বিএনপিতে সংশয় কেন


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সবসময়ই জরুরি সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা বলে আসছিলো। কিন্তু সরকারের দিক থেকে এতদিন পর্যন্ত সব কার্যক্রম সংস্কার ঘিরে হলেও তাতে কমিশনগুলোর প্রতিবেদন ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। আবার প্রধান উপদেষ্টা আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বললেও সরকারের দিক থেকে তার কোনো প্রস্তুতির উদ্যোগই নেয়া হয়নি।
এর মধ্যেই সরকার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাজনৈতিক দলের নেতারা 'আগে সংস্কার পরে নির্বাচন' কিংবা 'সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচারের পরে নির্বাচন'- এসব কথা এসেছে। একই সাথে 'ইউনূস ৫ বছর থাকুক'- এমন যে প্রচারণা সামাজিক মাধ্যমে অনেকের চোখে পড়ছে- তার সাথে সরকারেরই একটি অংশের যোগসূত্র আছে বলে ধারণা করছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অনেকেই।
এদিকে গত কিছুদিন ধরেই সামাজিক মাধ্যমে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখার পক্ষে প্রচার প্রচারণা অনেকেরই দৃষ্টিতে এসেছে। এসব ক্যাম্পেইন সরকার সমর্থকদের কোনো কোনো অংশের কাজ বলে মনে করছে বিএনপি।
একই সাথে কারও কারও মধ্যে ১/১১ এর মতো বিরাজনীতিকরণের একটি চিন্তা দিন দিন ডালপালা মেলছে বলেও মনে করছেন দলটির নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে গত ষোলই এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাতের পর নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৈঠকের সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে একটি চিঠি দিয়েছেন, যেখানে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার মাধ্যমে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি অবসানে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলছেন, "দ্রুত নির্বাচন না করা বা বিলম্বিত করার জন্য কোনো কোনো পক্ষের তৎপরতা আমাদের কাছে দৃশ্যমান এবং তাতে সরকারেরও কেউ কেউ জড়িত আছে বলে অনেকের কাছে মনে হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমেও সেটি দেখা যাচ্ছে।"
দলের নেতারা যে ধারণা দিচ্ছেন তাতে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সাথে ও তার পরদিন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে যে বৈঠক বিএনপির হয়েছে, তা দলটির নীতিনির্ধারকদের 'অনেকটাই ক্ষুব্ধ' করেছে কিংবা তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
একই সাথে নির্বাচনের একটি সময় ঘোষণা করে তার জন্য প্রস্তুতি শুরুর জন্য যে রোডম্যাপ বিএনপি চাইছে, সেটি এড়ানোর একটি প্রচেষ্টা জোরদার হচ্ছে বলেই তাদের কাছে মনে হয়েছে। কিন্তু কেন এই অনাস্থা- জানতে চাইলে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করে প্রস্তুতি নেয়ার কথা তিনি বলছেন না বা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিচ্ছেন না। আমরা এ বিষয়টিতেই স্পষ্ট হতে চাই।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিল, এমন সব দলকে নির্বাচন নিয়ে এক জায়গায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়। দলটির চিন্তা হলো, নির্বাচনের দাবিতে রাস্তায় নামতে হলে সরকারের পক্ষে যেন কোনো দল ('কিংস পার্টি' ব্যতীত) অবস্থান না নেয়। একই সাথে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত ঘোষণা হলে তাতে যেন সবাই সক্রিয় হয়ে অংশ নেয় সেটি নিশ্চিত করা।
ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে শনিবার ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান। বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচনের বিষয়ে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে একমত বিএনপি।
তিনি বলেন, ১২ দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে এখানে আলোচনা করেছি। সহযোগী হিসেবে তাদের জানার অধিকার আছে। বৈঠকে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে অনেক ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন সহ বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়েছি। করণীয় নিয়ে আরো আলোচনা হবে। সব মিলিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
নজরুল ইসলাম বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনরর কথা বললেও পরবর্তীতে এ সময়মীমা বদলে গেছে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন ধরে নিয়ে রোডম্যাপ হওয়া উচিত। এছাড়া ফ্যাসিবাদ ও তাদের সহযোগীরা যে অপকর্ম করেছে, তাদের দ্রুত বিচার দাবি করে বিএনপি।
তিনি বলেন, নির্বাচনের দাবিতে নতুন করে আন্দোলন করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না বিএনপি। সরকার জনআকাঙ্ক্ষা থেকেই ডিসেম্বরে নির্বাচন নিয়ে যে দাবি সেটি পূরণ করবে।
ওদিকে বিএনপির সাবেক মিত্র জামায়াতে ইসলামী এতদিন সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দিলেও সম্প্রতি দলটির আমির লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাতের পর ঢাকায় এসে জরুরি সংস্কার করে আগামী রোজার (২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে) আগেই নির্বাচনের কথা বলেছেন।
মূলত, নির্বাচন দীর্ঘমেয়াদের জন্য বিলম্বিত হলে দেশে বিরাজনীতিকরণের পরিস্থিতি তৈরি হবে এবং তাতে বিএনপি ও জামায়াত ক্ষতিগ্রস্ত হবে- এমন চিন্তা থেকেই দুই দলই ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে 'আপাত: একমত' হয়েছে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন দেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই: খোকন
নরসিংদী প্রতিনিধি
অনির্বাচিত ব্যক্তিদের কাছে দেশ ও জাতি নিরাপদ নয় …

জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য উপহার নিয়ে হাসপাতালে ইশরাক হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন ইশরাক …

এপ্রিল ফুল নয়, ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে হবে : ১২ দলীয় জোট
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের সব গণতান্ত্রিক দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়েছে। দেশের …
