সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ ঈদ উদযাপন

ডেস্ক রিপোর্ট

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন। প্রতিবছরের মতো এবারও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে রংপুর, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর, ফেনী, শরীয়তপুর, এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে বিশেষভাবে এই উদযাপন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ সৌদি আরবের চাঁদ দেখা এবং ধর্মীয় রীতির সঙ্গে মিল রেখে ঈদ পালন করেন। তারা প্রথাগতভাবে এই দিনটি পালন করে আসছেন এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনসহ ঈদ জামাতের মাধ্যমে নিজেদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।

রংপুর অঞ্চল: 
রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার ১২০ গ্রামের দুই লাখেরও বেশি মানুষ আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করেছেন। সকাল ৯টার দিকে এসব গ্রামের ঈদগা ও মাঠে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক বছর ধরে তারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন।

রংপুর বিভাগীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, লালমনিরহাটে ১৫টি, কুড়িগ্রামে ২৫টি, রংপুরে ২২টি, গাইবান্ধায় ২৮টি এবং নীলফামারীতে ৩০টি গ্রামে আজ ঈদ উদযাপিত হয়েছে।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের ঈদগা মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল সাত্তার বলেন, ‘সৌদি আরব ইসলামের কেন্দ্র। আমরা মনে করি, তাদের অনুসরণ করা উচিত। তাই আমরা এভাবে ঈদ উদযাপন করি।’

একই উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামের ইমাম মাওলানা আব্দুল মাজেদ বলেন, "২০১১ সাল থেকে আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদসহ ধর্মীয় রীতি পালন করছি।"

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, "সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে যেসব গ্রামে ঈদ উদযাপন হয়েছে, সেখানে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। সবাই যেন নির্বিঘ্নে ঈদ পালন করতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রশাসন সচেষ্ট ছিল।"

সাতক্ষীরা:
এদিকে সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, জেলার ২০ গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ সকালে ঈদুল আজহা উদযাপন করা হচ্ছে। সকাল আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে জেলার বিভিন্ন মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরায় ২০ গ্রামে সৌদি আরবের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে। তারা বংশপরম্পরায় এই নিয়ম অনুসরণ করে আসছেন।

চাঁদপুর: 
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, আজ জেলার অর্ধশত গ্রামে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। সাদ্রা দরবার শরীফ মাঠে সকাল ৮টায় প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। পাশের উপজেলা ফরিদগঞ্জের টোর মুন্সীর হাট, সাচনমেঘ ও উভরামপুর গ্রামের একাধিক ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, শাহরাস্তি ও মতলব উত্তর উপজেলায় সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

ফেনী:
এদিকে ফেনীর তিনটি পৃথক স্থানে ঈদুল আজহা উদযাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেইল প্রতিনিধি। এগুলো হলো-ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদ নগর ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুর সাত নং ওয়ার্ডে দুটি পাড়ায় ও পরশুরাম পৌরসভার কোলাপাড়া ছয়ঘরিয়া এলাকা।

পরশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল হাকিম জানান, ফেনীর পরশুরাম পৌরসভার কোলাপাড়া ছয়ঘরিয়া এলাকায় গত কয়েক বছর থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে।

শরীয়তপুর: 

শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন,  শুক্রবার (৬ জুন) সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বরী দরবার শরীফ মাঠে ঈদুল আজহা উদযাপন করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় এবং ১০টায় প্রধান জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের নামাজ শেষে শাহ্ সুরেশ্বরী (রা.) অনুসারীরা ভুনা খিচুড়ি, সেমাইসহ মিষ্টি খাবার খেয়ে ঈদ উদযাপন করেন, তবে তারা কোনো পশু কোরবানি দেন না।

সুরেশ্বরী দরবার শরীফের গদীনিশীন পীর সৈয়দ তৌহিদুল হোসাইন শাহীন নূরী বলেন, “আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করি, তবে আমাদের লক্ষ্য পশু কোরবানি না, বরং ভেতরের পশুত্ব কোরবানি করা।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: 

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করেছে শতাধিক পরিবার। সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের মোমিন টোল ও বাগানপাড়া এবং শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের রাধানগর ও ছিয়াত্তর বিঘি গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। শিবগঞ্জের ছিয়াত্তর বিঘি এলাকায় একটি আমবাগানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ইমামতি করেন ইউসুফ আলী। নামাজ শেষে কোরবানি সম্পন্ন হয় এবং এলাকায় উৎসবের আবহ তৈরি হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মো. গোলাম মোস্তাফা জানান, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশে ঈদ উদযাপনের রেওয়াজ আছে।

নওগাঁ:

নওগাঁ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শুক্রবার (৬ জুন) জেলার পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার কলনিপাড়া এলাকায় সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদুল আজহা জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ৮টায় মাওলানা মো. কামারুজ্জামান ইমামতি করেন।

জামাতে অংশ নিতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা ভ্যান, সাইকেল ও মোটরসাইকেলে করে আসেন। নামাজ শেষে পশু কোরবানি দেওয়া হয়। আয়োজক কমিটির সভাপতি বাবু জানান, গত ১০ বছর ধরে তারা সৌদি আরবের সাথে মিলিয়ে ঈদ উদযাপন করে আসছেন এবং রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করেন।

ভিওডি বাংলা/ডিআর