আমি কারো মতো হতে চাই না- সারজিস আলম


জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম সোমবার (২৮ জুলাই) ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ভিওডি বাংলা পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
সারজিস লিখেছেন, ‘গত পরশুদিন চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে প্রায় ৬০০+ শহীদ পরিবারের সাথে দেখা ও কথা হয়েছিল। কয়েকজন আহত ভাইদের সাথেও কথা হয়েছিল। তাদের কথা অনেকটা এরকম- ভাই আমরা এখন যারা গুরুতর আহত আছি কিংবা অঙ্গহানি হয়েছে আমরা নিজেদের এবং পরিবারের কাছে অনেকটা জিন্দালাশ। এখন পর্যন্ত অনেকের দশ, বিশ, পঞ্চাশ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। অনেকে অনেকভাবে ধার-দেনা করে বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়েছি, অনেকে ঋণগ্রস্ত কিন্তু সরকার কিংবা ফাউন্ডেশন থেকে এখন পর্যন্ত ১ থেকে ৩ লাখ টাকা আর কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে, বাইরে চিকিৎসার জন্য বেশি দেওয়া হয়েছে। যেটা দিয়ে আসলে অধিকাংশ গুরুতর আহতর পর্যাপ্ত কিছু হয়নি।’
সারজিস জানান, ‘এদের মধ্যে একজন ছিলেন যিনি সিএমএইচে প্রায় ছয় মাস চিকিৎসা করিয়ে এখন বাসায় থাকছেন। তিনি আমাকে গতকালকে দেওয়া পোস্ট এর তথ্যগুলো বলেছিলেন। দুইটা জায়গা থেকে ফ্যাক্টচেক করে তথ্যগুলোর অনেকটা সত্যতা পাই এবং একটা পোস্ট দিয়েছি। কিন্তু এই এক পোস্টকে যেভাবে রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত দর্শন, পলিটিকাল কোরাম, আদর্শভিত্তিক বিভাজন থেকে যে যার মতো করে ব্যাখ্যা করলো, তা রীতিমতো অবাক করার বিষয়!’
কাউকে অন্ধভাবে প্রতিপক্ষ মনে করেন না জানিয়ে সারজিস বলেন, ‘আমার কোন প্রতিপক্ষের ৯৯টা খারাপ দিকের পাশাপাশি যদি ১ ভালো দিক থাকে আমি যেমন সেই ৯৯টা খারাপ দিক নিয়ে যৌক্তিক সমালোচনা করব তেমনি ১টা ভালো দিক এড্রেস করার সৎ সাহসও আমি দেখাতে চাই। কাউকে অন্ধভাবে আমি প্রতিপক্ষ মনে করি না। আওয়ামী লীগ তার এক যুগের অধিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী, ডিজিএফআই, র্যাব এসবকে ব্যবহার করে গুম, খুন, ক্রসফায়ার, আয়নাঘর, জঙ্গি নাটক মঞ্চায়নসহ যত বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এসব আমি নির্দ্বিধায় মুখের উপরে বলেছি এবং বলবো। আবার ৫ আগস্ট এর পরবর্তী সময়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা একটা ন্যূনতম স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে সেনাবাহিনী মাঠ পর্যায়ে যে ভূমিকা রেখেছে সেটা বলতেও আমি দ্বিধান্বিত হবো না। চাপে পড়ে করুক আর এমনিতেই করুক। ভালো একটা বললে খারাপগুলো নাই হয়ে যায় না।’
এনসিপির এই নেতা লিখেছেন, ‘সেনাপ্রধান হোক আর অন্য যে কেউ হোক, আওয়ামী লীগ নামে হোক কিংবা রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নামে হোক এই বাংলাদেশে বিডিআর, শাপলা, জুলাইয়ের মতো গণহত্যা ঘটানো ফ্যাসিস্ট লীগারদের ফিরে আসার আর কোন সুযোগ দেওয়া হবে না এবং যারা এই অপচেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধেই আমরা রুখে দাঁড়াবো ইনশাল্লাহ। মোহাম্মদ ইশরাক ভাই গতকাল তার একটা পোষ্টের ক্যাপশনে লিখেছিলেন- আরিফদের সমস্যা হচ্ছে আরিফরা সত্যকেই রাজনীতি মনে করে। অথচ সত্য রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে না বরং রাজনীতি সত্যকে নিয়ন্ত্রণ করে (নাম পরিবর্তন করে)।’
সারজিস বলেন, ‘আমার এই অল্পদিনের একটা রিয়েলাইজেশন হচ্ছে এটা একটা চরম সত্য কথা। আপনি যত ভালো মানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করতে চান না কেন; আপনার রাজনীতি, কথা কিংবা কাজ যদি ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত, দলগত, আদর্শভিত্তিক কিংবা অন্য কোন দিক থেকে কারো জন্য পটেনশিয়াল থ্রেট মনে হয় তাহলে আপনার যেকোনো ভালো উদ্দেশ্যের একটা কথা বা কাজকেও অনেক খারাপভাবে রিপ্রেজেন্ট করা হতে পারে, ধ্বংসাত্মক ন্যারেটিভ দাঁড় করাতে পারে, ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুজে দিতে পারে, ইন্টার্নাল নেগোসিয়েশনের ছক তুলে ধরতে পারে! অথচ আপনি দেখবেন এর কোনো কিছুর সাথেই আপনার বিন্দু-বিসর্গ কোনো সম্পর্ক নাই।’
স্ট্যাটাসে সারজিস আরও লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি- শুধু সেনাবাহিনী কেন পুরো পৃথিবী একসাথে চেষ্টা করলেও আমাকে কিছু দিতে পারবে না, যদি আমার আল্লাহ না চায়। আবার পুরো পৃথিবী একসাথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেও আমার কোন প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারবে না, যদি আমার আল্লাহ আমাকে সেটা দিতে চায়। আমি তাকদীরে বিশ্বাসী। আজকে থেকে এক বছর আগেও আমি ভাবিনি যে আমি রাজনীতি করবো। কিন্তু আমার তাকদীর আমাকে রাজনীতির এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। আমার শুধু কাজ হচ্ছে সততার সাথে আমার উপর অর্পিত দায়িত্বটুকু পালন করা।’
যা কিছু মানুষ দেখে এবং শোনে তার সবকিছু সত্য নয় বরং যা কিছু দেখানো হয় তার অনেক কিছুই স্ক্রিপ্টেড, অভিনয়ের অংশ এবং এজেন্ডাভিত্তিক- এমন মন্তব্য করে সারজিস বলেন, ‘অনেক কিছুই অনুমান নির্ভর এবং সন্দেহবাতিকের বহিঃপ্রকাশ। এবং মানুষ সেটা খায়ও! আমি শুধু আমার বিবেকবোধের জায়গায় এবং নিজের কাছে স্বচ্ছ থাকতে চাই আর কোনো কিছু আমার প্রয়োজন নেই।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘এই জায়গাটাতে আমি আপোস করিনি বলেই ২৪ এর অভ্যুত্থানের প্রথম দিন থেকে রাজপথের সামনের সারিতে ছিলাম। অনেকে অনেক ঘটনা নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু প্রত্যেকটা ঘটনার ব্যক্তি, স্থান, কাল ভেদে ভিন্ন পার্সপেক্টিভ থাকতে পারে। ব্যাখ্যা যেটাই হোক না কেন সত্য এটাই যে, এই আন্দোলন সফল না হলে আমার ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, ক্যারিয়ার সবকিছুই অনিশ্চিত কালের গহ্বরে হারিয়ে যেত। কিন্তু এত কিছুর পরও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পিছু হটিনি, বিবেকের সাথে আপোস করিনি।’
স্ট্যাটাসের শেষ অংশে তিনি লেখেন, ‘আপনাদের সবার আলাদা ব্যক্তিত্ব আছে, স্বতন্ত্রতা আছে। আমি কারো মতো হতে চাই না। অনুগ্রহ করে আপনাদের মতো করে আমাকে প্রত্যাশা করবেন না। আপনার ভালোটাকে আমি ভালো বলতে চাই এবং খারাপটাকে নির্দ্বিধায় খারাপ বলতে চাই। আমি ভুল হতে পারি, প্রয়োজনের সংশোধন করতে পারি কিন্তু কারো মতো করে আমি চলব, এটা হবে না। ইনশাআল্লাহ, দেখা হবে বিজয়ে।’
ভিওডি বাংলা/ এমপি
লুৎফুজ্জামান বাবর মজলুমদের জীবন্ত প্রতীক: শিশির মনির
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে হেয় করে জাতীয় নাগরিক পার্টির …

বিসিএস ভাইভা বোর্ডে জাহেদ উর রহমানের সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন যুবশক্তি নেতা
বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বিসিএস-এর ভাইভা বোর্ডে একজন সক্রিয় …

কাঁদলেন উমামা, বললেন– জুলাই কেন মানি মেশিন হবে?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ও সমন্বয়ক উমামা …
