পৃথিবীর সর্বোত্তম দশটি দিন


শায়খ ড. আবু তাহের
ইসলামী বর্ষপঞ্জিতে কিছু নির্দিষ্ট সময় রয়েছে যেগুলো আল্লাহ তা‘আলার নিকট বিশেষভাবে প্রিয়। এ সময়গুলো ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা অল্প আমলে বেশি সওয়াব পেতে পারে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময় হল জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন, যেগুলোকে রাসূলুল্লাহ ﷺ “পৃথিবীর সর্বোত্তম দিন” বলে আখ্যায়িত করেছেন। নিচে সেই হাদীসটি রাবীসহ, অনুবাদ, শব্দার্থ, ফিকহসম্মত ব্যাখ্যা ও মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিভঙ্গি আলোকে আলোচনা করা হলো।
عن جابرٍ رضي الله عنه، أنَّ رسولَ اللهِ ﷺ قال:
"أفضلُ أيامِ الدنيا أيَّامُ العشرِ"
قيل: ولا مثلُهنَّ في سبيلِ اللهِ؟
قال: "ولا مثلُهنَّ في سبيلِ اللهِ، إلَّا رجلٌ عفَّرَ وجهَه في التُّرابِ."
জাবির (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “দুনিয়ার সর্বোত্তম দিনসমূহ হল জিলহজের প্রথম দশ দিন।”
কেউ জিজ্ঞেস করল, “আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদে) অংশগ্রহণ করাও কি এর চেয়ে উত্তম নয়?” তিনি বললেন: “না, তবে সেই ব্যক্তি ব্যতীত— যার মুখমণ্ডল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে (অর্থাৎ শহীদ হয়)।”
(সূত্রসমূহ: মুসনাদ আল-বায্জার: হাদীস ২৭৮৬, সহীহ ইবন হিব্বান: ৩৮৫৩, শাইখ আলবানী (রহ.) সিলসিলা সহীহাহ: ১১৪ — হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)
শব্দার্থ:
أفضل সর্বোত্তম
أيام দিনসমূহ
الدنيا দুনিয়া/পৃথিবী
العشر দশ দিন (জিলহজের প্রথম দশ দিন)
في سبيل الله আল্লাহর রাস্তায়
عفَّر وجهَه في التراب যার মুখ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে (শহীদ)
মুহাদ্দিসগণের মন্তব্য ও ব্যাখ্যা:
ইমাম ইবন হাজার (রহ.): বলেন, “এই দশ দিনের বিশেষত্ব হলো— এর মধ্যে হজ, কুরবানী, আরাফা, তাকবীর, সিয়াম, সালাত সব একত্রিত হয়েছে, যা অন্য সময়ে হয় না।” - ফাতহুল বারী: ২/৪৫৭
শাইখ আলবানী (রহ.) বলেন,“এই হাদীসটি প্রমাণ করে যে, জিলহজের প্রথম দশ দিন হিজরী বছরের সবচেয়ে বরকতময় সময়। এর মর্যাদা এমনকি
অধিকাংশ জিহাদের চেয়েও বেশি।”- সিলসিলা সহীহাহ: ১১৪
কেন এই দিনগুলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দিন?
১. আল্লাহ শপথ করেছেন এই দশ রাতের:
وَالْفَجْرِ وَلَيَالٍ عَشْرٍ (সূরা আল-ফজর: ১–২)। তাফসিরকারকদের মতে, “لَيَالٍ عَشْرٍ” দ্বারা জিলহজের প্রথম দশ রাত বোঝানো হয়েছে। (ইবন আব্বাস, মুজাহিদ, কাতাদাহ)।
২. আরাফার দিন এই দশকের অন্তর্ভুক্ত, যেদিন সিয়াম রাখলে দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়। -সহীহ মুসলিম: ১১৬২
৩. হজ এই দশকে সংঘটিত হয় — যা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম।
৪. ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.) এর আত্মত্যাগের ইতিহাস এই দশকে স্মরণ করা হয়।
৫. সবচেয়ে সম্মিলিত ইবাদতের সুযোগ রয়েছে: সালাত, সিয়াম, যিকর, তাকবীর, দান, তাওবা, কুরবানী — সব একত্রে পালনযোগ্য।
জিলহজের প্রথম দশ দিন হলো এমন এক ইবাদতময় সময়, যা মুসলিমের জন্য আত্মশুদ্ধি, ক্ষমা ও সওয়াব অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ। রাসূল ﷺ নিজে এই দিনগুলোতে আমলের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন। সুতরাং আমাদের উচিত এই দিনগুলোতে সালাত, সিয়াম, যিকর, তাওবা, তিলাওয়াত, কুরবানী ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
ভিওডি বাংলা/ডিআর