• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

কারাগারে বসেই মেসেঞ্জার-হোয়াটসঅ্যাপে সক্রিয় বন্দিরা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি    ২৫ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩৬ পি.এম.

কারাগার যেখানে বাইরের জগতের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ থাকার কথা নয়। অথচ সেই নিরাপত্তাবেষ্টিত স্থান থেকেই মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, এমনকি ফেসবুক ব্যবহার করছেন বন্দিরা। শুধু ব্যবহার নয়, ভয়েস ও ভিডিও কলে চলছে অপরাধের পরিকল্পনা। কারাগার থেকে বের না হয়েও অপরাধচক্রের সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ রাখছেন তারা। সম্প্রতি ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, সিম কার্ড এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

মোবাইলের কল লিস্ট ও মেসেজ ঘেটে দেখা গেছে, ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে চলেছে নানা যোগাযোগ, লেনদেন ও নির্দেশনা। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা কারাগারের দায়িত্বরত কয়েকজনকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে অ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে বন্দিরা বাইরে থাকা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। অনেকে আবার হুমকি, চাঁদাবাজি ও প্রতারণার মতো অপরাধেও জড়াচ্ছে কারাগার থেকেই। সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত করছে তারা। কারাগারের অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অনেক বন্দির কাছে নির্বিঘ্নে পৌঁছে যাচ্ছে মাদক। কারাগারে এখন টাকা হলে সবকিছুই মিলছে।

সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু কারাগারে বসেই অ্যানড্রয়েড মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্নজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ ছাড়া আরও কয়েকজন প্রভাবশালী বন্দি কারাগারে বসে অ্যানড্রয়েড মোবাইলে মেসেঞ্জার-হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, কারাগারে প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নেই। ফলে স্মার্ট মোবাইল চোরাচালানে বাধা দেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারারক্ষীদের দুর্বলতা এর অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

কারাগার শুধু বন্দিদের রাখার জায়গা নয়, এটি একটি সংশোধন কেন্দ্র। অথচ সেখানে বসেই যখন বন্দিরা মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন কারাগার অপরাধের ঘাঁটি হয়ে উঠবে।

মানবাধিকারকর্মী আমিনুর রহমান টুকু বলেন, কারাগারে বন্দিদের হাতে অ্যানড্রয়েড মোবাইল থাকা শুধুই নিয়ম লঙ্ঘন নয়, এটি পুরো আইন-শৃঙ্খলাব্যবস্থার জন্য হুমকি। এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে কারাগার এখন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এর মাধ্যমে বন্দিরা শুধু অপরাধ সংঘটিত করছে না, বাইরের বর্তমান পরিস্থিতি প্রভাবিত করছে। কারাগারে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর কারা কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারি প্রয়োজন। তা না হলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. জাকারিয়া বলেন, বিধি অনুযায়ী একজন বন্দি কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী তার পরিবারের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে পারবে। তবে বন্দিদের অ্যানড্রয়েড মোবাইলের মাধ্যমে মেসেঞ্জার-হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা আইনগত অপরাধ। কারা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ ছাড়া কোনো বন্দি এমন ঘটনা ঘটাতে পারে না। এটা উদ্বেগজনক। তাই এসব বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।

অভিযোগের বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার আবু ইউসুফ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বি এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি জানার পর জেলা কারাগারের দায়িত্বরত কয়েকজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া একজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে আমরা বন্দিদের হোয়াটসঅ্যাপ-মেসেঞ্জার ব্যবহার করার তথ্য সংগ্রহ করছি। কারাগারের দায়িত্বরত যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বন্দিদের সহযোগিতা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করব।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়