদের) বাদ দেয়ার লক্ষণ আছে। এই বিষয়ে মেয়েরা তৎপর হলে সেটা আর হবে না।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নারীদের বিশাল অংশগ্রহণ বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। হিসাব অনুযায়ী, দেশ পুনর্গঠনে নারীদের অংশগ্রহণও হওয়ার কথাও রেকর্ড পরিমাণ। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই বলে? আবারও কি ৭১-এর পথেই হাঁটছে ২৪?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, যখনই ৫ আগস্ট পরবর্তী ক্ষমতার প্রশ্ন আসছে তখন মেয়েরা সিস্টেমেটিক্যালি সাইডলাইন হয়ে যায়। এখানে তো শুধু পদ পদবীর প্রশ্ন না। নারীদের যে সামান্য নিরাপত্তার প্রশ্ন। আমরা যখন রাস্তাঘাটে বের হচ্ছি তখন পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর সেটা আরও অনেক বেড়েছে।
২৪ এর আন্দোলনে নারীর সাহসিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন নুসরাত। ভাই নূর হোসেনকে আগলাতে পুলিশের চলন্ত প্রিজনভ্যানের সামনেই, বুক চিতিয়ে দাঁড়ান তিনি।
নুসরাত জানান, শহীদদের তালিকায় সেখানে বারবার ছেলেদের নাম বলা হচ্ছে, নারীদের নাম পাচ্ছি না। আন্দোলনের সময় আমি একটি দল পরিচালনা করছি। সেদিক থেকে দেখছি ছেলেদের নামটাই উঠে আসছে, নারীদের নাম আসতেছে না।
অন্যদিকে নূর হোসেন বলেন, আন্দোলনের নারীরা প্রেরণা, শক্তির সাথে সুরক্ষা দিয়েছে। সেই সাথে ভ্যানগার্ড হয়ে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। নারীদের মূল্যায়ন যতটুকু হওয়া উচিত ছিল, হয়ত তার থেকে অথবা ততটুকু হচ্ছে না। নারীদের ন্যূনতম নিরাপত্তা থাকার কথা ছিল, সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ