বিগত সরকারের পতন
বর্তমান সরকারও শিক্ষা নিচ্ছে না- জিএম কাদের


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, সরকারের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে আমি কথা বলছি। তাই আজ আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ২০১৮ সালের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তখন আমাদের নেতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন। জাতীয় পার্টির রাজনীতি ও নীতি নির্ধারণী বিষয় সিদ্ধান্ত নিতেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তখন নাকি আমি দুর্নীতি করেছি। যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
তিনি বলেন, আমি এমপি থাকা অবস্থায় গমসহ বিভিন্ন যে সহায়তা দেয়ার যে বিধান রয়েছে তাতে স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের কোন দায়-দায়িত্ব নেই বা ছিল না। আমাদের নেতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মুখ বন্ধ করার জন্য দুর্নীতির মামলা দেয়া হয়েছিল। এরশাদ সাহেবের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দেয়া হয়েছিল। আমার নামেও দুর্নীতি ও খুনের মামলা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন নির্বাচনে আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পরাজিত হননি। আমরাও সত্যের পক্ষে আছি ও থাকবো।
জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, জাতীয় পার্টির ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। এখন জাতীয় পার্টি সামনের দিকে আরো এগিয়ে যাবে। সামনে আমাদের সুদিন আসছে, জনগণ আমাদের সাথে আছে। জনগণ আমাদের কথা শুনতে চায়। ফ্যাসিবাদ থেকে দেশকে মুক্তি দিতে যে পথে যেতে হয় আমরা সে পথেই এগিয়ে যাবো। আমাদের নেতা এরশাদ সাহেবকে ৬ বছর জেলে আটকে রাখা হয়েছিল। আমাদের জেলে নেয়া হলে যাবো। ফাঁসি দিলে দেবে। এরশাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা জনগণ মেনে নেয়নি, আমাদের বিরুদ্ধে দেয়া মামলাগুলোও জনগণ মেনে নেবে না। আমাদের নেতা এরশাদ আমাকে বলেছিলো “ তোর বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির মামলা দেবে, সে ঘৃণিত হবে”। মানুষ এই মামলা নিয়ে হাসাহাসি করবে। আমরা এই মামলা মোকাবেলা করব। সত্য সবসময় বিজয়ী হয়, আমরাও বিজয়ী হবো।
তিনি বলেন, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না, বর্তমান সরকারও বিগত সরকার থেকে শিক্ষা নেয়নি। বিগত সরকারের পতন থেকে বর্তমান সরকারও শিক্ষা নিচ্ছে না। এই দিন না আরো দিন আছে এই দিনেরে নিয়ে যাবো সেই দিনেরও কাছে।
বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় (কাকরাইল) মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহুম্মদ এরশাদের জন্মদিন উপলক্ষ্যে কেক কেটে আলোচনা সভা ইফতার মাহফিল শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এ কথা বলেন জিএম কাদের।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। আমাদের সাংবিধানিক অধিকার শান্তিপূর্ণ ও অহিংস কর্মসূচী পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। জনগণের পক্ষে রাজনীতি চালু রাখার জন্য আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করবোই। গতকাল আমাদের ইফতার পার্টিতে সন্ত্রাসী হামলা করে, আমাদের নেতাকর্মীদের গুরুতর আহত করা হয়েছে। সন্ত্রাসী হামলার হাত থেকে গণমাধ্যম কর্মীরাও রেহাই পায়নি। সাংবাদিক ও ক্যামেরাপার্সনদের মারধোর করে ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ইউটিউবারদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। সাধারণ পথচারীরাও হামলার শিকার হয়েছে। আমরা এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একই সাথে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্ব হলো সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা দেখছি সরকার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। পুলিশ বাহিনীকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। আমরা গতকাল কয়েকবার পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েছি কিন্তু তারা আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি। তারা এসে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। একই সাথে সন্ত্রাসীদের তাড়িয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে।
জিএম কাদের বলেন, যতদিনে গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারবো ততদিন আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা গণমানুষের পক্ষে কথা বলবোই, যদি আমাদের জীবন দিতে হয় তাতেও আমরা পিছপা হবো না। আজ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মদিন উদযাপন করতে পেরেছি এটা জনগণের বিজয়। নতুন যে ফ্যাসিবাদ চালু হয়েছে আমরা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। আজ আমরা প্রথম জয়লাভ করেছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা সাথে ছিলাম। রংপুরের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ এর কবর জিয়ারত ও তার মা বাবা কে শান্তনা ও সহায়তা আমরাই সবার আগে দিয়েছি। প্রতিদিন আমরা ছাত্র জনতার অহিংস আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে কথা বক্তৃতা করেছি। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে সবার আগে সংসদে আমি বক্তৃতা করেছি। এই আন্দোলন কোটা সংস্কার ছিল না, এই আন্দোলন ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে। দেশের সকল মানুষের সাথে আমরা এই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আন্দোলনে জয়লাভের পর মুষ্টিমেয় মানুষ এই জয়ের কৃতিত্বের দাবীদার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও তাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আরো দুঃখের বিষয় হচ্ছে তারা হঠাৎ করে আমাদের ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করতে শুরু করেছে। আমাদের সকল অহিংস রাজনৈতিক কর্মকান্ডে বাঁধা দেয়া শুরু করেছে। বিগত সরকারের আমলে আমরা শত বাধা ও ঝুঁকি নিয়ে জনগণের পক্ষে থেকে সমালোচনা করেছি। এখন দেখছি সেই বাধা আরো বড় হয়ে সামনে এসেছে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল তা ধুলিস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। নব্য ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা গতকালও বলেছি বর্তমান সরকার দেশের জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে নৃশংতার শেষ নেই। দেশের মানুষের সাথে জন্তু জানোয়ারের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি আবারও বলছি, বর্তমান সরকার ব্যর্থ হয়েছে, আপনারা সরে দাঁড়ান।
তিনি বলেন, আমেরিকার সরকার থেকে যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাতে বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ দুর্দিন আসতে পারে। আমাদের রপ্তানি বন্ধ হয়ে আয় ইনকাম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমরা চাল উৎপাদনেও স্বয়ং সম্পূর্ণ নয়, সবকিছুই কিনতে হয়। তাই, রপ্তানিক আয় ও রেমিটেন্স বন্ধ হলে দেশে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। জঙ্গী ইস্যুতে আমেরিকা চাপ দিলে মধ্যপ্রাচ্য থেকেও আমাদের প্রবাসী আয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিশুদের দায় সরকার এড়াতে পারে না
বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিশুদের দায় সরকার এড়াতে পারে না বলে …

দেশকে সুশৃঙ্খল অবস্থানে আনতে একটি কার্যকর নির্বাচন লাগবে
নির্বাচন বিলম্বিত হলে জটিলতা সৃষ্টি হবে জানিয়ে জামায়াতে ইসলামের আমির …

এনসিপির শত্রু বিএনপি নয় : ইশরাক
বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারী ইশরাক হোসেন …
