আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিএনপির বিবৃতি
‘নারীর প্রতি হেনস্তা; উগ্র গোষ্ঠীর মদদ থাকতে পারে’


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
‘বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে অতি রক্ষণশীল দেশ হিসাবে পরিচিত করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে দেশব্যাপী নারী হেনস্তার ঘটনা ঘটতে পারে’ বলে আশঙ্কা করছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার ৮ মার্চ সকালে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। রিজভী বলেন, ‘দেশজুড়ে নারীর প্রতি হেনস্তার পেছনে উগ্র গোষ্ঠীর মদদ থাকতে পারে। বাংলাদেশকে অতি রক্ষণশীল বানানোই তাদের লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। সব সেক্টরে নারীদের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে বিএনপি।’
রিজভী বলেন, ‘যারা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ, তারা কীভাবে মিছিল করে- এটি সরকারকে দেখতে হবে। জঙ্গিবাদ যাতে অগ্রগতির পথে মাথাচাড়া না দিতে পারে, সেদিকে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে।’
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে নারীদের প্রতি সহিংসতা ও হেনস্থার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গিয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে নারীরা যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, ঠিক তেমনি অনলাইনেও তাঁরা বিরূপ আচরণের শিকার হচ্ছেন। রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রী, নারী শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার নারীদের ইভটিজিং, শ্লীলতাহানী এবং হেনস্থা করা হচ্ছে। ধর্ষণ ও নির্যাতন করে নারীদেরকে হত্যা করা হচ্ছে।
একের পর এক নারীকে হেনস্থা ও আক্রমণ এবং সামগ্রিক বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠছে, তা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও সম্প্রীতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে কেন আজ নারীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং এর পেছনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা, সেটি যাচাই করা প্রয়োজন। এই অসভ্যতা ও সহিংসতার পেছনে কোনো উগ্রগোষ্ঠীর উস্কানি বা মদদ থাকতে পারে, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে এবং যাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি অতি রক্ষণশীল রাষ্ট্র বানানো, যেন নারীরা নিজ দেশে অধিকারহীন হয়ে পড়েন।
বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়নের পথিকৃৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে ঘটে চলা এই প্রতিটি ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের যথাযথ শাস্তির দাবি করছি। নারীদের সম্মান ও স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, যা তাদের সংবিধান অনুযায়ী স্বীকৃত অধিকার। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, নারী নির্যাতনসহ সকল নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি কঠোরভাবে দমন করে দেশে ন্যায়বিচার এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
ঐতিহ্যগতভাবে বিএনপির প্রতিটি সরকার বাংলাদেশে নারীর মর্যাদা, সুরক্ষা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। আজকের বাংলাদেশেও আমরা নারীর ক্ষমতায়নের দায়বদ্ধতাকে ধারণ করে সমাজের সকল মা, স্ত্রী, বোন ও কন্যাদের উৎকর্ষ, সাফল্য ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার করতে বদ্ধপরিকর। বিএনপি বিশ^াস করে একটি আধুনিক ও উদারতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে হলে লিঙ্গ, বয়স, পেশা নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও মানবিক বিকাশের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটিতে আমরা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, নারীদের প্রতি সকল প্রকার বিদ্বেষ ও সহিংসতাকে রুখে দিতে এবং আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে সুসংহত করতে দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা বর্তমানে সময়ের দাবি।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান : বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের স্থপতি
স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নারীর ক্ষমতায়নের বাংলদেশে সর্বপ্রথম অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ১৯৭৬ সালে জাতীয় মহিলা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সামাজিক সংস্কারের মাইলফলক হিসেবে ১৯৭৮ সালে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থাপন করেন। তিনি প্রথমবারের মতো পুলিশ ও আনসার বাহিনীতে নারীদের নিয়োগ করেন, সরকারি চাকরিতে নারীদের নিয়োগ ও পদোন্নতিকে অগ্রাধিকার দেন। ১৯৮০ সালে যৌতুক বিরোধী আইন পাশ করেন, যা আজও নারীদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
প্রেসিডেন্ট জিয়ার ঐতিহাসিক ১৯ দফায় ১১ নম্বরে নারীদের মর্যাদা ও সমাজে তাদের প্রতিষ্ঠার প্রতি আলোকপাত করা হয়, যা বাস্তবায়িত হয় রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি স্তরে। তিনি নারী ফুটবল দলের যাত্রা শুরু করেন এবং সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য ১০% কোটা সংরক্ষণ করেন। নারীর অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য সেলাই, বুনন, হাঁস-মুরগি পালনসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন। গার্মেন্টস সেক্টর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সবচাইতে বেশি নারীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি শহীদ জিয়ার সময়ে বিকশিত হয় নারী উদ্যোক্তাদের পরিচালিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, দেশব্যাপী কুটির শিল্প।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গ্রাম সরকার, ইউনিয়ন পরিষদ, ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে নারী পদ সংরক্ষণ করেন এবং সংসদে নারীদের সংরক্ষিত আসন ১৫ থেকে ৩০-এ উন্নীত করেন। সরকারি চাকরিতে নারীদের বয়সসীমা ২৫ থেকে ৩০ বছর বৃদ্ধি করেন এবং প্রাথমিক শিক্ষক ও স্বাস্থ্যকর্মী পদে বিপুল সংখ্যক নারী নিয়োগ করেন, যা দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে নারীর ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া: নারীর ক্ষমতায়নের বৈশ্বিক পথিকৃৎ
শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশে^র নারী নেতৃত্বের পুরোধা হিসেবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতির পথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেন এবং উপবৃত্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে ন্যূনতম মাধ্যমিক শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করেন। ১৯৯৩ সালে “খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা” ব্যবস্থা চালু করে প্রাথমিক শিক্ষায় নি¤œবিত্ত পরিবারের মেয়েদের আগ্রহী করে তোলেন, যা দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের স্কুলে থাকার জন্য ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করে। তিঁনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের জন্য বিমামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে একটি সামাজিক বিপ্লব সৃষ্টি করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে বেগম খালেদা জিয়া ধর্ষণ ও অ্যাসিড সন্ত্রাস দমন আইন প্রণয়ন করে নারীদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপরাধ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেন। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যৌতুকবিরোধী আইন প্রণয়ন করেন, যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক নির্যাতন কমাতে সহায়ক হয়। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে তিঁনি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন এবং অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি নির্ধারণ করেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠন করে বেগম খালেদা জিয়া নারী শিক্ষায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন। নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার দিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণ করেন এবং দেশে প্রথমবারের মতো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা করে বহু নারী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করেন।
দরিদ্র নারীদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার অর্জন নিশ্চিত করতে তিঁনি তৃণমূল পর্যায়ে বস্তিবাসী, দুস্থ নারী ও গ্রামীণ মেয়েদের জন্য স্বল্পকালীন ঋণ ব্যবস্থা চালু করেন, যা নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগেও বেগম খালেদা জিয়া অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। নারী স্বাস্থ্যসেবা, উন্নয়ন ও শিক্ষার প্রসারে তিনি “এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেন”- এর জন্য ফান্ড গঠন করে চট্টগ্রামে ১০০ একর জমি দান করেন, যা নারীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ আরও সম্প্রসারিত করেছে। নারীরা যাতে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে তিঁনি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ব্যবহারিক কাজে নারীদের যুক্ত করেন, যার ফলে অসংখ্য নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। নারীদের কৃতিত্বের স্বীকৃতি দিতে তিনি নবাব ফয়জুন্নেসা ও বেগম রোকেয়ার নামে একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাদের নামে পদক প্রদান শুরু করেন।
বেগম খালেদা জিয়া শুধু নারীর উন্নয়ন কথায় সীমাবদ্ধ থাকেননি বরং একের পর এক বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিয়ে নারীদের জন্য নতুন পথ তৈরি করেছেন। তাঁর গ্রহণ করা উদ্যোগগুলো আজও নারীদের জন্য সুফল বয়ে আনে এবং এসব উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়নের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তারেক রহমান : নারীর স্বাধীনতা, মর্যাদা, আত্মনির্ভরশীলতা ও নিরাপত্তার ধারক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান দেশের জন্য হারিয়েছেন তাঁর বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে এবং একমাত্র ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে। আজ তাঁর পাশে রয়েছেন তাঁর মমতামীয় মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, স্ত্রী ডাক্তার জোবাইদা রহমান এবং একমাত্র সন্তান ব্যারিস্টার জায়মা রহমান-যাঁরা তিনজনই নারী। তাই নারীর মর্যাদা, আত্মনির্ভরশীলতা, ক্ষমতা এবং সমাজে তাদের সঠিক ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তিঁনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। তাঁর কাছে নারী শুধুমাত্র একটি সংখ্যা বা পরিসংখ্যান নয় বরং সমাজের অমূল্য অস্তিত্ব, যাঁরা নিজেদের শক্তি এবং সমর্থন দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
এ কারণেই তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি যখন জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসবে, তখন দেশের প্রতিটি পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ প্রদান করা হবে। এই কার্ডটি পরিবারের মা বা গৃহিণীর নামে দেওয়া হবে, যাতে নারীরা তাদের পরিবারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এটি একটি সার্বজনীন কার্ড হবে, যাতে কোনো প্রকার দলীয় বা স্থানীয় প্রভাব দ্বারা কেই বঞ্চিত হবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী যেমন- চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, ইত্যাদি-এই কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে, যা নারীদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা ও স্বীকৃতির প্রতিফলন। প্রাথমিকভাবে এটি গ্রামাঞ্চলের তৃণমূল জনগণের জন্য চালুু হবে, তবে পরবর্তীতে দেশের প্রতিটি পরিবার এর আওতায় আসবে, ইনশাল্লাহ।
নারীর ক্ষমতায়নকে দৃঢ়ভাবে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বিএনপির ৩১ দফায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে নারীর মর্যাদা, সুরক্ষা এবং সমাজে তাদের প্রাপ্যস্থান প্রতিষ্ঠার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য নারীর ক্ষমতায়নে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। নারী ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে, যাতে তারা সঠিক সুযোগ ও সুরক্ষা পায়।
এছাড়াও, বিএনপির পরবর্তী সরকারের সফল নীতির ধারাবাহিকতায় জাতীয় সংসদে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নারীদের মনোনয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০-এ নারীর ক্ষমতায়নের জন্য যেসব পরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়নে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জনাব তারেক রহমান ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, বিএনপি যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসবে, তখন দেশের সকল দুঃস্থ বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত মহিলা এবং অসহায় বয়স্কদের ভাতার পরিমান মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। নারীর নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং তাঁদের সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই ভাতা ব্যবস্থা দূর্নীতি ও ক্রটিমুক্ত করে নারীদের আত্মসম্মান বজায় রেখে সহায়তা প্রদান করা হবে।
নারী নির্যাতন যৌতুক প্রথা, অ্যাসিড নিক্ষেপ, যৌন হয়রানি ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু পাচার রোধে কঠোর আইন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিশু শ্রম রোধে বাস্তবসম্মত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বিএনপির পূর্ববর্তী সরকার কর্মজীবী নারীদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলো। ভবিষ্যতেও বিএনপি সরকার গঠন করলে কর্মজীবী নারীরা যেন তাদের শিশু সন্তান রেখে নিশ্চিন্তে কাজে মনোনিবেশ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে অধিক সংখ্যক ডে কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলা হবে। এতে নারীদের শ্রমের মূল্যায়ন ও পরিবারের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হবে, যা তাদের আত্মবিশ^াস ও কর্মক্ষতা বৃদ্ধি করবে।
বিএনপির পরিকল্পনা অনুযায়ী নারী উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ গ্রহণের পথে যেসব সামাজিক ও সংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা দূর করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করব, যার মধ্যে থাকবে নারীদের পার্সোনাল এন্ড প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট, স্বল্প সুদের ব্যাংক ঋণ প্রদান এবং ব্যবসায়িক ট্যাক্সে ছাড়। এছাড়াও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ব্যবসায়িক ট্রেনিং এবং সার্বিক সহায়তা প্রদান করে। নারীদের অর্থনেতিক স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের নারী সমাজকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে আরও ব্যাপকভাবে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিএনপির প্রতিশ্রুতি
আজকের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমরা যখন নারীর ক্ষমতায়ন নিরাপত্তা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার কথা বলছি, তখন আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাস্তবতা অত্যন্ত হতাশাজনক। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নারীদের প্রতি সহিংসতা, বৈষম্য ও অত্যাচারের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। সমাজে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য এবং নারীদের প্রতি সহিংসতা দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে, যা আমাদের জাতির জন্য উদ্বেগের কারণ। এই কঠিন বাস্তবতায় বিএনপি দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে নারীদের নিরাপত্তা মর্যাদা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে এবং শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশেই নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেও বাংলাদেশে এখনও নারীরা নানা ধরণের বৈষম্য, সহিংসতা এবং শোষণের শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে দেশে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন এবং তাঁদের অধিকারের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আশানুরূপ নয়। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত বিএনপি সরকার দূঢ়ভাবে অঙ্গিকারবদ্ধ যে, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, তাদের উন্নয়ন এবং তাঁদের শোষণ ও নির্যাতন থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বিএনপি বিশ্বাস করে একটি নারীবান্ধব, নিরাপদ ও স্বাধীন সমাজ গড়ে তোলা প্রয়োজন, যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই সমান অধিকার সুরক্ষা ও মর্যাদা ভোগ করবেন। নারীর ক্ষমতায়ন, সুরক্ষা এবং তাঁদের জীবনের মান উন্নয়নের জন্য বিএনপি সরকার শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে নারীদের আত্মনির্ভরশীলতা, ক্ষমতা ও উন্নয়নের নতুন দিগন্ত খুলে দিবে।
বিএনপির নেতৃত্বে নারীরা সম্মানিত, সুরক্ষিত এবং সমর্থিত হয়ে এগিয়ে যাবেন এবং তাদের অধিকার মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত প্রতিশ্রুতি পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করব। ইনশাল্লাহ আমরা এক নতুন যুগের সূচনা করব, যেখানে নারীরা নিজেদের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটিয়ে সমাজের অগ্রগতি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতিসহ সকল ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রেও নারীরা যে, অগ্রগামিতা দেখাচ্ছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নারীরা ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন অগ্রণী ভূমিকার অধিকারী। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ১৬ বছরের দুর্বার আন্দোলনে বিএনপি এবং সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নারী নেতাকর্মী-সমর্থকদের ছিল অনন্য-অদম্য ভূমিকা।
জুলাই গণঅভ্যূত্থানেও আমরা দেখেছি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেশের মা-বোনেরাও রাজপথে নেমে এসে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। মায়েরা তাদের সন্তানদের জন্য পানি ও খাবার নিয়ে রাজপথে নেমেছিলেন, আর মেয়েরা তাদের সাহসী স্লোগানে মুখর করে তুলেছিনেল রক্তাক্ত রাজপথ। নারী জগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বীর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার মহান মুক্তিযুদ্ধের কাঁকন বিবি ও তারামন বিবিসহ সকল গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে শহীদ ও ত্যাগী সকল সংগ্রামী নারীদের প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিএনপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও দেশের নারীরা সকল সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। তাঁদের শক্তি, সাহস এবং অবদান দেশের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে আর নারীদের সেই ক্ষমতায়নের রাজনৈতিক পাথেয় হিসেবে সবসময় পাশে থাকবে বিএনপি, ইনশাল্লাহ।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন দেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই: খোকন
নরসিংদী প্রতিনিধি
অনির্বাচিত ব্যক্তিদের কাছে দেশ ও জাতি নিরাপদ নয় …

জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য উপহার নিয়ে হাসপাতালে ইশরাক হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন ইশরাক …

এপ্রিল ফুল নয়, ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে হবে : ১২ দলীয় জোট
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের সব গণতান্ত্রিক দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়েছে। দেশের …
