• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

চাঁদা দাবি

এতিমখানা দখল করলেন যুবদল নেতা মামুন চৌধুরী

   ১২ মে ২০২৫, ০৪:৫৮ পি.এম.

মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক
সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই মামুন চৌধুরী ও মিজান চৌধুরী। কসবা উপজেলাধীন লেশিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা ও কুটি ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক মামুন চৌধুরী আর মিজান চৌধুরী মালয়েশিয়া প্রবাসী। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেওয়ার পর থেকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ সম্পর্ক প্রকাশ পেতে শুরু হয়। মালয়েশিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যবসায়ী মিজান চৌধুরীর অর্থায়নে পরিচালিত ‘লেশিয়ারা নূরে মদিনা হাফেজিয়া নূরানীয়া মাদরাসা ও এতিমখানা’ তালা দেবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন মামুন চৌধুরী। 

সম্প্রতি এতিমখানাটি দখল করে বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। পাশাপাশি তিনি এতিমখানা চালু রাখতে তাকে কোটি টাকা চাঁদা দিতে হবে বলেও দাবি করেছেন। তিনি মিজান চৌধুরীর বিরুদ্ধে একেরপর এক মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তাই সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন যে মিজান চৌধুরী আদম ব্যবসায়ের নামে মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের কাছ থেকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। 

যুবদল নেতা মামুন চৌধুরী প্রবাসী মিজান চৌধুরীকে শুধু হেনস্তা করছেন এমন নয়, স্থানীয় পুলিশের সামনেই মিজান চৌধুরীর বাবা হাজী মো: ফারুক চৌধুরীকে মারধর করেছেন তিনি। চাচার কাছে দশ লক্ষ টাকা দাবি করেছেন। চাঁদা না দিলে তাকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করার কথাও বলেছেন। পরবর্তীতে মিজান চৌধুরীর বাবা হাজী ফরুক আহমেদ চৌধুরী বাধ্য হয়ে গত বছর ৪ ডিসেম্বর মামুন চৌধুীর বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছেন। তবে মামলা করা হলেও স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে প্রশাসনের প্রতি চাপ অব্যবাহত রেখেছেন যুবদল নেতা মামুন চৌধুরী।

যোগাযোগ করা হলে মামুন চৌধুরীর ভিওডি বাংলাকে বলেন, ‘মিজান চৌধুরী হচ্ছে আদম ব্যাপারী। তার নামে এলাকায় ১০ থেকে ১৫টি মামলা আছে। আমার নামেও সে মামলা করার চেষ্টা করছে। সে (মিজান চৌধুরী) আওয়ামী লীগের লোক; আওয়ামী লীগের শাসনামলে তাদের ডোনার ছিল। এলাকার অনেক মানুষকে নির্যাতন করেছে এখন বিদেশে লোক নিয়ে কাজ দেয় না। বরং টাকা ফেরত চাইলে মারধর করে। লোকমুখে শুনেছি মিজান চৌধুরী প্রবাসে তার মালিককে হত্যা করে মালিকের সম্পদ ও ব্যবসা দখল করে নিয়েছে। এখন সে অনেক টাকার মালিক। সেই টাকা ব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মিজান চৌধুরী আমার চাচাতো ভাই কিন্তু সে খারাপ প্রকৃতির লোক। আমি এতিমখানা দখল করে রাখিনি, তালাও দেইনি। এতিমখানা তো পূর্ণের কাজ। আমি মুসলমান, আল্লাহ’র গজব পড়বে; এতিমখানা কী মানুষ বন্ধ করে দেয়। একটা মিথ্যা মামলা সাজানোর জন্য এতিমখানা বন্ধের নাটক করছে মিজান। সম্প্রতি এতিমখানা বন্ধ করে দিয়েছি অভিযোগ দেওয়ার পর ঢাকা থেকে সাংবাদিক এসেছিল। তখন মিজান চৌধুরীর বাবা হাজী ফারুক আহমেদ চৌধুরী সাংবাদিককে জানান, ‘ছেলে (মিজান চৌধুরী) টাকা দেয় না তাই এতিমখানা বন্ধ হয়ে গেছে।’ অথচ মিজান চৌধুরী আওয়ামী লীগের শাসনামলে আমার অনেক জায়গা কাগজ থাকার পরও দখল করে রেখেছে। আসল কথা হলো মিজান চৌধুরী সম্পর্কে সত্য জানার পর কেউ তাকে টাকা দিচ্ছে না তাই সে এতিমখানা বন্ধ করে দিয়ে আমার(মামুন চৌধুরী) উপরে দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। যা মিথ্যা ও বানোয়াট।’

মামুন চৌধুরী বলেন, ‘পারিবারিকভাবে সীমানা নিয়ে আমার চাচা অর্থাৎ মিজান চৌধুরীর বাবা আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। নিজেদের মধ্যে মামলা হয়েছে এটাই তো আমাদের জন্য লজ্জা। কিন্তু মিজান চৌধুরী যেহেতু দেশে থাকে না তার তো লজ্জা নেই; সে বাজে লোক ও আদাম ব্যাপারী। মানুষকে কিভাবে প্যাচে পেলে স্বার্থ হাসিল করা যায় সেটাই তার চিন্তা। চাচার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক, কিছুক্ষণ আগেরও চাচা’র সঙ্গে দেখা হয়েছে।’

মিজান চৌধুরী বিদেশে লোক নিয়ে কর্ম না দিয়ে মারধর করেছে বলে মামুন চৌধুরী সেই লোকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। তবে যার ছবি পোস্ট করেছেন সম্প্রতি তিনি ফেসবুক লাইভে এসে উক্ত ঘটনাকে মিথ্যা দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মিজান চৌধুরীর বিরুদ্ধে একেরপর এক মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন মামুন চৌধুরী। তার দুর্ঘটনার ছবি নির্যাতনের ছবি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ সব নোংরামি বন্ধ করা হোক।’ 

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অডিও ফোনকল রেকর্ড ভাইরাল হতে দেখা গেছে। সে ফোনকলে মামুন চৌধুরীকে বলতে শুনা যায়, ‘তার (মিজান চৌধুরী) এতিমখানা আমার নামে হয়ে রয়েছে। তার যদি কোনো বাপ থাকে তাহলে তাকে বলবা এতিমখানার কাগজপত্র নিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমি দুই দিনের মধ্যে এতিমখানায় তালা দিয়ে দিবো। আল্লাহ দিলে সুমন সাহেব (মালয়েশিয়া প্রবাসী) নিরাপদে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। এখন তার (মিজান চৌধুরী) কোনো বাপ থাকলে সে কত কোটি টাকার মালিক হয়েছে এটা আমার সঙ্গে হিসাব করতে বলিও। এতিমখানার জায়গা আমার নামে হয়ে রয়েছে। এখন এতিমখানা চালু করতে হলে আমার সঙ্গে হিসাব-নিকাশ করে চালাতে হবে।’

জানতে চাইলে মিজান চৌধুরী ভিওডি বাংলাকে বলেন, ‘মামুন চৌধুরী আমার চাচাতো ভাই। যে যুবদলের আহ্বায়ক। আমার কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছে না হলে আমার পরিচালিত এতিমখানা মাদ্রাসাটি বন্ধ করে দেবে বলেও হুমকি দিয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন লোকদিয়ে আমার নামে বেশকয়েকটি মামলা দায়ের করেছে। প্রত্যেকটি মামলা মিথ্যা। শুধু মামলা নয়; আমার বাবাকে মারধর করেছে। মামলা করা হয়েছে কিন্তু মামুন চৌধুরী বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা কবির হোসেনের কথা বলে ওসিকে মামলার রিপোর্ট দেওয়া থেকে বিরত রেখেছে। এমনকি আমি নিজেও কসবা থারার ওসিকে কয়েকবার ফোন দিয়েছি কিন্তু তিনি বলেন, মামলার তদন্ত না করতে উপরমহল থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এতিমখানায় তালা দিয়েছে। হুমকি দেয়; মামলা করলে বাবা-মাকে মারধর করা হবে। প্রবাসে নিয়ে মারধর করি এসব কথা মিথ্যা। মূলত সে ক্ষমতার প্রভাবখাটিয়ে এসব করে বেড়াচ্ছে।

মামলার এজাহারে হাজী ফারুক আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, ‘মামুন চৌধুরী জোর পূর্ব আমার নিকট হইতে স্টীলের আলমারীর চাবি নিয়ে আলমারী কুলে ড্রয়ার থেকে নগদ দুই লক্ষ টাকা এবং ৫ বরি স্বর্ণালঙ্কার চিনিয়ে নিয়ে যায়। এবং আমার ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। আমার চিৎকারে স্বাক্ষীগণ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইলে পরবর্তীতে কসবা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে আমি প্রাণে রক্ষা পাই। তবে তারা চলে যাওয়ার সময় এই বলে হুমকি দেয় মামুন চৌধুরী যে, মামলা মোকদ্দমা করিলে আসামিগণ আমিসহ আমার পরিবারের লোকজনকে খুন করিয়ে লাশ গুম করে ফেলবে। এখন ভয়ে আমি ও আমার পরিবারের লোকজন স্বাধীনভাবে হাটে বাজারে চলাফেরা করতে সাহস পাচ্ছি না।’

এদিকে মামলার তদন্ত নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়, বিবাদীগণ কর্তৃক বাদীর (হাজী ফারুক আহমেদ চৌধুরী) ঘর বাড়ি ভাঙ্চুর করে নাই এবং ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে নাই। ঘরের ভিতর থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার চুরি করার বিষয়ে সুনিদিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিবাদী শওকত আলীর বাড়ি ঢাকা এবং বিবাদী অনামিকা চৌধুরী অভিযুক্ত মামুন চৌধুরীর স্ত্রী। অত্র মামলার ঘটনার সময় বিবাদী অনামিকা চৌধুরী ও শওকত আলী ঘটনাস্থলে ছিল না। এবং অত্র মামলার ঘটনার সহিত জড়িত থাকার বিষয়ে সুনিদিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায় নাই।

তবে মামলার তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণে জখমীর এমসি পর্যালোচনায় ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় বাদীর পিটিশনে বর্ণিত বিবাদী ১. মো: মামুন চৌধুরী (৪৪) এর বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৪৪৭/৩২৩/৩৮৫/৫০৬ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়।
ভিওডি বাংলা/ সাইফুল/ এমএইচ

 

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
‘জামায়াত নিষিদ্ধ’ দাবিতে উত্তাল শাহবাগে আ.লীগ নিষিদ্ধের ঝড়
‘জামায়াত নিষিদ্ধ’ দাবিতে উত্তাল শাহবাগে আ.লীগ নিষিদ্ধের ঝড়
মৃত্যুর পর ‘অজ্ঞাত’ হয়ে যায় হাজারো মরদেহ
মৃত্যুর পর ‘অজ্ঞাত’ হয়ে যায় হাজারো মরদেহ
বিএনপিতে বাড়ছে দলীয় কোন্দল!
বিএনপিতে বাড়ছে দলীয় কোন্দল!