• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

পৃথিবীর সর্বোত্তম দশটি দিন

   ৩০ মে ২০২৫, ০৬:২৩ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

শায়খ ড. আবু তাহের

ইসলামী বর্ষপঞ্জিতে কিছু নির্দিষ্ট সময় রয়েছে যেগুলো আল্লাহ তা‘আলার নিকট বিশেষভাবে প্রিয়। এ সময়গুলো ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা অল্প আমলে বেশি সওয়াব পেতে পারে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময় হল জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন, যেগুলোকে রাসূলুল্লাহ ﷺ “পৃথিবীর সর্বোত্তম দিন” বলে আখ্যায়িত করেছেন। নিচে সেই হাদীসটি রাবীসহ, অনুবাদ, শব্দার্থ, ফিকহসম্মত ব্যাখ্যা ও মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিভঙ্গি আলোকে আলোচনা করা হলো।
عن جابرٍ رضي الله عنه، أنَّ رسولَ اللهِ ﷺ قال:
"أفضلُ أيامِ الدنيا أيَّامُ العشرِ"
قيل: ولا مثلُهنَّ في سبيلِ اللهِ؟
قال: "ولا مثلُهنَّ في سبيلِ اللهِ، إلَّا رجلٌ عفَّرَ وجهَه في التُّرابِ."

জাবির (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “দুনিয়ার সর্বোত্তম দিনসমূহ হল জিলহজের প্রথম দশ দিন।”

কেউ জিজ্ঞেস করল, “আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদে) অংশগ্রহণ করাও কি এর চেয়ে উত্তম নয়?” তিনি বললেন: “না, তবে সেই ব্যক্তি ব্যতীত— যার মুখমণ্ডল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে (অর্থাৎ শহীদ হয়)।”

(সূত্রসমূহ: মুসনাদ আল-বায্জার: হাদীস ২৭৮৬, সহীহ ইবন হিব্বান: ৩৮৫৩, শাইখ আলবানী (রহ.) সিলসিলা সহীহাহ: ১১৪ — হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

শব্দার্থ:

أفضل    সর্বোত্তম
أيام    দিনসমূহ
الدنيا    দুনিয়া/পৃথিবী
العشر    দশ দিন (জিলহজের প্রথম দশ দিন)
في سبيل الله    আল্লাহর রাস্তায়
عفَّر وجهَه في التراب    যার মুখ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে (শহীদ)

মুহাদ্দিসগণের মন্তব্য ও ব্যাখ্যা:

ইমাম ইবন হাজার (রহ.): বলেন, “এই দশ দিনের বিশেষত্ব হলো— এর মধ্যে হজ, কুরবানী, আরাফা, তাকবীর, সিয়াম, সালাত সব একত্রিত হয়েছে, যা অন্য সময়ে হয় না।” - ফাতহুল বারী: ২/৪৫৭

শাইখ আলবানী (রহ.) বলেন,“এই হাদীসটি প্রমাণ করে যে, জিলহজের প্রথম দশ দিন হিজরী বছরের সবচেয়ে বরকতময় সময়। এর মর্যাদা এমনকি
অধিকাংশ জিহাদের চেয়েও বেশি।”- সিলসিলা সহীহাহ: ১১৪


কেন এই দিনগুলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দিন?

১. আল্লাহ শপথ করেছেন এই দশ রাতের:

وَالْفَجْرِ وَلَيَالٍ عَشْرٍ (সূরা আল-ফজর: ১–২)। তাফসিরকারকদের মতে, “لَيَالٍ عَشْرٍ” দ্বারা জিলহজের প্রথম দশ রাত বোঝানো হয়েছে। (ইবন আব্বাস, মুজাহিদ, কাতাদাহ)।

২. আরাফার দিন এই দশকের অন্তর্ভুক্ত, যেদিন সিয়াম রাখলে দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়। -সহীহ মুসলিম: ১১৬২

৩. হজ এই দশকে সংঘটিত হয় — যা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম।

৪. ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.) এর আত্মত্যাগের ইতিহাস এই দশকে স্মরণ করা হয়।

৫. সবচেয়ে সম্মিলিত ইবাদতের সুযোগ রয়েছে: সালাত, সিয়াম, যিকর, তাকবীর, দান, তাওবা, কুরবানী — সব একত্রে পালনযোগ্য।

জিলহজের প্রথম দশ দিন হলো এমন এক ইবাদতময় সময়, যা মুসলিমের জন্য আত্মশুদ্ধি, ক্ষমা ও সওয়াব অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ। রাসূল ﷺ নিজে এই দিনগুলোতে আমলের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন। সুতরাং আমাদের উচিত এই দিনগুলোতে সালাত, সিয়াম, যিকর, তাওবা, তিলাওয়াত, কুরবানী ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

ভিওডি বাংলা/ডিআর

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঈদের চাঁদ দেখলে রাসুল (সা.) যে দোয়া পড়তেন
ঈদের চাঁদ দেখলে রাসুল (সা.) যে দোয়া পড়তেন
জুমার দিনের বিশেষ ৬টি আমল
জুমার দিনের বিশেষ ৬টি আমল
বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা
বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা