কোরিয়া বিএনপিতে আ.লীগ পুনর্বাসনের পায়তারা !


মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক
রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনের কমিটি গঠন ঘিরে সাধারণত আর্থিক অনিয়ম-মাইম্যান বলয় সৃষ্টির অভিযোগ উঠে থাকে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ক্ষেত্রে দেখা যায় বিপরীত চিত্র। কমিটিতে এম জামান সজলকে আহ্বায়ক; যিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ও কাছের লোক হিসেবে বিভিন্নমহলে পরিচিত। শুধু তাই নয়; স্লোগান দিতেন জয় বাংলা আর করতেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিও। যাকে বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে আহ্বায়ক পদ পাইয়ে দেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ডক্টর শাকিরুল ইসলাম খান শাকিল। তাই এম জামান সজলের বিরুদ্ধে শত অনিময়-দুর্নীতির প্রমাণ থাকার পরও থাকছেন অধরা। শাকিলের সেল্টারে কমিটির একক নেতা জামান। আর কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিতে নারাজ বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকনও।
অভিযোগ রয়েছে, অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগপন্থীদের খোঁজে খোঁজে বের করে দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপিতে পুর্নবাসন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যার সুযোগ ব্যবহার করে আহ্বায়ক এম জামান সজলও বিএনপির নেতাকর্মীদের দূরে সরিয়ে আওয়ামী লীগের আপনজনদের প্রাধান্য দিচ্ছেন দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির রাজনীতিতে। বেশকিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন ইসমাঈল ও শামীম এই দুইজনকে দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এম জামান সজল। দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্তত দশজনের সঙ্গে আলাপকালে ভিওডি বাংলাকে এমনটাই জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
জানতে চাইলে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ডক্টর শাকিরুল ইসলাম খান শাকিল ভিওডি বাংলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যিনি আর্থিক সুবিধার অভিযোগ দিয়েছেন তাকে প্রমাণ দিতে হবে। মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসল আর আমি লিখে দিলাম তা হবে না, কারণ জাপান-কোরিয়ার আইন (রোল) কিন্তু আমি ভালো জানি। আর্থিক অনিয়ম বিষয়ে কোনো ছাড় দেব না। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি- আওয়ামী লীগের কোন লোককে কমিটিতে রিকমান্ড(প্রস্তাব বা সুপারিশ) করিনি। এতোটুকু বলতে পারি। এরপর ওই কমিটির নেতৃবৃন্দ এখন কি করছে না করছে তা বলতে পারব না। কারণ এক বছর ধরে কোরিয়া বিএনপির সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নাই। এখন কোরিয়া বিএনপির দেখাশোনা করছেন আনোয়ার হোসেন খোকন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছবি এডিট করা কিনা সেটা পরীক্ষা করুন। তাছাড়া তারা (নেতাকর্মী) সবাই হলো ব্যবসায়ী; কাজেই কোন প্রোগ্রামের ছবি। এটা কি কোনো সামাজিক প্রোগ্রামের ছবি নাকি রাজনৈতিক ছবি নাকি ব্যবসায়িক মিটিং করছে সেই ছবি? কারণ বিদেশে যারা রাজনৈতিক পদধারী আছে তারা অধিকাংশই ব্যবসা করে। তারা একটা কমিউনিটি মেন্টেইন করে।’
দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব হারুনুর রশিদ হিরন ভিওডি বাংলাকে বলেন, দলের স্বার্থে নেতাকর্মীদের স্বার্থে বেইমানি করতে পারি না। আওয়ামী লীগের কেউ বিএনপিতে পুনর্বাসন হোক সেটা চাই না। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে; সেখানে তার দলের কেউ যেন বিএনপির রাজনীতি করার সুযোগ না পায় আমি সেটাই চাই। তারপরও দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির রাজনীতিতে যত অনিয়মের কথা উঠেছে এই সব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমি জড়িত নই। সবকিছু আহ্বায়ক এম জামান সজল দ্বারা সৃষ্ট। তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থে আওয়ামী লীগের লোকদের নিয়ে রাজনীতি করার পাঁয়তারা করছেন। এমনকি তাদেরকে বিএনপির রাজনীতি করার সুযোগ করে দিচ্ছেন এমনটাও বলছেন নেতাকর্মীরা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সত্য বলতে আমি ভয় পাই না। দলের স্বার্থে নেতাকর্মীদের স্বার্থে প্রয়োজনে লাইভ সম্প্রচারে সত্য ঘটনা প্রকাশ করার যে কোনো পদক্ষেপ নিতে রাজী আছি।
তবে দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির আহ্বায়ক এম জামান সজলের সঙ্গে একাধিকভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালিন দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা ভিওডি বাংলাকে বলেন, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ডক্টর শাকিরুল ইসলাম খান শাকিল মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠাকালিন দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির নেতাদের বাদ দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেন ২০২২ সালে। কিন্তু উনাকে বেশকয়েকবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল প্রতিষ্ঠাকালিনদের বাদ দিয়ে কিসের ভিত্তিতে এই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তখন তিনি (শাকিল) জানান, আপাতত আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে; তিন মাসের জন্য। তিন মাস পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বাদ পড়াদের মূল্যায়ন করা হবে। যেহেতু আপনারা দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালিন থেকে রয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেই আহ্বায়ক কমিটি তিন মাসের জায়গায় এখন দুই বছর অতিক্রম করছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি বরং গত ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের পর থকে যতগুলো প্রোগ্রাম হয় সেখানে আওয়ামী লীগ করত, জয় বাংলার মিছিল করত, স্লোগান দিত, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপিদের যারা বিমানবন্দরে রিসিভ করত ও হোটেলে গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা দিত। এমনকি পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে দেখা গেছে তাদেরকে বিএনপির প্রোগ্রামে মঞ্চের সাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে বসানো হয়। আর আমরা যারা দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছি আমরা প্রোগ্রামের দাওয়াতও পাই না। কোনো কারণে প্রোগ্রামে গেলে আমাদের দর্শক সাড়িতে বসতে হয়।
সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, ‘বেশকিছুদিন পূর্বে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন যখন ম্যাসেঞ্জারে আমাদের সঙ্গে মিটিং করেছেন তখন উনাকে তথ্য উপাত্তসহ অবহিত করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দও উক্ত মিটিং এ অংশগ্রহণ করেছিল। সেখানে সাংগঠনিক সম্পাদক খোকন শুধু জানান, আমি যাচাই বাছাই করে দেখব। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেননি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাংগঠনিকভাবে দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে সংগঠনের অভ্যন্তরে নানা বিতর্ক, দ্বন্দ্ব ও সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হতে শুরু হয়। মূলত দায়িত্বশীল নেতাদের কারণেই দলীয় কার্যক্রমে সমন্বয়ের ঘাটতি, কর্মীদের মধ্যে বিভাজন এবং অভ্যন্তরীণ একতা ভেঙে পড়েছে যা দলটির ভাবমূর্তি ও কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে দলটির জন্য নিবেদিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে বরং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের সামনে এগিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। যা শুধু সংগঠনের নীতির পরিপন্থী নয়, বরং এক ধরনের রাজনৈতিক আত্মঘাতী প্রবণতাও।
যেমন শামীম দক্ষিণ কোরিয়ার আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশে অনেক দুর্নীতির সাথে বিভিন্ন জায়গায় জড়িত আছেন তাকে ইদানিং দেখা যাচ্ছে বিএনপির অতিথিদের চেহারায়; কর্মসূচিতে তাকে ডেকে চেয়ারে বসানো হয়। এতেই শেষ নয়, ফ্যাস্টিস শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নাতি, সাবেক সচিব জয়নুল বারীর ছেলে; শেখ রেহানার অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত মহসিনুল হক বারী শাকিলকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ইফতার আয়োজনে অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আহ্বায়ক কমিটির বেশকয়েকজন সদস্য ভিওডি বাংলাকে জানান, দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির এই সাংগঠনিক দুর্বলতা ও দিকভ্রান্তির মূল কারণ হলো দায়িত্বশীল নেতৃত্বের ঘাটতি। সংগঠনকে একতাবদ্ধ করা,সঠিক দিকনির্দেশনা এবং দলের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় প্রয়োজন কার্যকর ও দূরদর্শী নেতৃত্ব। আমরা চাই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদেরকে ও বিএনপিকে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে সঠিক রাজনীতি করার উদ্যোগ নেবেন। আমরা দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপিকে বাঁচাতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির একজন যুগ্ম সদস্য সচিব ভিওডি বাংলাকে বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির আহ্বায়ক এম জামান সজল আওয়ামী লীগের লোক। শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছবি ও ভিডিও রয়েছে একাধিক। পতিত সরকার প্রধান শেখ হাসিনার কাছের লোক হয়েও কিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির আহ্বায়ক হয়েছেন সেটা মাথায় আসে না। তাই দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশকয়েকবার এম জামান সজল সম্পর্কে অভিযোগ দেওয়ার পরও তারা (দায়িত্বশীল) নেতারা কোনো ব্যবস্থা নেননি; শুধুমাত্র বলার জন্য বলে থাকেন ‘দেখছি।
জানতে চাইলে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন ভিওডি বাংলাকে বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘিরে ওই দেশ (দক্ষিণ কোরিয়া) থেকে আমাকে কেউ অনিয়ম নিয়ে কোনো কিছু জানায়নি। বরং আমাকে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ থেকে দুইজন কথা বলেছেন; যাদেরকে আমি তেমনভাবে চিনিও না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত কোনো প্রোগ্রামে আওয়ামী লীগের লোকজনকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে কিংবা দলে টানছে এমন তথ্য আমার কাছে জানা নাই। তাছাড়া কে কার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছে তা ক্রসচেক না করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না, কারো সঙ্গে ছবি থাকা মানেই যে এই ছবিটা আসল ছবি সেটাও এখন কনফার্ম করতে হয়। বিষয়টি যেহেতু স্পর্শকাতর। আমরা সাধারণত ব্যক্তি স্বার্থে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে থাকি। যা উচিত নয়।
প্রসঙ্গত, ২৫ অক্টোবর ২০২২ সালে বিএনপির দক্ষিণ কোরিয়া শাখার ৫১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। কমিটির আহ্বায়ক এম জামান সজল এবং সদস্য সচিব হারুনুর রশিদ হিরন। যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিবুল কবির হাসিব ও সেলিম রেজা রাজিব। যুগ্ম সদস্য সচিব ইমন রহমান অহি ও রুবেল খান প্রমুখ।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ/ এমএইচপি
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ঈদুল আজহা
ইবি প্রতিনিধি
মুসলিমদের জন্য ঈদুল আজহা পরম আনন্দের একটি দিন। …

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তিন কর্মকর্তার সিন্ডিকেট
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার …

রাজপথই সমাধান দেখছে বিএনপি
মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকেও আগামী জাতীয় সংসদ …
