নির্বাচনের তারিখ না দিলে আমরাই দিয়ে দেব: দুদু

খুলনা প্রতিনিধি
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, আমাদের নেতা বলেছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ডেট না দিলে আমরাই নির্বাচনের ডেট দিয়ে দিব। বিএনপি মাঠে আছে, যুবদল মাঠে আছে, ছাত্রদল মাঠে আছে, মহিলা দল মাঠে আছে। আমরা সবাই মাঠে আছি। তারেক রহমান এখনো চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়নি। চূড়ান্ত ঘোষণা দিলে বুঝবেন। সুতরাং দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানাই।

বৃহস্পতিবার বিকালে খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংককুয়েট হলে ‘গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় জিয়াউর রহমান ’শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 

শামসুজ্জামান দুদু রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, আমরা এখনো ড. ইউনূসের বিরোধিতা করছি না। সমালোচনা করছি। তবে আমাদেরও ধৈর্যের সীমা আছে।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ৭১’ এ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, যুদ্ধ করলেন, আবার যুদ্ধ শেষে সেনাবাহিনীতে ফিরে গেলেন। যুদ্ধ শেষে যোগ্যতা অনুযায়ী তার সেনাবাহিনীর প্রধান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাকে সেনাপ্রধান না করে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষককেই অপমানিত করলেন! জিয়াউর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলেন। বাংলাদেশকে স্বনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। 

শেখ মুজিবর রহমানের রাষ্ট্র পরিচালনার অদূরদর্শিতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সমস্যার সৃষ্টি হলে তিনি বলেছিলেন, তোরা সব বাঙালি হয়ে যা। এতে তখন সমস্যা কমেনি, আরও বেড়ে গিয়েছিল। আর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে বাঙালি-অবাঙালি সকলকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।

শামসুজ্জামান দুদু বিএনপির সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা বিএনপির সমালোচনা করেন! বিএনপি যদি ১৭ বছর আন্দোলনে রাজপথে না থাকত তাহলে এক মাসে শেখ হাসিনার পতন হতো না। বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। সাড়ে ৫ হাজার নেতাকর্মী এখনো ঘুম আছে।

তিনি বলেন, বিএনপি বলেছে আগামীতে যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যায়; আগামীতে আহত-নিহত পরিবারের দায়িত্ব নেবে বিএনপি। আপনারা ইতিহাস পড়েন। না হলে কীভাবে একমাসের অর্জন ছোট করছেন।

শামসুজ্জামান দুদু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নেতার নেতা উল্লেখ করে বলেন, তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে অপেক্ষমাণ জাতির প্রত্যাশাকে পূরণ করেছিলেন। তার রাষ্ট্র ক্ষমতাকালীন সাড়ে ৩ বছরে একটি নয়া পয়সারও দুর্নীতি নেই। আগামী দেড়শ বছরেও তার কোন দুর্নীতি খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি এমন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, যার মৃত্যুর পর একটি প্লট, ব্যাংক ব্যালেন্স বা সম্পদ ছিলনা। তিনি জাতিকে ’বাংলাদেশী’ ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ড. ইউনূস সংস্কারের কথা বলছেন, আগে তো তার সংস্কার হওয়া উচিত। উচ্চ আদালতে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর নির্দেশ দিলেও তিনি ও তার উপদেষ্টা তা হতে দেননি। হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করেছেন। পদত্যাগ নাটক করেছেন। হাসিনার মতো বিনিয়োগ সম্মেলনের নামে ৫ কোটি বিনিয়োগ করেছেন। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ উচ্চারণ করেছেন। আর ড. ইউনূস সরাব আগে গ্রামীণ ব্যাংক, সবার আগে টাকা দেব না ছয়মাসের; সবার আগে বিদেশে লোক পাঠাবো-লাইন্সেস নিবো বলছেন। তিনি রাষ্ট্রের আমন্ত্রণে কোথাও যাননি, ব্যবসার কাজে গেছেন। 

সাম্য হত্যা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা গুপ্ত সংগঠন চালিয়েছে উল্লেখ করে তিনি দ্রুত তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। 

তিনি বলেন, জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সেখানে তাদের স্ত্রীরা ভোট দিলে তা ধানের শীষে যাবে। তাই নারীসহ মানুষের অধিকার আদায়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু,  সাবেক সংসদ সদস্য আলী আসগর লবি, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম। 

বক্তব্য দেন সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী শেখ শামসাদ হোসেন আবিদ, চিকিৎসক হুমায়ারা মুসলিমা বাবলি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাদী।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ