• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে আ’লীগের লাভ বেশি

   ৪ জুলাই ২০২৫, ০৫:৪১ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনি ব্যবস্থা নাকি সরাসরি ভোট এ নিয়ে দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান এখন দৃশ্যমান। বিএনপি এবং এর মিত্র কিছু দল সংসদীয় আসনে সরাসরি ভোটের বিদ্যমান ব্যবস্থার পক্ষেই রয়েছে। কিন্তু জামায়াতসহ ইসলামপন্থি বিভিন্ন দল ও কিছু বামপন্থি দলও সংখ্যানুপাতিক হারে ভোট এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিকে সামনে এনেছে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগও পরোক্ষভাবে উপকৃত হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এবারের নির্বাচনে সংসদে আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে একাট্টা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচন পদ্ধতিকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দৃশ্যত যে বিভক্তি তৈরি হচ্ছে সেটিকে আওয়ামী লীগ যেন সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে না পারে।   

গণমাধ্যমকর্মী রাসেল মনে করছেন পিআর পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগ দ্রুত ফিরবে। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থায় আওয়ামী লীগের ফিরে আসা সবচেয়ে সহজ হবে এবং দ্রুত ঘটবে। ভোট বেশি পেয়ে বিএনপি হয়তো সরকার গঠন করবে কিন্তু প্রধান বিরোধী দল হবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কোনো দল। জামায়াত ও ইসলামপন্থীরা তৃতীয় নাম্বার দল হিসেবেই থাকবে।

এই গণমাধ্যমকর্মীর মতে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচন না করতে পারলেও আওয়ামী লীগের পারপাস সার্ভ করবে এমন দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। যেমন সিপিবি, কাদের সিদ্দিকী। এছাড়াও ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা নির্বাচন করবে বলেই মনে হচ্ছে। এদেরকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যাবে না। দেশে এখনো লীগের ২০-৩০ শতাংশ ভোট আছে। ভোটের হার কম-বেশি হতে পারে, কিন্তু দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট লীগেরই। 

এই বিপুল ভোট নিয়ে নির্বাচনের আগে সিপিবি টাইপের কোনো দলকে আওয়ামী সমর্থন দিয়ে দেবে। লীগের সব ভোট চলে যাবে এক বক্সে। দেখা যাবে শ'খানেক সিট পেয়ে গেছে। এখন তারা তাদের ইচ্ছা মতো সংসদ সদস্য বানাবে। সাজা হয়নি এমন আওয়ামী লীগের নেতাও সংসদ সদস্য হয়ে যেতে পারে। কোনো আইন দিয়ে তো তাদের আটকানো যাবে না। অদৃশ্যভাবে আওয়ামী লীগই সেই দল চালাবে।
 
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিভিন্ন পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। পিআর পদ্ধতি সেই চেষ্টার অংশ কি না তা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। গণমাধ্যমকর্মী একরাম হোসেন আরও লিখেছেন, চরমোনাই পীর পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন হতে দেবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কিন্তু বিগত সরকারের সময় চরমোনাই পীরকে আমরা আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসেবেই কাজ করতে দেখেছি। নানাভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পারপাস সার্ভ করতে দেখেছি। আরও কয়েকটি ছোট দল আছে যারা উপরে উপরে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করত। কিন্তু তাদের এই বিরোধিতার কারণে লাভবান হয়েছে লীগ। এসব দল এজেন্সি দ্বারা পরিচালিত হতো বলে ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত জানতাম। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তারা বিশাল বিপ্লবী হয়ে গেছে। পিআর পদ্ধতির এজেন্ডা দিয়ে সবাই একসাথে মাঠে নেমেছে নাকি— সেই সন্দেহ খারিজ করা যাচ্ছে না।

পিআর পদ্ধতি যারা যে কারণে চাইছে: জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি ইসলামপন্থি দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনি ব্যবস্থার দাবি নিয়ে এক ধরনের জোটগতভাবে একটা অবস্থান তুলে ধরতে চাইছে। এর সঙ্গে নুরুল হক নূরের গণঅধিকার পরিষদও রয়েছে। 

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, এবারের জাতীয় নির্বাচনেই এই পদ্ধতি চালুর দাবি তারা করছেন। এই দাবির পক্ষের অন্য দলগুলোর একাধিক নেতা গণমাধ্যমে বলেছেন, নির্বাচনের পদ্ধতি বদলানো এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি তুলে তারা সরকার ও একইসঙ্গে বিএনপির ওপর চাপ তৈরি করতে চাইছেন। এছাড়া বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার চিন্তাও ওই দলগুলোর মধ্যে কাজ করছে। সেজন্য ইসলামী দলগুলোর নির্বাচনি জোট করার যে চেষ্টা ছিল, এর অংশ হিসেবেও এসব দাবি সামনে আনা হচ্ছে। 

সম্প্রতি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনি ব্যবস্থা চালু করা ও আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন ঢাকায় একটি সমাবেশ করেছে। সেই সমাবেশে জামায়াত, খেলাফত মজলিস ও গণঅধিকার পরিষদসহ ইসলামি দলগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তারা অংশ নিয়েছেন। 

কিন্তু বিএনপি ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ওই সমাবেশে আমন্ত্রণ জানায়নি ইসলামী আন্দোলন। দলটি বলেছে, বিএনপি যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ বা আনুপাতিক ভোটের দাবির পক্ষে নয়, সেজন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অন্যদিকে, বিএনপি নেতারা বলছেন, ভোটের এ পদ্ধতি তারা কোনোভাবে মেনে নেবেন না। বিশ্লেষকেরা দলগুলোর এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানকে রাজনীতিতে বিভক্তি হিসেবে দেখছেন। আর এই বিভক্তি যেন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে সুযোগ করে না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর।  

ইসলামি দলগুলো নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন চাওয়ার কারণ: এই দলগুলো বলছে, আনুপতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে একটি নির্বাচনে দেওয়া প্রত্যেকটি ভোট কাজে লাগে এবং প্রতিটি ভোট সংসদে সমানভাবে প্রতিনিধিত্ব করে। তাছাড়া একটি নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ও হারের ভিত্তিতে সংসদে আসন বণ্টন হয়। 

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, এ পদ্ধতিতে স্বৈরাচার বা কতৃত্ববাদী হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু সরাসরি ভোটের ব্যবস্থায় কোনো দল ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে যদি সরকার গঠন করে, ওই দল তখন ৫০ শতাংশ ভোট পাওয়া অন্য দলগুলোকে বাদ দিয়ে একক অধিপত্য বিস্তার করে। সেজন্য তারা এর পরিবর্তন চান। কিন্তু এখন পদ্ধতি পরিবর্তনের দাবি তোলার পেছনে নির্বাচন প্রলম্বিত করা বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল যে সব অভিযোগ করছে, সে অভিযোগ মানতে রাজি নন জামায়াতের আমির।

দলটির আরেক নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, কোনো দল সর্বনিম্ন এক শতাংশ ভোট পেলেই সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পাবে, এই প্রস্তাব তারা করেছেন। ফলে বেশিরভাগ দল প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে বলে তারা মনে করছেন। ফলে ছোট দলগুলোর এই পদ্ধতি আগ্রহ বেশি। কারণ এমন অনেক দলের আসনভিত্তিক সরাসরি ভোটে জিতে আসা কঠিন। বামপন্থি বিভিন্ন দলও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পক্ষে।

আনুপাতিক পদ্ধতির ভোটে ব্যালটে প্রার্থী থাকবেন না। দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সেই অনুপাতে আসন বণ্টন হবে। বিশ্বের ১৭০টি দেশের মধ্যে ৯১টি দেশে আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা প্রচলিত। এ অঞ্চলে নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় এ পদ্ধতি চালু রয়েছে। 

তবে বিএনপি ও এর মিত্র দলগুলো বলছে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এ পদ্ধতি চালু করতে আরও অনেকে সময় প্রয়োজন।

ভিওডি বাংলা/ এমপি

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
জাতীয় ঐক্যের প্রতীক খালেদা জিয়া
জাতীয় ঐক্যের প্রতীক খালেদা জিয়া
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ঈদুল আজহা
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ঈদুল আজহা
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তিন কর্মকর্তার সিন্ডিকেট
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তিন কর্মকর্তার সিন্ডিকেট