গোপনে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন নারীর সঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তিনি তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। জানা গেছে, শুক্রবার বিকাল থেকে শরীয়তপুরে আর দেখা যায়নি তাকে। এমন অবস্থায় তাকে ওএসডি করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। রোববারের (২১ জুন) মধ্যে তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হতে পারে বলে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাসুদুল আলম জানান, “শুক্রবার বিকাল থেকে ডিসি স্যারের অবস্থান শরীয়তপুর জেলায় নেই। কোথায় গেছেন সে সম্পর্কে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।”

কে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে সার্বিক দায়িত্বে থাকা এডিসি বলতে পারবেন।”

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আসলাম হোসাইন জানান, “গতকাল বিকাল স্যার অফিস শেষে নিজ বাসভবনে ফিরলেও বর্তমানে তিনি শরীয়তপুরে অবস্থান করছেন না। তার অবস্থান সংক্রান্ত কোনো আপডেট আমার কাছে নেই।”

জেলা প্রশাসকের সরকারি মোবাইল নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

ইতিমধ্যে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ডিসি আশরাফ উদ্দিন এক নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থানে আছেন। ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপটিতে তাকে শার্টের বোতাম খোলা অবস্থায় সেই নারীকে কোলে তুলে নিয়ে চুম্বন করতে দেখা যায়। আরও জানা গেছে, ভিডিও কলেও তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সেই নারী।

ভুক্তভোগী নারীর দাবি, জেলা প্রশাসক তাকে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং তার দাম্পত্য জীবন ভেঙে দেন। তার ভাষায়, “তিনি আমাকে আমার স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্স করিয়ে নিজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েন, এখন বিয়ের প্রতিশ্রুতি অস্বীকার করে হুমকি দিচ্ছেন।”

জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতেই ডিসি স্যার গোপনে জেলা ত্যাগ করেছেন বলে শুনেছি।”

প্রবাসী সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি প্রকাশ করে জানান, “এই ভিডিও এবং ছবিগুলো ডিসি নিজেই ধারণ করেছেন। ওই নারীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরে তা অস্বীকার করেন।”

এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন ছাত্র ও সামাজিক সংগঠন থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির বলেন, “একজন জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে এমন আচরণ জাতির কাছে লজ্জাজনক। ভিডিওটির কারণে জেলার ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।”

প্রসঙ্গত, আশরাফ উদ্দিন ২৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর থেকে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এর আগে তিনি নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ট্রাস্টের পরিচালক পদে ছিলেন।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি, তবে সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা চলমান রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ