অন্তর্বর্তী সরকারকে ইশরাক
‘শেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, নিজেদের সংশোধন করুন’


নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেছেন, আপনাদের শেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, আপনারা নিজেদের সংশোধন করেন। এ সময় প্রশ্ন রেখে ইশরাক বলেন, সরকার একজন মেয়রকে শপথ পড়াতে যেভাবে ব্যর্থ হয়েছে তিনশ এমপিকে কীভাবে শপথ পড়াবেন তারা।
উচ্চ আদালতের রায় মেনে নিয়ে অবিলম্বে শপথ আয়োজনের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইশরাক হোসেন হোসেন।
তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, অবিলম্বে উচ্চ আদালতের রায় মেনে নিয়ে শপথ আয়োজনের ব্যবস্থা করুন। আর এটি আপনাদের ( অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে) শেষ বারের মতো প্রতি আহবান।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধা কার্যালয় নগর ভবনে ইশরাক হোসেনকে মেয়রেরর বুঝিয়ে দেয়ার দাবীতে টানা অবস্থান কর্মসুচিতে অংশ নিয়ে ইশরাক হোসেন সরকারের প্রতি এই আহবান জানান।
তিনি বলেন, আদালতের রায় পাওয়ার পরও সরকারের কিছু উপদেষ্টা আমার উপর বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। তাদের নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন হয়েছে। অবিলম্বে সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করে শপথ আয়োজন করতে হবে স্থানীয় সরকার বিভাগকে। অন্যথায় উচ্চ আদালতে আদালত অবমাননার বিচার চাওয়া হবে।
এর আগে নগরে আন্দোলনকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে নগরে যান ইশরাক হোসেন। নগর ভবনে আন্দলোনকারী ঢাকাবাসী তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। ইশরাক হোসেনের আগমন, শুভেচ্ছার স্বাগতম, নগর পিতা ইশরাক ভাইকে লাল গোলাপ শুভেচ্ছাসহ মুহুর্মুহু শ্লোগানে মুখরিত হতে থাকে নগর ভবন এলাকা। লাল গালিচা বিছিয়ে ইশরকা হোসেনকে বরণ করে নেন নগর ভবনের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। নগরবাসী, আন্দোলনকারী এবং নগর ভবনে আগতদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন ইশরাক হোসেন।
সকাল থেকেই তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে অবস্থান কর্মসুচি পালন করছেন ঢাকাবাসী। টানা ১৫ দিনের মতো একই দাবিতে নগর ভবনের সামনে অবস্থান করছেন তারা।
ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নগর ভবনের সামনে এসে জমায়েত হতে থাকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নগর ভবনে এসে জড়ো হতে থাকে ঢাকাবাসী। অনেকে আবার বৃষ্টিতে ভিজেই এসে উপস্থিত হয়, ছাতা তিরপল মাথায় নিয়ে বৃষ্টির মাঝেই বিক্ষোভ করেন তারা।
পরে ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে ইশরাক হোসেনের পক্ষে শ্লোগান দিতে থাকেন তারা। অবিলম্বে ইশরাক হোসেনকে শপথ দাও, দিতে হবে, শপথ নিয়ে তাল-বাহানা চলবে না, চলবে না, এক দুই তিন চার, আসিফ তুই গদি ছাড়, আসিফের কালো হাত ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাওসহ প্রভৃতি শ্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে নগর ভবন এলাকা।
একই দাবিতে সকাল সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে ঢাকাবাসীর আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন নগর ভবনের সর্বস্তরের কর্মচারী ইউনিয়ন। টানা ১৪ দিন ধরেই নগর ভবনের প্রত্যেকটা ফটকেই তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অবস্থান কর্মসুচি পালন করছেন তারাও। একই সাথে ঘোষণা দিয়েছেন, ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত এই আন্দলোন চালিয়ে যাবেন তারা।
অবস্থান কর্মসুচিতে অংশ নেয়া ওয়ারীর হাজী আনোয়ার বলেন, আমরা ইশরাকঅকে হাসিনার সাথে লড়াই করে ভোট দিয়েছি, মাগার হাসিনা তাকে সেই চেয়ারে বসবার দেয় নাই। এখন আদালতের রায় নিয়ে আসছি, এই সরকার হাসিনার মতোই আমাগো জনতার মেয়রকে আবার বসবার দিচ্ছে না। তামশা শুরু করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি আন্দোলন করে আমাগো মেয়র আমাদের জন্য শপথ পড়াতে বাধ্য করবো। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি যামুনা।
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ষাটোর্ধ কালাম হাজী ক্ষোভের সাথে জানায়, এই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এই আন্দোলনে আসছি।আর সরকার আগামো নিয়ে মশকড়া শুরু করেছে। এইসব তামাশা কিন্তু আমিরা মানব না। তাড়াতাড়ি আমাদ্রর দাবি মেনে নেন, না হলে ঢাকা অচল করে দিবো।
শ্রমিক ককর্মচারী ইউনিয়নের এক কর্মচারী মোহন জানান, আমাদের দাবি একটাই ইশরাক হোসেনকে মেয়র দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। নাইলে এই নগর ভবনের একটা পাতাও নড়ছে না। আমরা কোন কাজই করবো না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মেয়ের ইশরাককে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া না হয়, ততক্ষন পর্যন্ত আমাদের কেউ কোন কার্যক্রমে অংশ নিবো না।
ঢাকাবাসীর সমন্বয়ক সাবেক সচিব মশিউর রহরমান জানান, এই আন্দোলন আমাদের যৌক্তিক। আমাদের দাবি এক্টাই মেয়র ইশরাককে তার প্রাপ্য দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে, অন্তবর্তীকালীন সরকার এটা নিয়ে নাটক শুরু করেছে। আমারা কোন নাটকের ধার ধারি না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দলোন চলতেই থাকবে। একই সাথে আজকের কর্মসুচি থেকেও উপদেষ্টা আসিফের পদত্যাগ দাবি করেন আন্দোলনকারীরা।
গত ১৪ মে থেকে ইশরাক হোসেবকে মেয়রের দায়িত্ব বায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা অবস্থান কর্মসুচি পালন করে যাচ্ছেন ঢাকাবাসী। এজ।দাবিতে গেল সপ্তাহে দুই দিন যমুনার সামনেও অবস্থান কর্মসুচি পালন করেন ঢাকাবাসী।
গত ২৭ মার্চ ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও ঢাকা ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ইশরাক হোসেনকে সেই গেজেট বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়। বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ ইশরাক হোসেনের শপথ না পড়ানো নিয়ে করা খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের পুর্নাঙ্গ বেঞ্চ।
এর আগে, ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করানো হবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলে আদেশ দেন হাইকোর্টের আপিল বেঞ্চ।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ সংক্রান্ত আবেদন নিষ্পত্তি করে এ পর্যবেক্ষণ দেন।
বুধবার (২৮ মে) ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে করা আবেদন খারিজের যে আদেশ হাইকোর্ট দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানি হয়।
আদালতে ইশরাকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন।
ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নিতে না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদন গত ২২ মে হাইকোর্ট সরাসরি খারিজ করে দেন। বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালত বলেন, রিটকারী আইনজীবী মামুনুর রশিদের এ ধরনের রিট করার এখতিয়ার নেই, এই যুক্তিতে আবেদনটি খারিজ করা হয়। তবে, হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে গত সোমবার আপিল বিভাগে আবেদন করেন রিটকারী আইনজীবী মামুনুর রশিদ। যেখানে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত রাখার অনুরোধ জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন এবং ২ ফেব্রুয়ারি ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ফলাফলে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০২০ সালের ৩ মার্চ আদালতে মামলা করেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন।
দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে, চলতি বছরের ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন। সেই রায়ের ভিত্তিতে ২৭ এপ্রিল ইসির পক্ষ থেকে গেজেট প্রকাশ করা হয়। তবে হাইকোর্টে রায় ও গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করা হলে তা প্রাথমিকভাবে খারিজ হয়ে যায়। সেই আদেশের বিরুদ্ধেই এখন লিভ টু আপিল শুনানি অপেক্ষমাণ।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সেনাপ্রধানের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়
নিজস্ব প্রতিবেদক
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে …

রাতের মধ্যেই কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হবে : আসিফ মাহমুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাতের মধ্যেই কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হবে বলে …

ঈদের দিনেও আন্দোলনে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদের দিনেও চার দফা দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের …
