বিএনপি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে থাকবে- মির্জা ফখরুল


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক বিএনপি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে থাকবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষ্যে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভা বিএনপি মহাসচিব দলের এই অঙ্গীকারের কথা পূনর্ব্যক্ত করলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্দ্বিধায় দৃঢ়চিত্তে স্পষ্ট করে বলতে পারি, আমরা বরাবরই সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতে থাকব … সে গভমেন্টে থাকি আর না থাকি সেখানেই থাকি… এই ব্যাপারে আপনাদেরকে আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারি। তবে আমরা আপনাদেরকে নিশ্চিত করতে পারি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি শুধু নয় এটা আমাদের বিশ্বাস, আস্থা এবং এটাকে আমরা যদি কখনো সুযোগ পাই সরকারিভাবে সেখানেও আমরা এটাকে স্টাবলিস করবো, না পেলে বিরোধী দলে থাকলে সেখানেও আমরা এটাকে স্টাবলিস করার জন্য লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।’
একই সঙ্গে গণমাধ্যমের ওপর অতীতে নিপীড়ন নির্যাতন এবং বিভিন্ন কালা-কানুনের বিরুদ্ধে দলের শক্ত অবস্থানের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই ব্যাপারে আমরা লড়াই করে চলেছি, এখনো করছি। খুবই স্পষ্ট ভাষায় দৃঢ়ভাষায় আমরা বলতে চাই, আমরা কখনোই অন্যায়ভাবে অন্যের মতকে চাপিয়ে দেয়ার যে ব্যাপারটা আছে সেটা আমরা সমর্থন করব না।’
সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়টি ২০১৬ সালে ঘোষিত ‘ভিশন-২০৩০’ ২০২৩ সালে প্রণীত ৩১ দফার রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে সংস্কার কর্মসূচিতে রয়েছে বলে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব।
‘দেশে সংস্কার শুরু করেছে বিএনপিই’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে একরকম প্রচারনা চালানো হয় যে, আমরা নাকি সংস্কারের বিরুদ্ধে… প্রায় বলা হয় আমরা সংস্কার না নির্বাচন চাই। অথচ সংস্কার বিষয়টা শুরু হয়েছে আমাদের দ্বারা। আমরাই একদলীয শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায় গেছি, আমরাই আপনার পার্লামেন্টারি ফ্রম অব গভার্মেন্টে গেছি প্রেসিডেন্ট ফ্রম অব গভার্মেন্ট থেকে, আমাদের অনেক আপত্তি সত্ত্বেও আমরা কেয়ার টেকার গভমেন্টকে সংবিধানে নিয়ে এসেছি… এগুলো বাস্তবতা। এই বাস্তবতা থেকে অযথাই আমাদেরকে আবার প্রশ্নবিদ্ধ করে অন্য পথে দেখানোর চেষ্টাকরা এটার পেছনে কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকলেও থাকতে পারে।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে সম্পাদক পরিষদের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। এতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকরা অংশ নেন।
‘বিএনপিই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চারটি সংবাদপত্র ছাড়া সমস্ত সংবাদ পত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব যখন ক্ষমতায় আসলেন তিনি নিষিদ্ধ সংবাদপত্রগুলো চালু করেছেন, স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমরা বলি না যে, আমরা একেবারেই ধুয়া তুলশি পাতা। কিন্তু এই কথা নিসন্দেহে বলতে পারি যে, আমরা নিসন্দেহে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার স্বাধীনতার জন্য অনেক বেশি কাজ করেছি। আজকের যে, আকাশ মাধ্যম এটা কিন্তু আমাদের দ্বারাই শুরু করা এবং অনেকগুলো মিডিয়া আছে যেগুলো আমাদের সময়ে তৈরি করা। আমাদের সময়ে সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীর যে নির্যাতন-নিপীড়ন হয়েছে সেটা তুলনামূলকভাবে নিসন্দেহে অনেক কম হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত যেটা বিশ্বাস করি, আজকেও আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের একটা বিবৃতি বেরিয়েছে… আমি মনে করি এটা মুক্ত সংবাদপত্রের স্বাধীনতার চর্চার জন্য শক্তিশালী একটা ভূমিকা রাখবে।’
‘অনেক রকম ঘটনা, টানা হেছড়া হচ্ছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা একটা ট্রানজিশনাল পিরিয়যে আছি। অনেক রকম ঘটনা চলছে, অনেক রকম টানা হেছড়া চলছে। তবে একটা কথা কি? গণতন্ত্র যদি আমরা সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠা করতে চাই গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে, চিন্তা-ভাবনাগুলোকে গণতান্ত্রিক করতে হবে। আমি মনের মধ্যে যা বলব সেটাই সঠিক তাহলে আমরা সেভাবে গণতন্ত্রকে চর্চা করতে সক্ষম হবো না। একইভাবে সংবাদমাধ্যম গুলোকে তারা আমার কথা বললে ঠিক আছে…. আমার কথা না বললে ঠিক নেই এই চিন্তাভাবনাও কিন্তু আমার গণতান্ত্রিক যে চিন্তাভাবনা সেটাকে শক্তিশালী করবে না। সংকটটা কোথায়? সংকট তো গণতন্ত্রই তো নেই। ১৫ বছর ধরে লড়াই করলাম সেজন্যে…যে গণতন্ত্র উত্তরণের জন্যে।’২৪ জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে.. স্টুডেন্ট লিডারস তাদের জন্য সম্ভব হয়েছে একটা ফ্যাসিস্ট রোলাম ও রেজিমকে সরিয়ে একটা সুযোগ সৃষ্টি করা যে সুযোগে আমরা একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শুরু করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘পলিটিনশিয়ালিটি দেখা দিয়েছে, সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রাতারাতি হয় না। গণতন্ত্র প্রাকটিসের জিনিস...ওটাকে চর্চা করতে হয়। যেমন একটা গাছকে বড়ো করতে হয় তাকে নিয়মিত পানি দিতে হয়… চর্চা করতে হয় সেইভাবে। আমি হঠাৎ করে বলে ফেললে গণতন্ত্র হয় না। আরেকটায় গণতন্ত্র হয় না যে এটাই করতে হবে, অন্য কোনো কিছু হবে না… এই যে মানসিকতা, এই মানসকিতা কিনতু আমাকে গণতন্ত্র চর্চা করতে দেবে না। আর একটা বড় জিনিস হচ্ছে, জনগনের ওপর আস্থা রাখতে হবে… তার চিন্তাভাবনা, তার রায়, তার মত এগুলোতে আস্থায় আনতে হবে। আমি মনের মধ্যে চিন্তা করবে সেটাই সঠিক তাহলে আমরা গণতন্ত্রকে চর্চা করতে সক্ষম হবো না। একই ভাবে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে তারা আমার কথা বললে ঠিক আছে, আমার কথা না বললে ঠিক নেই… এই চিন্তাভাবনা কিন্তু আমার গণতান্ত্রিক যে চর্চা সেটাকে শক্তিশালী করবে না ‘
‘আমিই সব এটা পরিহার করতে হবে’
নিজের বাবা সাবেক মন্ত্রী মির্জা রুহুল আমিনের কথা উল্লেখ করে ছেলে ফখরুল বলেন, ‘আমার বাবা তিনি কিন্তু মুসলিম লীগ করতেন আপনারা অনেকে জানেন। কিন্তু তিনি চিন্তাভাবনায় কথা-বার্তায় তখন দিনের তুলনায় অনেক আধুনিক ছিলেন। তিনি সংস্কৃত পড়েছে, পার্সিও পড়েছেন। তিনি পার্সিতে বলতেন যে, হ্যাম চু দিগার মিচথ… আমি ছাড়া আর কেউ নেই, আমিই আছি সর্বত্র। আর সংস্কৃতে আছে, এক ম্যা বো দ্বিগে… আমি একমাত্র। এই যে আমি এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসার দরকার। আমাদের সংবাদমাধ্যমের এই চর্চাটা বেশি করা দরকার। কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম আছেন তারা ভাবছেন তারা যা বলছেন ওইটাই সঠিক.. ওটার বাইরে কেউ বলতে গেলে তিনি হয়ে যাচ্ছে ফ্যাসিস্টদের দোসর অথবা ভারতীয় দোসর, অথবা আওয়ামী লীগের দোসর। অলরেডি ইতিমধ্যে আমার সেই বদনাম শুরু হয়েছে… এটা আপনারা অনেকে ভালো করে জানেন। ওই জন্য বলছি, দূর্ভাগ্যজনক, কষ্টকর। আমরা জ্ঞানত কখনো দেশের বিরুদ্ধে জাতির বিরুদ্ধে কাজ করার কথা চিন্তা করি না।’
একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধ দেশের ভিত্তি বলে তার কথাও সমস্বরে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বনিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল কবির, কালের কন্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বক্তব্য রাখেন।
এই অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিন, সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলীসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন দেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই: খোকন
নরসিংদী প্রতিনিধি
অনির্বাচিত ব্যক্তিদের কাছে দেশ ও জাতি নিরাপদ নয় …

জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য উপহার নিয়ে হাসপাতালে ইশরাক হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন ইশরাক …

এপ্রিল ফুল নয়, ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে হবে : ১২ দলীয় জোট
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের সব গণতান্ত্রিক দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়েছে। দেশের …
