• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১
টপ নিউজ
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য উপহার নিয়ে হাসপাতালে ইশরাক হোসেন এপ্রিল ফুল নয়, ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে হবে : ১২ দলীয় জোট খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সেনাপ্রধানের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় উপদেষ্টা ও প্রশাসকমুক্ত সিটি কর্পোরেশন গড়ার আহ্বান ইশরাকের প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না: মঈন খান ঈদের দিনেও আন্দোলনে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মীরা জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের বাসায় তারেক রহমানের ঈদ উপহার নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংকটের আশঙ্কা: বিবিসি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ সেনাপ্রধানের

ফ্যাসিবাদের দেড় দশক উপদেষ্টা ড.খলিল কোথায় ছিলেন প্রশ্ন রিজভীর

   ২২ মে ২০২৫, ০১:৫৫ পি.এম.

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

দেড় দশকের শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড.খলিলুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন,'ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ দেড় দশকের আন্দোলন সংগ্রামের সময় ড. খলিলের নাম কেউ কখনো শুনেনি। সুসময়ে হঠাৎ করেই তিনি উড়ে এসে জুড়ে বসে উপদেষ্টা হয়েছেন। দেড় দশকের শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে দেশে-বিদেশে কোথাও যার কোনো উপস্থিতি ছিলনা, না ছিলো কোন জোরালো বক্তব্য। তার কাছে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত কিনা এসব নিয়ে জনগণের জানার অধিকার রয়েছে।ফ্যাসিবাদের দেড় দশক ড. খলিল কোথায় ছিলেন?

বৃহস্পতিবার(২২ মে)দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন,'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান দেড় দশকের গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের গণমানুষের নেতা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রূপকার, ভয়ংকর মাফিয়া অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বর্বরতম জিঘাংসার শিকার, বাংলাদেশের আপামর জনগণের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে দেশের মানুষ বিস্মিত-হতবাক, উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ  হয়েছেন। ফ্যাসিবাদের প্রতিভূ হাসিনা যেভাবে গণতন্ত্রকে কফিন পরিয়ে তথাকথিত উন্নয়নের ইন্দ্রজাল সৃষ্টির জন্য জিয়া পরিবারকে নিয়ে কুৎসা রটাতেন, উপদেষ্টার এই মন্তব্য যেন তারই পুনরাবৃত্তি। এখনো যেন লোকমানসে উজ্জ্বলতর তারেক রহমানের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করার জন্য প্রতিশোধের চোরা¯্রােতে আঘাত হানার চেষ্টা করা হচ্ছে।  

ড. খলিলুর রহমান যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত জীবন প্রসঙ্গটি যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিমূলক। ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ গাওয়ার মতো ড.খলিলুর রহমান বলেছেন, "কেবলমাত্র আমি আমেরিকায় থেকেছি বলে আমাকে যদি বলা হয় আপনি বিদেশি নাগরিক, তাহলে কালকে তারেক রহমান সাহেবকেও সে কথা বলতে হবে। আমাকে ঢিল নিক্ষেপ করলে সেই ঢিল কিন্তু অন্যের উপর গিয়েও পড়তে পারে।"

তিনি বলেন,'রাস্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ড.খলিলুর রহমানের এহেন বক্তব্য নি:সন্দেহে আত্মগরিমার প্রদর্শন এবং দুরভিসন্ধিমূলক। ড.খলিলুর রহমান তারেক রহমানের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা বিনষ্ট, জনসাধারণকে বিভ্রান্ত এবং মানুষের মাঝে তাঁর মর্যাদা ক্ষুন্ন করার হীন উদ্দেশ্যে নিয়েই এই বক্তব্য রেখেছেন, যা দূর্ভাগ্যজনক বিভ্রান্তির কবলের মধ্যে পড়ে। তাকে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ অনির্বাচিত কর্তৃত্ববাদের অনুকুল সমাজভূমি নয়। তিনি তার কথাবার্তায় আচরণে বিগত কিছু দিনে ধরাকে সরা জ্ঞান করতে শুরু করেছেন। তিনি হয়তো দেশী-বিদেশী কারো স্বার্থ চরিতার্থ করার মিশনে যুক্ত বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয় ছিলো ধ্বংসের শক্তি, জনগণ তা প্রতিহত করেছে। আমরা আর নতুন করে কোন প্রভূত্ববাদের অধিনতার নাগপাশে বন্দি হতে চাইনা।  

এক্ষনে দেশের জনগণের সমুখে প্রশ্ন চিহ্ন দীর্ঘ হচ্ছে যে, খলিলুর রহমানের মতো একজন বিতর্কিত এবং করিডোর-চ্যানেল-বন্দর বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্রের কুশীলব বলে পরিচিত কি করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা’ হিসেবেও নিয়োগ পান?
ড. খলিলুর রহমানের অজানা থাকলেও দেশবাসীর অজানা নয় যে, তারেক রহমানকে কি কারনে কোন পরিস্থিতিতে লন্ডন যেতে হয়েছে। সেখানে থেকে তারেক রহমানকে বিশ্বের নিষ্ঠুরতম একটি জগদ্দল ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন,'এটা সর্বজনবিদিত যে, ওয়ান ইলেভেনের সেনা সমর্থিত তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্মম হত্যা প্রচেষ্টা থেকে পঙ্গু অবস্থায় ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে যান। তখন থেকে তিনি তাঁর পরিবারের সাথে সেখানে বসবাস করছেন। বাংলাদেশ ত্যাগের পর, তারেক রহমানকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে বহু মিথ্যা সাজানো মামলায় জড়ানো হয়েছিল, যার মধ্যে তথাকথিত মানি লন্ডারিং মামলা (২০১১), জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা (২০১৭), ঘোষিত/অঘোষিত সম্পদ মামলা (২০২২) এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা (২০০৪) ছিল অন্যতম। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই নেতার অনুপস্থিতিতে, ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী ক্যাংগারু আদালত তাঁকে সাজা দেয়। দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আদালত মিথ্যা মামলায় প্রদত্ত বেশিরভাগ সাজা বাতিল করেছে।

জনাব তারেক রহমান তাঁর জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশে ফিরতে পারেননি। এখানে আরও উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনের অধীনে পর্যটক, কর্মক্ষেত্র, ছাত্র, বিনিয়োগকারী এবং পরিবার বা শরণার্থী ভিসাসহ ভিসা বিভাগের অধীনে একজন বিদেশী নাগরিকের জন্য যুক্তরাজ্যে স্বল্প সময়ের (ছয় মাস), বর্ধিত সময়ের জন্য বা অনির্দিষ্টকালের জন্য বসবাস করা আইনত বৈধ।

রিজভী বলেন,'বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার স্পষ্ট করে বলেছেন, জনগণের ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। সমর্থন অব্যাহত রাখার পরও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে মনে হচ্ছে এই সমর্থনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ মনে হচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া বাধাতে চায়। 

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন,' প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনুস সাহেবকে বলতে চাই, আপনি এমন একজন ব্যক্তিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বানিয়েছেন দেশের জন্য যার কোন দৃশ্যমান অবদান নেই। তিনিতো বাংলাদেশের জন্য নন, বিদেশের জন্য কাজ করবেন। মানবিক করিডোর বা চ্যানেল নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশকে অস্থির করার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু আমরা তা হতে দেবো না। ড. খলিলের অহেতুক প্রলাপে প্রতীয়মান হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ কেউ সুকৌশলে বাংলাদেশের জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমানের দেশে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনকে অনিরাপদ করে তুলতে চায়। 

তিনি বলেন,'একজন রাজনীতিবিদকে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত জনগণের আদালতে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। জনগণের আদালতে একজন রাজনীতিবিদের জীবন এবং কর্ম খোলা বইয়ের মতো। শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেও তারেক রহমান বিদেশে বসেও দেশের জনগণের সঙ্গে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগ রেখেছেন। কোন পরিস্থিতিতে তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে বিদেশে গিয়েছেন, বিদেশে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন এ সম্পর্কে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসলরা কি নির্দয়-নিমর্মভাবে তারেক রহমানের ওপর অত্যাচার করেছিলো তা দেশবাসী ভুলে যায়নি। বিদেশে থাকা নিয়ে পতিত পলাতক স্বৈরাচারও প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছিলো। সেই সময়ও বিএনপির পক্ষ থেকে বিদেশে জননেতা তারেক রহমানের অবস্থান সম্পর্কে জনগণকে বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছিল।

সুতরাং, ড. খলিল তার নিজের পক্ষে ওঠা প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পলাতক স্বৈরাচারের মতো তারেক রহমানের বিপক্ষে প্রোপাগান্ডার পথ বেছে নিয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা জনগণ মেনে নেবেনা। 

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন,'ফ্যাসিবাদের দেড় দশক ড. খলিল কোথায় ছিলেন? কিভাবে ছিলেন? কোন দেশে ছিলেন? বিদেশে তার স্ট্যাটাস কি ছিল? ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে তার ভূমিকা কি ছিল ? অবশ্যই এসকল প্রশ্নের জবাব জনগণকে জানাতে হবে। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, রাষ্ট্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ নেই। ড. খলিলকে অবিলম্বে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে দেশে-বিদেশে তার অবস্থান সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য দেশের জনগণের সামনে হাজির করতে হবে।

রিজভী বলেন,'ইতোমধ্যেই কথিত মানবিক করিডোর ইস্যু নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশেষ করে ড. খলিলের ভূমিকা নিয়ে দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের মনে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। মানবিক করিডোর নিয়ে গত একমাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একেকজনের একেকরকম বক্তব্য মনে হয় এই সরকার পথ হারিয়ে ফেলেছে।

আমাদের কথা পরিষ্কার, এসব করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নয়। এসব বিষয় বিবেচনার দায়িত্ব জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক নির্বাচিত সরকারের। এই সরকারের নিরপেক্ষতা এবং সরকার পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে এই সরকারের যাদের সম্পর্কে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে, তাদের সম্পর্কে জনসম্মুখে বিস্তারিত তথ্য জনগণের সামনে উপস্থাপন করুন। তারেক রহমানকে নিয়ে ড. খলিলের বক্তব্য গণতন্ত্রের স্থায়ী নিরাপত্তা ও ঐতিহাসিক স্বার্থকতার প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ।  

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম,যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন,আব্দুস সালাম আজাদ,স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ভিওডি বাংলা/এম 

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন নানা দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ: সাইফুল হক
এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন নানা দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ: সাইফুল হক
উপদেষ্টা ও প্রশাসকমুক্ত সিটি কর্পোরেশন গড়ার আহ্বান ইশরাকের
উপদেষ্টা ও প্রশাসকমুক্ত সিটি কর্পোরেশন গড়ার আহ্বান ইশরাকের
প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না: মঈন খান
প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না: মঈন খান