ফ্যাসিবাদ বিরোধীদের মধ্যে ফাটল তৈরির চেষ্টা
আ.লীগকে পুনর্বাসন করছে সরকার- তারেক রহমান


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদে দেশত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারেক রহমান। শুক্রবার বিকালে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এক পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এরকম কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘এই যে পলাতক স্বৈরাচার.. স্বৈরাচারের সরকারের সময় একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি বিমান বন্দর দিয়ে চলে গিয়েছে দেশ ছেড়ে।যেভাবে চলে গিয়েছে সেটি যদি আমরা মিলাই তাহলে দেখব যে, ৫ আগস্ট আরেকজন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে…ইনিও অনেকটা সেভাবে পালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে যে, অন্তবর্তীকালীন সরকার নাকি তার এই দেশত্যাগের ব্যাপারে কিছুই জানে না। ঘটনাটি গতকাল এবং গতকাল থেকে আজকে পর্যন্ত যতজন মানুষের সাথে আমার কথা হয়েছে প্রত্যেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে, প্রত্যেকে প্রশ্ন করছেন তাহলে অন্তবর্তীকালীন সরকার জানে টা কী?'
তারেক রহমান বলেন, ‘সাথে এ অভিযোগ উঠেছে সংস্কারের নামে সময় ক্ষেপন করে অন্তবর্তীকালীন সরকার একদিকে যেমন হয়তবা পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদেরকে নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ করে দিচ্ছে। অপরদিকে অত্যন্ত সুকৌশলে নানা ইস্যু সৃষ্টি করে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদী বিরোধী যে রাজনৈতিক দলগুলো আমরা যারা মাঠে ছিলাম সেই দলগুলোর ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানোর একটা ক্ষেত্র হয়ত তৈরি করতে চাইছে। পলাতক স্বৈরাচারের সহযোগীদেরও পুনর্বাসনের ক্ষেত্র হয়ত তৈরি করতে চাইছে। এই বিষয়গুলো ঘুরে ফিরে মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি করছে।'
বুধবার রাতে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গভীর রাতে থাই এয়ারওয়েজের বিমান ব্যাংকক যান।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধানে সাম্য-মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচারের বিচারের মূলমন্ত্রকে অক্ষুন্ন রেখে সংবিধানের সময়োপযোগী সংস্কারের পক্ষে বিএনপির অবস্থান আবারও পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধান বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের ব্যাপারে বিএনপি তার সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে তুলে ধরেছে। জনগনের ভোটে জনগনে কাছে দায়বদ্ধ একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপি প্রতিটি ক্ষেত্রেই অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি এখনও তাদের সহযোগিতা এবং সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। তবে রিসেন্টলি যদি আমরা খেয়াল করে দেখি, বিভিন্ন কারণে অন্তবর্তীকালীন সরকার তাদের দায়িত্ব পালনে সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারছে কিনা এ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষের মধ্যে কিন্তু ধীরে ধীরে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে।'
রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল(বার্ক) মিলনায়তনে বাংলাদেশ খ্রিস্টান ফোরামের উদ্যোগে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উৎসব ‘ইস্টার ডে’ (যীশুর পুনরুত্থান দিবস) উপলক্ষ্যে এই পুনর্মিলনী ও শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান হয়। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
সুমনের বাসায় পুলিশ কেন?
তারেক রহমান বলেন, ‘২০১৩ সালে ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন র্যাব সদস্যরা ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনকে গুম করে। আজ পর্যন্ত এই সহকর্মীর আমরা হদিস পাই নাই। স্বৈরাচারের শাসনকালে শুধু একজন সুমন নয় ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে এরকম অসংখ্য সুমনদেরকে গুম-খুন-অপহরণ করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে পলাতক স্বৈরাচারের সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদসদের নিয়ে গুম হওয়া সুমনের বোন নেতৃত্বে ২০১৪ সালে গঠিত হয়েছিলো সামাজিক একটি সংগঠন মায়ের ডাক। অত্যন্ত আশ্চরয এবং উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, গুম হওয়া সুমনকে ধরার জন্য গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় সুমনের বোনের বাসায় অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। তারপরে প্রশাসন বলছে তারা নাকি সুমন সম্পর্কে জানতো না। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম ঠিক আছে প্রশাসন সুমন সম্পর্কে হয়ত জানত না। কিন্তু পলাতক স্বৈরাচারের সরকারে সময়ের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি বিমান বন্দর দিয়ে কিভাবে চলে গিয়েছে দেশে ছেড়ে?'
‘গণতন্ত্র না থাকলে কেউ নিরাপদ নয়’
তারেক বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন না থাকলে কথিত সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু অর্থাৎ আপনি কিংবা আমি আমরা কেউ কিন্তু নিরাপদ নই।এমন কি ক্ষেত্রে বিশেষে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বও নিরাপদ নয়। রাষ্ট্রে যদি গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনই নিশ্চয়তা দিতে পারে নাগরিকদের নিরাপত্তা।দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার অন্যতম পূর্ব শর্ত হচ্ছে জনগনের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনগনের কাছে জবাবদিহিমূলক সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠা।নির্বাচিত সরকারকে জনগনের প্রতি মুখাপেক্ষী করে দেয়া গেলে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন টেকসই হয়ে উঠে যা গণতান্ত্রিক দেশগুলো সবচেয়ে বড় উদাহরণ।'
তিনি বলেন, ‘সরকারে জনগনের কাছে মুখাপেক্ষী ও দায়বদ্ধ না করে উল্টো নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য এক ধর্মের মানুষকে যদি অন্য ধর্মের মানুষের মুখাপেক্ষী করে দেয়া হয় এতে বরং রাষ্ট্র ও সরকারের অসহায়ত্ব অগণতান্ত্রিক চেহারাই কিন্তু ফুটে উঠে। আমি প্রায়শঃই আমার আালোচনায় একটি কথা বলে থাকি, সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু এগুলো হচ্ছে একটি রাষ্ট্রে ধর্ম-বর্ণ পরিচয়ের ভিত্তিতে নাগরিকদের বৈশিষ্ট্ কিংবা সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য একটি শব্দ মাত্র। খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী আপনি কিংবা আপনারা যারা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে পরিসংখ্যানে আপনি এখন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির সদস্য। একইভাবে আমি এই মুহর্তে ইংল্যান্ডে এখানে আমি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির সদস্য। আপনি ইংল্যান্ডে আসলে … আমি বাংলাদেশে ফিরে গেলে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর এই হিসাবটি সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাবে। এর অর্থ আমাদের যার যার ধর্মীয় বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস যাই থাকুক ভৌ্গোলিক সীমা বেধে দিন শেষে আমরা একই মানুষ। কখনো আমরা সংখ্যালঘু, কখনো আমরা সংখ্যাগুরু। কোনো্ সভ্য রাষ্ট্রে এভাবে নাগরিকদের পরিচয় নির্ধারিত হয় না।'
সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ এক সঙ্গে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে উল্লেখ করে তারেক বলেন, ‘এই দেশটা কোনো ব্যক্তি কিংবা দলের নয়।এদেশটা আমার-আপনার আমাদের সকলের। এদেশটা এদেশের জনগনের।'
ফ্যাসিবাদের পতনের পরে ‘একটি বৈষ্যমহীন, গণতান্ত্রিক, ইনসাফ ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার অপার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে’ মন্তব্য করে ‘সকলকে ঐক্যবদ্ধ’ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
রোমান ক্যাথলিক প্রধান হিসেবে ‘লিও চতুর্থদশ’ পোপ নির্বাচিত হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন,‘‘ আসুন আমরা সকলে প্রত্যাশা করি যুদ্ধ ও ঝংঘা বিক্ষুব্ধ এই বিশ্বে তিনি(পোপ) জনগনের মধ্যে শান্তি ও স্বস্তির বার্তা ছড়িয়ে দেবেন।'
সংগঠনের সভাপতি জন গোমেজের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অনিল লিও কস্তা‘র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে আর্চবিশপ বিজয় এন ডি‘ক্রুজ, বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, বিজন কান্তি সরকার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, গাজীপুর বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন দেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই: খোকন
নরসিংদী প্রতিনিধি
অনির্বাচিত ব্যক্তিদের কাছে দেশ ও জাতি নিরাপদ নয় …

জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য উপহার নিয়ে হাসপাতালে ইশরাক হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন ইশরাক …

এপ্রিল ফুল নয়, ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে হবে : ১২ দলীয় জোট
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের সব গণতান্ত্রিক দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়েছে। দেশের …
