বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে দখল করে পুকুর খননের অভিযোগ

রাজশাহী প্রতিনিধি: 

রাজশাহীর পুঠিয়ায় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি জোরপূর্বক দখল করে পুকুর খননের অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার (৩০মে) রাতে উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের গোড়াগাছি হিন্দুপাড়ায় অবৈধভাবে ওই পুকুর খননে বাধা দিতে গেলে কৃষকদের ওপর হামলা করা হয়। এতে অন্তত ৫ জন কৃষক আহত হয়েছেন।

পরে গ্রামের লোকজন জোট বেঁধে ধাওয়া দিলে পুকুর খননকারীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।এ সময় কৃষকরা একটি মাটিকাটা যন্ত্র (এসকেভেটর বা ভেকু) ভাঙচুর করে এবং সেখান থেকে বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেন। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পুকুর খননকারী ওই বিএনপি নেতার নাম আবুল কালাম আজাদ। তিনি দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক। তার বাড়ি উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে। তিনি নওপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী।

পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শনিবার সকালে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোনোভাবেই যেন পুকুর খনন করতে না পারে, সেটি নজরদারি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও সেখানে অভিযান চালিয়ে একটি এসকেভেটর মেশিন ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তারপরও তারা গভীর রাতে খনন কাজ করতে গিয়েছিল। তবে কোনোভাবেই সেখানে পুকুর খনন করতে দেওয়া হবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিন্দুপাড়ার জমির এক মালিক বলেন, স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতাকর্মী অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কয়েকজন হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে জমি বর্গা (লিজ) নেয়। কিন্তু বাকি আরো অন্তত ৩৫-৪০ জন জমি বর্গা দেননি।

তার পরেও কৌশলে জমিগুলো শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সনজিব ডাক্তারের নামে লিজ ডিট করে নেয়। পরে তার কাছ থেকে ১০ বছরের জন্য জমিগুলো লিজ হিসেবে ডিট করে নেন দুর্গাপুরের বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ।

তিনি আরও বলেন, অস্ত্রের মুখে ৫/৭ বিঘা জমি লিজ হিসেবে ডিট করে নিলেও প্রায় ২০ বিঘা জমি দখল করে পুকুর খননের কাজ শুরু করে কালামের লোকজন। স্থানীয় বিএনপিকর্মী আসাদুল ইসলাম স্থানীয়ভাবে পুকুর খননের কাজ তদরকির দায়িত্ব পায়।

শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন কৃষকদলের আহ্বায়ক আবু আসাদ বলেন, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে আবুল কালামের লোকজন ভেকু নিয়ে পুকুর খনন শুরু করে। এ সময় স্থানীয় কৃষকরা গিয়ে বাধা দেয়। এরপর কালাম বাহিনী অস্ত্র নিয়ে কৃষকদের ধাওয়া দেয়। খবর পেয়ে ইউনিয়ন কৃষকদলের নেতাকর্মীরা কৃষকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পুকুর খননকারীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় তারা পালিয়ে যায়। দুই দফায় হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় কৃষকসহ অন্তত ৫জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে শাওন, রবিউল, মোস্তাফিজুর ও ভেকু চালক রকিবকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তবে বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ের দিকে জমিগুলো সনজিব ডাক্তার ও তার ভাই পুকুর খননের জন্য লিজ নিয়েছিলেন। কিন্তু পট পরিবর্তনের কারণে তারা পুকুর খনন করতে পারেননি। সম্প্রতি সনিজব আমাকে জমিগুলো ১০ বছরের জন্য লিজ দেন। এরপরও আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করি। জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পুকুর খনন কাজ শুরু করি। হিন্দুদের জমি দখল করে পুকুর খননের প্রশ্নই আসে না।

আবুল কালাম আরও বলেন, আমার কাছ থেকে কৃষকদল নেতা আবু আসাদ মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় তারা আমার লোকজনের ওপর হামলা করে। এ সময় তারা আমার ভেকু ভাঙচুর করে এবং এর চালককে মেরে জখম করে।

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ কে এম নুর হোসেন নির্ঝর বলেন, পুঠিয়া উপজেলায় কোনো পুকুর খননের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এসব অবৈধ পুকুর খননের বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোনোভাবেই কাউকে পুকুর খনন করতে দেওয়া হবে না।

ভিওডি বাংলা/এম