প্রধান বিরোধীদল হওয়ার সুযোগ আছে জামায়াতের


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কৃষিবিবিদ হাসান জাফির তুহিন। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-২ (বেড়া-সুজানগর) সংসদীয় আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন সাবেক এই ছাত্রনেতা। ভিওডি বাংলা’র পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল:-
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর এখন আওয়ামী লীগ নেই; তাই আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে কোন দলকে ভাবছে বিএনপি। এই বিষয়ে আপনার মূল্যায়ণ কী?
হাসান জাফির তুহিন: বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ এখন জামায়াত। অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে। জাতীয় পার্টি কার্যক্রমে নেই। ফলে মনে হচ্ছে জামায়াতই এখন বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে নির্বাচনী রোডম্যাপ আদায়ে বিএনপি কোন পথে হাঁটছে?
হাসান জাফির তুহিন: সব গণতন্ত্রকামী দলকে সঙ্গে নিয়ে মতামতের ভিত্তিতে তাদের সংগঠিত করার চেষ্টায় বিএনপি। কয়েক মাস আগে যখন সরকারের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হয় তখন আশ্বস্ত করা হয়েছিল ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। গত ১৭ বছর যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিপক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে তাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দাবি জানাতে থাকব।
নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি) গঠনপ্রক্রিয়া ও কার্যক্রম আপনি কিভাবে দেখছেন?
হাসান জাফির তুহিন: জনগণ বুঝে গেছে তারা ( এনসিপি) কিংস পার্টি। এনসিপির দুজন এখনো সরকারে রয়েছে। তাদের প্রতি সরকারের সমর্থন রয়েছে। সরকারের সব মেশিনারিজ তাদের সহযোগিতা করছে।
অনেকেই অন্তর্বর্তী সরকারকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা বলছেন? এমনকি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও বলেছেন, মানুষ চায় তারা ৫ ক্ষমতায় থাকুক। এই বিষয়ে আপনার মতামত কী?
হাসান জাফির তুহিন: শুধু পাঁচ বছর নয়, ১০০ বছরও চাইতে পারে। তাদের সবকিছুই নিয়মবহির্ভূত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের নেতাকর্মীরা সক্রিয় নন। এটা আমাদের দুর্বলতা। আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল নই। আমরা আপামর দেশের জনসাধারণ যারা গণতন্ত্রকামী মানুষ, যারা আমাদের ভালোবাসে, বিশেষ করে যারা ভোটাধিকার চায়। এরাই আমাদের শক্তির উৎস। বিএনপি যতবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে প্রত্যেকবারই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে।
বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি কেমন?
হাসান জাফির তুহিন: বিএনপি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। যখনই নির্বাচন দেবেন বিএনপি প্রস্তুত। বিএনপির চেয়ে জামায়াতের নির্বাচনী প্রস্তুতি বেশি দেখা যাচ্ছে। তারা অধিকাংশ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। কৃষক দল সাংগঠনিকভাবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তিন বছর মেয়াদ শেষ হয়েছে। সংগঠনের অভিভাবক তারেক রহমান যখনই চাইবেন কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। আমরা প্রস্তুত আছি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপি সরব নয় কেন?
হাসান জাফির তুহিন: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নয়, আমরা বাংলাদেশের জনগণের ওপর নির্ভরশীল। এরা সাময়িকভাবে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে কিন্তু লং রানে আমরাই জয়ী হব। বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার শুরু থেকেই ছিল, এখনো আছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা কী?
হাসান জাফির তুহিন: ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করুক এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের আয়োজন করুক। যেহেতু জনগণ বিগত ১৫ বছর ভোট দিতে পারেনি সে কারণে তারা ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। তাই সরকারের উচিত ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটি অবাধ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা।
জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির বিরোধ নাকি কৌশলগত দূরত্ব?
হাসান জাফির তুহিন: এটা কৌশলের অংশ নয়। আওয়ামী লীগ না থাকায় দেশের প্রধানবিরোধী দল হওয়ার সুযোগ রয়েছে জামায়াতের। তারা প্রধান বিরোধী দল হওয়ার স্বপ্ন দেখে, সে পথেই হাঁটছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো কোন পর্যায়ে?
হাসান জাফির তুহিন: ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে বিএনপির ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছিল। বর্তমান সময়ে মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে না বললেই চলে। আমাদের আইনি লড়াই আগের মতোই চলছে। আগে যেমন জামিন কেটে দিত, এখন হয়তো তা করছে না। মামলা আগের মতোই আছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে নাগাদ ফিরতে পারেন?
হাসান জাফির তুহিন: দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি ফিরবেন। তিনি কোন সময়ে ফিরলে দেশের জন্য মঙ্গল হবে, দলের জন্য মঙ্গল হবে তা বিবেচনা করেই ফিরবেন তিনি।
সংস্কার কার্যক্রম কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব?
হাসান জাফির তুহিন: সংস্কার বাস্তবায়ন করবে নতুন সরকার। আমরা সংস্কারের জন্য ৩১ দফা দিয়েছি। এর মধ্যে বর্তমানে আলোচিত সংস্কার প্রস্তাবের প্রায় সবই রয়েছে। সংস্কার প্রক্রিয়া সংসদ ছাড়া বাস্তবায়ন করা যায় না। সংস্কারে তিন মাসের কথা বলে এখন পর্যন্ত কোনো খবর নেই। সরকারের একটা সুবিধাভোগী শ্রেণি সমস্যার কথা বলে নির্বাচন পেছানোর জন্য এমন ধীরগতি প্রক্রিয়া করে থাকতে পারে। হয়তো সরকারের সবাই নয়, কারও কারও মধ্যে ক্ষমতার মোহ থাকতে পারে। যারা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
বর্তমান সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
হাসান জাফির তুহিন: ব্যর্থতাই বেশি। প্রথম থেকেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ছিল। রোজায় কিছু সবজির দাম ছাড়া সবকিছুরই বেশি দাম ছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেশে আইনের শাসন পরিস্থিতি খুবই খারাপ। গত সরকারের আমলে কোনো কথা বলা যেত না, এখন ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কথা বললেও কেউ কিছু বলে না, এটা উন্নতি হয়েছে। বাকি সব বিষয়ে ব্যর্থতা রয়েছে। কিছু হলেই মব জাস্টিজ হচ্ছে। ছাত্র হত্যা করা হচ্ছে। ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বলতম বর্তমান সরকার।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে, এই বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?
হাসান জাফির তুহিন: আওয়ামী লীগের যারা অপকর্ম এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বাদ দিয়ে আসলে সমস্যা নেই। জনগণ প্রত্যাশা করে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের আগে বিচার হতে হবে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
হাসান জাফির তুহিন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
‘আধিপত্যবাদী শক্তিকে রুখে দিতেই বিএনপির জন্ম’
ভিওডি বাংলা রিপোর্ট
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেছেন, অন্তর্বর্তী …

নির্বাচনের জন্য বিএনপি সব সময় প্রস্তুত
ভিওডি বাংলা ডেস্ক
জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে ক্ষমতা ও রাজনীতির …

জনগণের আস্থা-বিশ্বাসই বিএনপির রাজনীতি
ভিওডি বাংলা ডেস্ক
বিএনপি চায় আগামী দিনে একটা অংশগ্রহণমূলক সংসদ হোক। …
