• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

নির্বাচন ঘিরে তারেক রহমানের বার্তা

   ১৯ জুন ২০২৫, ১১:১৪ এ.এম.
ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আবারও মানুষের মন জয়ের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। তাই মানুষ পছন্দ করে না এমন কর্মকাণ্ড তথা যে কোনো ধরনের অপকর্ম রোধে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে দলটি। নতুন অবস্থানের আলোকে কমিটি গঠন কিংবা আধিপত্য বিস্তারসহ কোনো ধরনের সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলাই বরদাশত করা হবে না। যত বড় ত্যাগী নেতাই হোক না কেন, যতই মামলা কিংবা জেল-জুলুমের শিকার হোক না কেন, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে দলীয় এমন কঠোর অবস্থানের কথা জানান তারেক রহমান। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এছাড়াও নিয়মিত টকশোতে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতা এবং দলপন্থি পেশাজীবী নেতাদের নিয়ে দলের মিডিয়া সেলের আয়োজনে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

জানা গেছে, কর্মশালায় লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের পাশাপাশি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা, সামনের চ্যালেঞ্জ ও শঙ্কাগুলো কী এবং এখান থেকে উত্তরণের উপায় কী, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

বিএনপির প্রত্যাশা, সামনের নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে তারা সরকার গঠন করবে। তাই একটি দিনও তারা নষ্ট করতে চায় না। সে অনুযায়ী আগামীতে ক্ষমতায় গেলে প্রথম ১৮০ দিনের অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা কী হবে, এরই মধ্যে তা ঘোষণা করেছে দলটি। দেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, মানুষের আস্থা অর্জন এবং ভবিষ্যতের জন্য দৃঢ় ভিত্তি গড়তেই স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও উদ্ভাবনী এই অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই কর্মপরিকল্পনার ভেতরে শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থসেবা, নারীর ক্ষমতায়, শহীদদের স্বীকৃতি, কৃষি খাত ও গ্রামীণ উন্নয়ন, শিল্প খাত, তথ্যপ্রযুক্তি খাত, প্রবাসী কল্যাণ, নগর ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলাকে অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিএনপি। এ ছাড়া সরকার গঠন করতে পারলে প্রথম ১৮ মাসে বিএনপি ১ কোটি কর্মসংস্থান বা চাকরির ব্যবস্থা করবে। ২০৩৪ সালে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ১ ট্রিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছে বিএনপি। তারেক রহমান এগুলো নিয়ে কাজ করছেন বলে কর্মশালায় জানান।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের অভিমত, বর্তমানে অর্থনীতি হলো দেশের একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের অর্থনীতির ভান্ডার বলতে গেলে একেবারে শূন্য। সব সূচক নিচের দিকে, দারিদ্র্য বাড়ছে, মানুষের আয় কমে গেছে, বিনিয়োগ নেই, অনেক মিল-কলকারখানা, গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে কর্মশালায় বলা হয়, গত এক বছরে এক লাখ পোশাক শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয় কর্মশালায়।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসছে—এই আত্মতৃপ্তি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে আপনারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন, বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে জনগণের কাছে আপনারা কমিটমেন্ট করছেন, আপনাদেরই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় বের করতে হবে।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা অভিমত ব্যক্ত করেন, লন্ডন বৈঠকের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে আসার ব্যাপারে ঐকমত্য হওয়ায় দেশে স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে এসেছে। নির্বাচনের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। তবে যারা এটা চায়নি, তাদের থেকে চ্যালেঞ্জ আছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্মশালায় কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নেতাদের উদ্দেশে বলেন, দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কোনো বিশৃঙ্খলা বরদাশত করা যাবে না, তিনি যত বড় ত্যাগী নেতাই হোন, যত মামলা থাকুক কিংবা যতই জেল-জুলুমের শিকার হোন—অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের আইনের হাতে তুলে দিতে হবে।

তারেক রহমান আরও বলেন, দুই-চারজন অপকর্মকারীর জন্য বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে, মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে। এর দায়-দায়িত্ব কেন আমরা নেব। আমরা রাজনীতি করি জনগণের কল্যাণের জন্য, আমরা নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিই। আমরা আওয়ামী লীগের মতো মাস্তানি-গুন্ডামি করার শিক্ষা দিই না।

তিনি বলেন, অনেকে মনে করছে, আওয়ামী লীগ তো নেই। সামনে নির্বাচন হলে বিএনপিই তো ক্ষমতায় আসবে। ভোট তো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। সে কারণে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। আমি তাদের বলব, ভোটকে ভোট হিসেবেই নিতে হবে। আগামীর নির্বাচন মোটেই সহজ হবে না। মানুষের মন জয় করেই তাদের ভোট নিতে হবে। কীসের কমিটি নিয়ে গন্ডগোল, কীসের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ। বিএনপি আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি করে না। মানুষও এগুলো পছন্দ করে না। আপনারা সব জায়গায় এই বার্তা পৌঁছে দেন, আমার এই কথার প্রতিধ্বনি করেন।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নিহতদের স্মরণে সিলেট জেলা বিএনপির দোয়া মাহফিল
নিহতদের স্মরণে সিলেট জেলা বিএনপির দোয়া মাহফিল
হতাহতদের জন্য ‘রক্ত সংগ্রহের তালিকায়’ প্রশংসা কুড়াচ্ছে ছাত্রদল
হতাহতদের জন্য ‘রক্ত সংগ্রহের তালিকায়’ প্রশংসা কুড়াচ্ছে ছাত্রদল
উপদেষ্টাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ দেখছি : নাহিদ
উপদেষ্টাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ দেখছি : নাহিদ